শরণার্থী শিবির থেকে বুন্দেসলিগায়
২০১৪ সালে যেদিন শরনার্থীর খাতায় নাম লিখিয়ে জার্মানির উদ্দেশ্যে দেশ ছেড়েছিলেন, ১৭ বছরের তরুণ কি দূরতম কল্পনাতেও এমন দিন দেখতে পেয়েছিলেন? বুন্দেসলিগার মতো টুর্নামেন্ট গ্যালারিতে বসে দেখাটাই হয়তো স্বপ্নের অতীত ছিল যার জন্য, সেই তিনি কিনা বুটজোড়া পায়ে গলিয়ে খেলতেই নেমে পড়েছেন সে আয়োজনে! চমকের শেষ কি এখানেই! চতুর্থবার মাঠে নেমেই বেয়ার লেভারকুসেনের মতো প্রতিপক্ষের জালে জড়িয়েছেন বল, দলের সাথে মাঠ ছেড়েছেন ২-১ গোলের জয় নিয়ে! ভের্ডার ব্রেমেনের স্ট্রাইকার উসমান মান্নেহের যেন এখনও বিশ্বাস হতে চাইছে না এসবের কিছুই।
পশ্চিম আফ্রিকার স্বৈরশাসিত দেশ জাম্বিয়ার দারিদ্র্যে জর্জরিত অবস্থাটা ক্রমেই শোচনীয় হচ্ছিল। বোধ হওয়ার পর থেকেই উসমান দেখে আসছেন এ পরিস্থিতি। ফুটবলটা ভালো খেলতেন ছোটবেলা থেকেই, তবে ও দেশে যে ওটার কোনো ভবিষ্যৎ নেই বুঝতে পারছিলেন সেটাও। সে উপলব্ধি থেকেই ১৭ বছরের তরুণ সিদ্ধান্ত নেন দেশ ছাড়ার। পরিবার-পরিজন পিছনে ফেলে পাড়ি দেন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পানে। শেষতক শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় মেলে জার্মানির ব্রেমেনে।
উসমানের জীবনের গল্পটা নতুন করে লেখার শুরু এর ক’দিন বাদেই। ট্রায়ালে যোগ দেন স্থানীয় ক্লাব ব্লুম্যান্থলারে। ক্লাবটির যুব দলের হয়ে ১১ ম্যাচে ১৫ গোল করে নজর কাড়েন বড় ক্লাবগুলোর। গত বছর তাঁকে রিজার্ভ দলের অংশ করে নেয় বুন্দেসলিগার ক্লাব ভের্ডার ব্রেমেন। বাকিটা নতুন এক ইতিহাসের শুরু মাত্র। চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত মাত্র চারবার মূল দলের হয়ে মাঠে নামার সুযোগ পেয়েছেন। সামর্থ্যের জানান দেয়ার জন্য এটুকুই যথেষ্ট প্রমাণ করে লেভারকুসেনের বিপক্ষ গত ম্যাচের ৫৯ মিনিটে বল জড়ান জালে।
তবে সবকিছুই এখনও স্বপ্নের মতো লাগছে জাম্বিয়ান তরুণের কাছে, “আসলে বিশ্বাসই করতে পারছি না এখনও। এটা কি সত্যি না আমি স্বপ্ন দেখছি? অনুভূতিটা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। জীবনের সেরা সময় তো বটেই...।”
উসমান গর্বিত প্রথম জাম্বিয়ান হিসেবে বুন্দেসলিগায় খেলার সুযোগ পেয়ে, আরও গর্বিত প্রথম জাম্বিয়ান হিসেবে টুর্নামেন্টটিতে গোলও করে। শেষটা দেখার আগে নিশ্চিতভাবেই যেতে চান আরও বহুদূর।