বড় ম্যাচের টুকিটাকি
বিশ্বকাপের দ্বিতীয় দিনেই হয়ে গেলো ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম আরাধ্য একটি ম্যাচ। উপমহাদেশীয় দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর সে দ্বৈরথে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭৬ রানের অনেকটা অনায়াস জয়ই পেয়েছে ভারত। যতোটা উত্তেজন বা প্রাণচাঞ্চল্য প্রত্যাশিত ছিল ততোটা ঠিক মেলে নি। তারপরও ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ কেবল নামের ওজনেই আলাদা গুরুত্ব বহন করে। সে বিবেচনা থেকেই অ্যাডিলেড ওভালের আজকের লড়াইটির কিছু চুম্বক অংশ প্যাভিলিয়নের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।
কোহলির ছন্দে ফেরা
এ ম্যাচের আগে টিম ইন্ডিয়ার এই মুহূর্তের পোস্টার বয়টির শেষ ক’টি একদিনের ইনিংস ছিল যথাক্রমে ৫, ১৮, ৮, ৩*, ৪ ও ৯ রানের। চলতি অস্ট্রেলিয়া সফরে টেস্টগুলোতে ধারাবাহিক পারফর্ম করে গেলেও সীমিত ওভারের ম্যাচে কোহলির ব্যাট ঠিক কথা বলছিল না। ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য পাকিস্তানের চেয়ে উত্তম প্রতিপক্ষ আর কি হতে পারতো? ১২৬ বলে ১০৭ রানের একটি সময়োপযোগী ইনিংস খেলে দলের জয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেন। ফিল্ডার হিসেবেও নেন আফ্রিদির একটি চমৎকার ক্যাচ।
পাকিস্তানের প্রাপ্তির নাম সোহেল খান
প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচটা সেই ২০০৮ সালে খেললেও আজকের ম্যাচটি সোহেল খানের জন্য মাত্র ষষ্ঠ! সংক্ষিপ্ত আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে শেষ একদিনের ম্যাচটি খেলেছিলেন ২০১১ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। জুনাইদ খান, উমর গুলদের দলে পেসার হিসেবে স্থান করে নেয়াটাও তো খুব সহজ নয়। দলের পেস আক্রমণের দুই পুরোধার অনুপস্থিততে পাওয়া সুযোগটুকু কাজে লাগাতে ভুল করলেন না সোহেল। ব্যক্তিগত শেষ ওভারে পরপর দু’ বলে দুটি উইকেটসহ পুরো ম্যাচে ১০ ওভার বল করে নিয়েছেন মোট পাঁচটি উইকেট, ৫৫ রানের বিনিময়ে। বলা বাহুল্য যে এটা তাঁর ক্যারিয়ার সেরাই। সে সাথে পেস আক্রমণ নিয়ে পাকিস্তান টিম ম্যানেজমেন্টের চিন্তা হয়তো কিছুটা হলেও লাঘব করতে সক্ষম হয়েছেন।
ইরফানকে মোকাবেলার প্রস্তুতি
আজকের ম্যাচের আগে ভারতীয় অনুশীলনের একটি মুহূর্তে দেখা যাচ্ছিল নেটে ব্যাট হাতে ঘাম ঝরাচ্ছেন বিরাট কোহলি। তাঁর উদ্দেশ্যে একের পর এক বল ছুঁড়ে যাচ্ছেন অধিনায়ক ধোনি। মজার বিষয়টা হচ্ছে ধোনি বলটা ছুঁড়ছিলেন দুটো বেঞ্চের উপর দিয়ে এসে! ৭ ফুট ১ ইঞ্চি উচ্চতার ইরফান খানকে বলা হয়ে থাকে এ যাবতকালের সবচেয়ে লম্বা ক্রিকেটার! এমন একজনকে মোকাবেলার প্রস্তুতিতে এ ছাড়া আর উপায় কি বলুন? আজকের জন্য অন্তত ভারতীয়দেরকে সফল বলতেই হবে! ১০ ওভার বল করে ইরফান দিয়েচেন ৫৮ রান, বিনিময়ে কোন উইকেট নিতে পারেন নি।
হারিসের দুর্ভাগ্য, হয়তো পাকিস্তানেরও
অশ্বিনের ওই ওভারটায় (১৮তম) প্রথম পাঁচটা বল থেকে কোন রানই নিতে পারেন নি হারিস সোহেল। ওভারের শেষ বলটা মিডল আর লেগ ষ্ট্যাম্পের মাঝ বরাবর পড়ে অফে তড়িৎ বাঁক খাওয়ার মুখে বাঁহাতি হারিস ব্যাটটা চালালেন অপ্রস্তুতের মতোই; আড়ষ্ট ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বল জমা হল স্লিপে দাঁড়ানো সুরেশ রায়নার হাতে। মসৃণ গতিতে এগুতে থাকা পাকিস্তানের ইনিংস বড় একটা হোঁচট খায় সেখানেই।
মোড় ঘুরিয়ে দেয়া যাদবের এক ওভার
২৩ ওভারে ২ উইকেটে ১০২। ৩০০ রান তাড়া করতে নেমে এক পর্যায়ে পাকিস্তানের এমন স্কোরও মন্দ ছিল না। শেষবেলায় দারুণ একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতার আশায় যারা টিভি পর্দার সামনে জেঁকে বসতে শুরু করেছিলেন তাঁদের হয়তো হতাশই হতে হল। ২৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে উমেশ যাদবের অনেকটা বাইরের শর্ট ডেলিভারি আহমেদ শেহজাদের ব্যাট ছুঁয়ে মোড় নেয় জাদেজার দিকে। প্রথম প্রচেষ্টায় ফসকে যেতে বসা বলটা শেষপর্যন্ত শুয়ে পড়ে তালুবন্দী করেন জাদেজা। আসলে বন্দী করে ফেলেন পাকিস্তানের ব্যাটিংটাকেই।
এক বল বাদেই স্লিপে ফাঁকা গ্যাপ রেখে ‘নার্ভাস’ শোয়েব মাকসুদ বল পাঠাতে চাইলেন সুরেশ রায়নার মাথার উপর দিয়ে। দু’হাতে সেটা মুঠোয় পুরতে রায়নার প্রায় কোন বেগই পেতে হয় নি। ১০২/২ থেকে ১০২/৪ হয়ে যাওয়া পাকিস্তান পরের ওভারেই হয়ে যায় ১০৩/৫!
গ্যালারির জনসমুদ্রেও জয় ভারতের
৫৩ হাজার ধারণ ক্ষমতার অ্যাডিলেড ওভালে আজকের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচটি দেখেছেন ত্রিশ হাজারেরও বেশী দর্শক। তবে ভারতীয় জার্সিতে ছেয়ে যাওয়া গ্যালারিতে পাকিস্তানের উপস্থিতি মনে হচ্ছিল নীল সমুদ্রের মাঝে ছোট ছোট সবুজ বিন্দুর মতোই! মাঠের একটি ছোটখাটো বিতণ্ডার পর বিরাট কোহলি স্রেফ দু’হাত নাড়িয়ে যেভাবে গ্যালারি জাগিয়ে দিলেন তাতে বোঝা দায় ছিল যে ম্যাচটা সুদূর দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড ওভালেই হচ্ছে না কলকাতার ইডেন গার্ডেন বা মুম্বাইয়ের ওয়াংখেরেতে!
[ছবি কৃতজ্ঞতাঃ ক্রিকইনফো, আইসিসি, ফক্স স্পোর্টস ও এনডিটিভি]