• " />

     

    দুই হাতেই বল করতে পারেন জান!

    দুই হাতেই বল করতে পারেন জান!    

    ওয়াসিম, ওয়াকার মতো সুইং সুলতানদের পেয়েছে পাকিস্তান। শোয়েবের মতো গতির ঝড় তোলা বোলারও পেয়েছে। কিন্তু ইয়াসির জানের মতো বোলার আর পেয়েছে কি না সন্দেহ।  ২১ বছর বয়সী ইয়াসির বল করতে পারেন দুই হাতেই! শুধু তাই নয়, দুই ক্ষেত্রেই সমান গতিও তুলতে পারেন!

    এই বিস্ময় তরুণের বাড়ি চারসাদ্দা শহরে। পেশাওয়ার শহর থেকে ২৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই ছোট্ট শহর থেকে ১২ বছর বয়সে পাড়ি জমান ইসলামাবাদে। এখানে ভাইদের সাথে সবজির দোকানে কাজ করতেন তিনি। অন্য দশটা ছেলের মতো নিতান্তই শখের বসেই ক্রিকেট খেলতেন। তবে ভাগ্যের চাকা ঘুরে গেল একটি মাত্র ঘটনায়। পুরো পাঞ্জাব অঞ্চল থেকে আসা বোলারদের নিয়ে রাওালপিন্ডিতে পাকিস্তান সুপার লিগের ‘লাহোর কালান্দার’ দলের ট্যালেন্ট হান্টের মাধ্যমে সবার নজরে আসেন এই তরুণ। দলের প্রধান কোচ আকিব জাভেদের মতে, ডান হাতে ঘণ্টায় প্রায় ১৪৫ কিলোমিটার এবং বাঁ হাতে ১৩৫  কিলোমিটার গতি তুলতে পারেন ইয়াসির।

    ইয়াসিরে মুগ্ধ সাবেক এই পাকিস্তানি কিংবদন্তি বোলার, “ সে প্রথমে ডান হাতে বল করছিল। এরপর সে আমাকে বলল, সে বাঁ হাতেও বোলিং পারে! ব্যাপারটি তখনই আমার নজরে আসে।” লাহোরের এক সাংবাদিক সম্মেলনে নিজের বিস্ময়ের কথাও বলেন, “ আমি আসলেই বিস্মিত হয়েছি। কারণ এর আগে কখনোই এরকম দেখিনি। আমি ক্রিকেটারদের দুই হাতে থ্রো করতে দেখেছি, দুই হাতে স্পিনও করতে দেখেছি। কিন্তু এটা অসাধারণ একটা ব্যাপার।”

    জাভেদের এই অন্যরকম প্রতিভা খুঁজে পাওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম নয়। ২০০৮ সালে ৭ ফুট উচ্চতার বাঁহাতি পেস বোলার মোহাম্মদ ইরফান তাঁর নজরে আসেন। ওই সময় ইরফান একটি প্লাস্টিক পাইপ কারখানাতে কাজ করতেন, তাঁর মাসিক আয় ছিল মাত্র ৭৬ ডলার। কাজের পাশাপাশি গাজ্ঞু মান্দি শহরে ক্লাব ক্রিকেটও খেলতেন। আকিবের নজরে আসার ২ বছরের মাথায় জাতীয় দলে সুযোগ পান ইরফান।

    ইয়াসিরকে এখনো অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে বলে মনে করেন আকিব, “ সে এখনো অপরিপক্ক। আরও এক বছর পর সে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলার জন্য তৈরি হবে। ফাস্ট বোলিং প্রকৃতিগত ব্যাপার নয়, কারণ এখানে আপনাকে হাত ঘুরাতে হয় এবং পেশী দিয়ে গতি সৃষ্টি করতে হয়। তাই তাঁর দুর্বল হাত দিয়েও একই রকমের গতি উঠানো সত্যি অবাক করার মতো ব্যাপার। আমার মনে হয় না পৃথিবীর আর কেউ এরকম করতে পারে। কিছু বছর আগে আমরা যেমন মোহাম্মদ ইরফানকে খুঁজে পেয়েছিলাম, এবার আমরা আরও বেশি প্রতিভাবান বোলার খুঁজে পেয়েছি।”

    লাহোর কালান্দারের সাথে ইয়াসিরের ১০ বছরের চুক্তি হয়েছে। এটি তাঁকে সাফল্য পেতে সহায়তা করবে বলেই আশা করছেন আকিব, “ আমরা তরুণ প্রতিভাদের অনুপ্রেরণা দিতে চাই, তাদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের জন্য প্রস্তুত করতে চাই। আমরা তাঁর সাথে ১০ বছরের চুক্তি করেছি যেন তাঁর সব দায়িত্ব আমরা নিতে পারি এবং তাঁকে যেন নিজের ভবিষ্যতের ব্যাপারে চিন্তা করতে না হয়। আশা করি সে পরিশ্রম করবে এবং আমরা পাকিস্তানকে ভবিষ্যতে দারুণ একজন তারকা উপহার দিতে পারবো।”


    যাকে নিয়ে এত আলোচনা সেই ইয়াসির এই ঘটনায় মহা খুশি, “ এরকম সুযোগ পাওয়াটা আমার জন্য স্মরণীয় একটা মুহূর্ত। আমি সবজির দোকান চালাতাম এবং অবসর সময়ে ক্রিকেট খেলতাম। আমি আকিব ভাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, আমি প্রতিজ্ঞা করছি আমি মনোযোগী হব এবং কঠিন পরিশ্রম করে সবাইকে গর্বিত করব। পাকিস্তানের হয়ে খেলা প্রতিটা বাচ্চার স্বপ্ন, আমিও নিজেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে দেখতে চাই সামনের দিনগুলোতে।”