• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে মরিনহোর লজ্জা

    স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে মরিনহোর লজ্জা    

    স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে চেলসি-ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ম্যাচের বাকি আর তখন আট মিনিট। মাঝমাঠে পুরো নিয়ন্ত্রণ ঘরের দলের। স্টেডিয়ামের চল্লিশ হাজারের ওপর দর্শকের মুখের 'ওলে, ওলে' রব, ড্রামের শব্দের মতো বাজছে তখন। কান্তে-ম্যাটিচদের প্রতিটি পাস উদযাপন করছেন তাঁরা। মরিনহোর বুকে হয়ত শেল হয়েই বিঁধছিল ওয়েস্ট লন্ডন সমর্থকদের ওই উদযাপন। তবে নিজেকে ছাড়া আর দুষবেনই বা কাকে? তার দল তো ততোক্ষণে হজম করে ফেলেছে চার গোল! কন্তের অধীনের 'নতুন' চেলসি হেসেখেলে মরিনহোর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে হারিয়ে দিয়েছে ৪-০ গোলে।

    প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে হারের লজ্জাটা মরিনহো পেলেন নিজের সাবেক দলের বিপক্ষেই। ম্যাচ শেষে আন্তোনিও কন্তের সাথে হাত মেলাবার সময় নিজের পরাজয়টা মেনে নিয়ে হয়ত শুভেচ্ছাই জানাচ্ছিলেন মরিনহো। এমন হারের পর প্রতিপক্ষের শ্রেষ্টত্ব মেনে না নিয়ে আর কিইবা উপায় থাকে!



    ম্যাচের আগে সবটুকু আলোই ছিল মরিনহোর ওপর। কিন্তু মাঠের খেলা শুরু হতেই মরিনহোর সাবেক শিষ্যরা কিন্তু একটুও ছাড় দেননি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে। খেলা শুরুর মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মাথায় পেদ্রো রদ্রিগেজ গোল করে চেলসিকে এগিয়ে দেন ম্যাচে। এবারের মৌসুমে এটিই প্রিমিয়ার লিগে সবচেয়ে কম সময়ে গোল।

    মার্কোস আলোন্সর বাড়ানো থ্রু বল দৌড়ে ধরেন পেদ্রো। স্প্যানিশ উইঙ্গারকে বাধা দিতে এগিয়ে আসেন ডি গিয়া। ডি বক্স ছেড়েই বেরিয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু লাভ হয়নি। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের দুই ডিফেন্ডার স্মলিং আর ব্লিন্ডের পর ডি গিয়াকেও ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়ান পেদ্রো রদ্রিগেজ। অথচ এই পেদ্রোকেই গত মৌসুমে চেলসিতে নিয়ে এসেছিলেন মরিনহো!

    ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোনো খেলোয়াড়ের পায়ে বল লাগার আগেই ম্যাচে পিছিয়ে পড়ে এক অর্থে টালমাটাল হয়ে যায় মরিনহোর সব ট্যাকটিকস। শুরু থেকেই তাই ছিল চেলসির আধিপত্য। আর তাতে ভর করে বড় জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে ওয়েস্ট লন্ডনের দলটি।



    এরপর ২১ মিনিটে আবারও এগিয়ে যায় চেলসি। এবার কর্নার থেকে গোল করেন ক্যাহিল। চেলসির দ্বিতীয় গোলের আগে অবশ্য কর্নার থেকেই একটা সুযোগ এসেছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কাছে। তবে ইব্রাহিমোভিচের হেড চলে যায় বার পোস্টের বাইরে দিয়ে।

    ২-০ গোলে শেষ হওয়া প্রথমার্ধ পুরোটাই ছিল চেলসিময়! ইনজুরির কারনে রুনি না থাকায় আর অন্য কোন উপায়ও খোলা ছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কাছে। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই তাই ম্যাচে ফেরার আশায় ফেলানিকে উঠিয়ে মরিনহো নামিয়ে দেন মাতাকে। এর ছয় মিনিট পর ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়েন ইউনাইটেড ডিফেন্ডার এরিক বেইলি।

    চেলসির প্রথম দুই গোলেই ছিল স্মলিং-ব্লিন্ডের সমণ্বয়হীনতা। এবার বেইলির জায়গায় রোহো নেমেও সেই ভঙ্গুর ডিফেন্সের তেমন কোনো উন্নতিই করতে পারেননি। উল্টো ৬২ মিনিটে হ্যাজার্ড গোল করে চেলসির লিড নিয়ে যান তিন গোলে। মাঝমাঠ থেকে ম্যাটিচের দেয়া পাস খুঁজে পায় হ্যাজার্ডকে। বেলজিয়ান উইঙ্গার বল নিয়ে ডি বক্সের ভেতর থেকে দূরের পোস্ট বরাবর কিক নেন। ডেভিড ডি গিয়া ঝাঁপিয়ে পড়লেও আরও একটি গোল হজম করা থেকে বাঁচাতে পারেননি নিজের দলকে।

    ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কফিনে শেষ পেরেকটি ঠোকেন লেস্টার সিটি থেকে এই মৌসুমে চেলসিতে যোগ দেয়া কান্তে। ৭০ মিনিটে ম্যাচের ব্যবধান ৪-০ নিয়ে যাওয়া গোলটি কান্তের নতুন ক্লাবের হয়ে প্রথম গোল।  ম্যাচের শেষ দিকে ইব্রাহিমোভিচ, রোহো দু'একটি গোলের সুযোগ তৈরি করলেও চেলসি গোলরক্ষক কর্তোয়ার দৃঢ়তা ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে আরও একটি ম্যাচ গোলশুন্য রাখে। 



    এই হারের পর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ১৪ পয়েন্ট নিয়ে আছে তালিকার সাত নম্বরে। প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসে প্রথম নয় ম্যাচের হিসেবে এর চেয়ে বাজে শুরু করেছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড মাত্র একবারই। নয় ম্যাচ খেলে ২০১৪/১৫ মৌসুমে পেয়েছিল ১৩ পয়েন্ট। অন্যদিকে এই ম্যাচে জিতে সুবিধাজনক স্থানে চলে গিয়েছে চেলসি। ১৯ পয়েন্ট নিয়ে আছে চতুর্থ স্থানে। শীর্ষে থাকা ম্যানচেস্টার সিটির পয়েন্ট ২০।