• আইসিসি বিশ্বকাপ ২০১৫
  • " />

     

    একটা বাধা পেরুলেই...

    একটা বাধা পেরুলেই...    

    কড়া নাড়ছে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। সপ্তাহ দুয়েকও আর বাকি নেই। বিশ্বকাপের মতো আসরে বাংলাদেশ মানে এখনও কেবল ক্রিকেটই! দুনিয়াকে লাল-সবুজের শক্তির জায়গা জানান দেয়ার সুযোগটা যে এখানেই! দেশের অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির মাঝেও তাই বিশ্বকাপ জ্বরের উত্তাপটা বেশ ভালোভাবেই টের পাওয়া যাচ্ছে। বিশ্বকাপ শুরুর ১০০ দিন আগে থেকে প্যাভিলিয়নের ক্ষণগণনায় পাঠকদেরকে মনে করিয়ে দেয়া হচ্ছে বিগত সব আসরের রোমন্থনীয় স্মৃতিগুলো। ব্যাটবলের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই মাঠে গড়ানোর প্রাক্কালে অংশগ্রহণকারী দলসমূহ নিয়ে  চলছে আমাদের বিশেষ আরেকটি ধারাবাহিক আয়োজন। আজ থাকছে দক্ষিণ আফ্রিকার কথা।

     

     

    গত ছয়টি বিশ্বকাপের চিত্র রোমন্থন করলে দেখা যাবে হতাশা প্রকাশকারী প্রায় প্রতিটি শব্দই যেন জড়াজড়ি করে আছে আফ্রিকার এই দেশটির সঙ্গে। ১৯৯২ বিশ্বকাপে বৃষ্টির সেই নির্মম রসিকতা, ৯৬-এর আসরে ব্রায়ান লারার অতিমানবীয় ইনিংস, ৯৯-এর সেমিফাইনালে ল্যান্স ক্লুসনারের পাগুলে দৌড়- প্রোটিয়াদের কাছে বিশ্বকাপ মানে শুধুই হাহাকার। “চোকার” শব্দটা তো তাদের সঙ্গে এমনি এমনি সেঁটে যায়নি! এবার কি কাটবে সে জুজুটা ?

     

    বিশ্বকাপ জয়ের জন্য অস্ত্রাগারে যত রকমের রসদ দরকার, তার তো প্রায় সবই আছে। ওয়ানডের এই মুহূর্তে সম্ভাব্য সেরা ব্যাটসম্যানদের দুইজনই দক্ষিণ আফ্রিকার। এবি ডি ভিলিয়ার্স কী করতে পারেন, সেটা কয়েকদিন আগেই দেখিয়েছেন খুব ভালোভাবে। ৩১ বলে সেঞ্চুরিটার জন্য আসুরিক বা অতিমানবিক শব্দগুলোও যেন কম হয়ে যায়।

     

    ডি ভিলিয়ার্সের আড়ালে অনেকটাই ঢাকা পড়ে থাকেন, নইলে হাশিম আমলার ওয়ানডে রেকর্ডটাও ঈর্ষা জাগানোর মতো। ১০০০,২০০০,৩০০০,৪০০০,৫০০০ রানের মাইলফলকের প্রতিটি যে ব্যাটসম্যান সবচেয়ে দ্রুততম সময়ে ছুঁয়েছেন, এমন খেলোয়াড়কে যে কোনো অধিনায়কই দলে পেতে চাইবেন।

     

    এই দুজনকে বাদ দিলেও দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিংটা তো সমীহ জাগানোর মতোই। ‘মিডল অর্ডার’ নিয়ে পুরনো দুশ্চিন্তাটা আপাতত নেই। গত পনেরো মাসের সময়সীমার মাঝে মিডল অর্ডারে এবি ডি ভিলিয়ার্সের চারটি ও ফ্যাফ ডু প্লেসির ব্যাট থেকে এসেছে তিনটি শতক। কয়েকদিন আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ডেভিড মিলারের ১৩০ রানের হার না মানা ইনিংসটি এসেছিল পাঁচ নম্বরে নেমে। আর ‘ওপেনিং’-এ হাশিম আমলা ও কুইন্টন ডি ককের জুটিটাকে তো অনেকে বলছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে সফলতম উদ্বোধনী জুটি। উল্লেখ্য সময়টুকুর মধ্যে আমলা আটটি ও ডি কক করেছেন পাঁচটি ‘সেঞ্চুরি’।


    ‘পেস ডিপার্টমেন্ট’-এ স্টেইন, মরকেল, ফিলান্দার ত্রয়ী বিশ্বের যেকোনো ব্যাটসম্যানের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ। এমনকি কাইল অ্যাবট, ওয়েইন পারনেলদের মত ‘রিজার্ভ’ পেসাররাও ক্ষমতা রাখেন একটা ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার। স্পিন আক্রমণে ইমরান তাহির ও অ্যারন ফাঙ্গিসোরা যুক্ত হওয়ায় এ দপ্তরেও আর আগের দুর্বলতা নেই প্রোটিয়াদের।

     

     

    তাহলে এ দলের দুর্বলতা কোথায় ? বাস্তবতা হল সামান্য হলেও দুশ্চিন্তা আছে তাদের। জ্যাক ক্যালিস উত্তর প্রোটিয়া দলে তেমন মানের কোনো অলরাউন্ডার কই ? পঞ্চম বোলারের কাজটা হয়ত ডুমিনি ও ফারহান বেহারডিয়েনকে ভাগাভাগি করে নিতে হবে। অথচ ডুমিনি তার প্রথম ১৩২টি ওয়ানডের মাত্র চারটিতে পুরো দশ ওভার বল করেছেন, বেহারডিয়েনও কতটুকু কী করতে পারবেন সেটা নিয়ে আছে সংশয়।

     

    পুরো ব্যাপারটা পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বিশ্বকাপে গড়বড় করে ফেলার পুরনো অভ্যাসটা মাথাচাড়া না দিলে শিরোপা জয়ের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে প্রোটিয়াদের।

     

    কদিন আগে তাদের কোচ রাসেল ডোমিঙ্গো বলেছিলেন যে, আত্মবিশ্বাসের দিক দিয়ে ভারত ও শ্রীলঙ্কার চেয়ে এগিয়ে থাকবে তাঁর দল। প্রশ্নটা চলে আসে এখানেই- তুলনাটা ভারত ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে কেন, সাম্প্রতিক সময়টা খুবই বাজে কাটছে যে দুটো দলের? তবে কি দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ স্নায়ুচাপে ভুগছেন? বিশ্বকাপ এগিয়ে আসার সাথে সাথে কি চোকপ্রবণতাটাও জেঁকে বসছে একটু একটু করে? এ মুহূর্তে নিশ্চিত হওয়ার কোন উপায় যেহেতু নেই, জানতে হলে বিশ্বকাপের ম্যাচগুলোর উপরই চোখ রাখতে হবে আপনাকে।