একটি ইনিংস ও বিমূঢ় প্রোটিয়া শিবির
ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের ছোট্ট দেশ গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে চলছে একটি ক্রিকেট ম্যাচ, যেখানে ফিল্ডিং করছে আপাতত দক্ষিণ আফ্রিকা। লক্ষণীয় বিষয় যেটা- শন পোলক, জ্যাক ক্যালিস সমৃদ্ধ প্রোটিয়া বোলিং আক্রমণকে বেধড়ক পেটাচ্ছেন ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতার এক বাংলাদেশী তরুণ। দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য ব্যাপারটা একটু বিস্ময়দায়কই বটে। এর কারণ ওয়ানডেতে পূর্বের সাতবারের সাক্ষাতে লড়াই তো দূর অস্ত, লড়াইয়ের বিন্দুমাত্র আঁচও জাগাতে পারেনি বাংলাদেশীরা।
ঘটনাটা বছর আটেক আগের, ২০০৭ বিশ্বকাপের সময়কার। ভারতকে হারিয়ে সুপার এইটে যাবার কথাটা মনে আছে নিশ্চয়ই? আরাধ্য সুপার এইটে উঠেই দু’দুটো লজ্জাজনক হার এলো অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সাথে। দক্ষিণ আফ্রিকার সাথে ঐ ম্যাচটার প্রথম এক তৃতীয়াংশও যেন শেষ দুটো ম্যাচের ছক ধরেই এগুচ্ছিল। ২৪তম ওভারে গিয়ে ৮৪ রানেই চার উইকেট গায়েব। ছক বদলের দায়িত্ব নিলেন স্বল্প উচ্চতার ২২ বছর বয়সী সেই তরুণ, হাঁটতে শেখার সময়টায় কালেভদ্রে আসা টাইগারদের বেশিরভাগ জয়ের পেছনে যার নামটা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। হ্যাঁ, মোহাম্মদ আশরাফুলের কথাই বলা হচ্ছে এখানে।
৮৪ রানে সাকিবের বিদায়ের পর আফতাবকে নিয়ে ইনিংস মেরামতের কাজটা করার সময় খেলেছেন দেখেশুনেই। প্রথম ২৬ বলে মাত্র ১২ রান এসেছিল তাঁর ব্যাট থেকে। তবে একটু থিতু হয়েই প্রোটিয়া পেসারদের উপর আক্রমণ শুরু করেন তিনি, ৩০তম ওভারে জ্যাক ক্যালিসকে মারা পরপর দুটো চারের মাধ্যমে যেটার শুরু। বড় ঝড় অবশ্য গেছে কার্ল ল্যাঙ্গেভেল্ট ও মাখাইয়া এনটিনির উপর দিয়ে। এঁদের দুজনের ৩৩ বল থেকে ৪৮ রান নিয়েছেন ‘অ্যাশ’। বরাবরের মত সেদিনও উইকেটের প্রায় সবদিক দিয়েই শট খেলেছেন, তবে চোখ ধাধিয়ে দিয়েছেন ফাইন লেগ দিয়ে মারা চমৎকার তিনটি ‘প্যাডল স্কুপ’-এর মাধ্যমে।
প্রিয় শট ‘প্যাডল স্কুপ’-ই শেষমেশ ইনিংসের ইতি ঘটায় তাঁর, তবে সেটা বাংলাদেশের ইনিংসের একেবারে শেষ ওভারে। ততক্ষণে অবশ্য আড়াইশ হয়ে গেছে প্রায়, স্পিনারদের বন্ধুভাবাপন্ন ধীর উইকেটে যেটা বড় রকমের চোখ রাঙ্গানিই ছিল স্পিনে দুর্বল প্রোটিয়াদের জন্য। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই যারা অনুমান করেছিলেন, তাঁদের জন্য অপেক্ষা করছিল বিস্ময়। কোন রকম প্রতিযোগিতার আঁচ ছাড়াই ম্যাচটা সেদিন জিতেছিল টাইগাররা। ছবি-সৌজন্যঃএএফপি