• বুন্দেসলিগা
  • " />

     

    জার্মানির সবচেয়ে ঘৃণিত ক্লাব!

    জার্মানির সবচেয়ে ঘৃণিত ক্লাব!    

    ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬। লিগে ডর্টমুন্ডের প্রথম অ্যাওয়ে ম্যাচ, প্রতিপক্ষ সদ্য প্রমোশন পাওয়া আর বি লাইপজিগের। দলের জন্য অন্ত:প্রাণ ডর্টমুন্ড সমর্থকেরা মাইলের পর মাইল পাড়ি দিয়ে খেলা দেখতে গেলেও রেড বুল অ্যারেনাতে যাননি একজনও! এমনকি প্রতি ম্যাচের আগে দু দলের মিলিত স্কার্ফও বানাতে দেয়নি ডর্টমুন্ড। কিন্তু লাইপজিগের প্রতি এমন রোষের কারণ কী?

    কারণটা ডর্টমুন্ড সমর্থক ইয়ান-হেনরিক গ্রুচেস্কির মুখেই শুনুন, "ডর্টমুন্ডও টাকা আয় করে, কিন্তু সেটা ক্লাব চালানোর জন্য, ফুটবল খেলার জন্য। কিন্তু লাইপজিগ খেলে একটি পণ্য ও জীবনযাপনের ধারার কাটতি বাড়াতে। পার্থক্যটা এখানেই"। লাইপজিগের বিপক্ষে এটাই প্রথম প্রতিবাদ না। গত মৌসুমে দ্বিতীয় বিভাগের ক্লাব ইউনিয়ন বার্লিনও ম্যাচের ১৫ মিনিট নীরব প্রতিবাদ জানিয়েছিল। এই মৌসুমেই জার্মান কাপে তাদের খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্য করে ষাঁড়ের মাথা ছুঁড়ে মেরেছিল ডায়নামো ড্রেসডেনের সমর্থকেরা।

    মাত্র ৭ বছরে পঞ্চম বিভাগ থেকে বুন্দেসলিগায় উঠে এসেছে লাইপজিগ, লিগে অবস্থান দ্বিতীয়। লেস্টারের মতো গল্পের পরও প্রশ্ন জাগতেই পারে, আচ্ছা লেস্টার এত বাহবা পেলে তাদের মুণ্ডুপাত করা হচ্ছে কেন? মজার ব্যাপার হল, ক্লাবটির নামকরণই হয়েছে মাত্র বছর সাতেক আগে। লাইপজিগ শহরের ক্লাব এসভিভি মার্কান্সডাটের খেলার লাইসেন্স কিনে নেয় এনার্জি ড্রিংক কম্পানি রেড বুল। একে একে ক্লাবের নাম, ক্রেস্ট থেকে শুরু করে বদলে যায় ক্লাবের মাঠও। জেন্ট্রালস্তাদিওনের নাম বদলে রাখা হয় রেড বুল অ্যারেনা। আসন সংখ্যা বাড়িয়ে করা হয় প্রায় ৪৫ হাজার, যা আগের অ্যানফিল্ডের সমান! বাহ্যিক আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে লাইসেন্সের জন্য অ্যাপ্লাই করে রেড বুল। কিন্তু নামে স্পন্সরের নাম থাকায় আবেদন নাকচ করে দেয় জার্মান ফেডারেশন। নাম বদলে রাখা হয় রাসেনবল স্পোর্ট লাইপজিগ।

     

     

    জার্মান ফুটবলের অন্যতম আলোচিত, সমালোচিত নিয়ম হল '৫০+১' নিয়মটি। এই নিয়ম অনুসারে প্রত্যেক ক্লাবের সদস্যদের হাতে ক্লাবের ৫০ শতাংশ অধিকার থাকবে। বাকি ১ শতাংশ স্পন্সরদের জন্য। কিন্তু ক্লাবের সাথে দুই যুগ বা তার বেশি সম্পৃক্ততা থাকলেই ঐ ১ শতাংশের মালিকানা পাবেন স্পন্সররা। বুন্দেসলিগায় ঐ ১ শতাংশ পেয়েছেন কেবল লেভারকুসেন (বায়ার) ও উলফসবার্গের (ভক্সওয়াগন) স্পন্সররা। কিন্তু এই নিয়মকে থোড়াই কেয়ার করেছে লাইপজিগের স্পন্সর রেড বুল। শালকে, ডর্টমুন্ডের ক্লাব সদস্য যেখানে প্রায় দেড় লাখ; সেখানে তাদের কেবল ১৭ জন! ফেডারেশনের হুমকির মুখে এখন ক্লাব সদস্য বেড়ে হয়েছে ৩০০, যার ৯৫ শতাংশই আবার রেড বুল কর্মচারীরা! আবার ডর্টমুন্ডের সদস্য হতে বার্ষিক খরচ যেখানে ৬২ ইউরো, তাদের সেখানে ১০০০! এই অতিরিক্ত অর্থলোভই লাইপজিগকে বানিয়েছে সমর্থকদের চক্ষুশূল। তাদের সমর্থকদের তো 'প্লাস্টিক' বলতেও পিছপা হননি ডর্টমুন্ড সমর্থক আন্দ্রে রুডি।

    লাইপজিগের উত্থানে কপাল পুড়েছে রেড বুলের আরেক ক্লাব সালজবার্গের। অস্ট্রিয়ার এক সময়ের সেরা দলটি শেষ নয় মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে কোয়ালিফাই করতে পারেনি একবারও। এই সালজবার্গ থেকেই গত দলবদলে তিনজনকে দলে ভিড়িয়েছিল লাইপজিগ। এই ক্লাবের দিকে আকর্ষণটা একটু বেশিই রেড বুলের হর্তা-কর্তাদের। এর ভুক্তভোগীও সেই সালজবার্গই। স্পন্সরদের থেকে প্রত্যাশিত অর্থ না পাওয়ায় তেমন কাউকে দলেও ভেড়াতে পারেনি অস্ট্রিয়ার ক্লাবটি। লিগে নেমে গেছে তৃতীয় স্থানে। স্পন্সরদের আচরণে অবাক সালজবার্গ সমর্থকেরা খোলা চিঠি লিখেছেন রেড বুলকে উদ্দেশ্য করে। জানিয়েছেন, কিভাবে ইউরোপের অন্যতম প্রতিষ্ঠিত ক্লাবটি আজ বনে গেছে হাসির-ঠাট্টার পাত্রে. ক্লাব ফুটবলে লাইপজিগ, লেস্টারদের মত উত্থান একেবারে কমও নয়। এদের কেউ কেউ টিকে থাকে, কেউ হারিয়ে যায় কালের অতল গর্ভে। লাইপজিগের এমন উত্থান ঠিক কতদিন টেকে, তা-ই দেখার বিষয়।