"বাংলাদেশের নিরাপত্তা আমার দেখা অন্যতম সেরা"
অস্ট্রেলিয়া আসেনি। কানাঘুষা চলছিল ইংল্যান্ডও তাদের ‘চিরশত্রুর’ পথেই হাঁটবে। গুলশান হামলার পর এই গুঞ্জন বেড়ে গিয়েছিল কয়েকগুন। ওয়ানডে দলের অধিনায়ক এউইন মরগান যখন বললেন, কাউকে আসার ব্যাপারে জোর করা হবে না, বাংলাদেশি ক্রিকেট আকাশে আবারও অশনী সংকেত। বাংলাদেশ কি তাহলে পাকিস্তানের মতো ‘ব্রাত্য’ হয়ে যাচ্ছে? মিরপুরের স্টেডিয়াম অবস্থা কি লাহোর, করাচির মতো হবে? এতশত হতাশার মাঝে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য আশার প্রদীপ নিয়ে হাজির হয়েছিলেন রেগ ডিকাসন। ইংল্যান্ডের নিরাপত্তা প্রধানের দায়িত্ব পালন করা এই মানুষটির জন্যই সব শঙ্কা দূর করে সফরে আসে ইংল্যান্ড। সফরটা ঠিকঠাক শেষ হওয়ার পর ডিকাসন রায় দিচ্ছেন, বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা তাঁর দেখা অন্যতম সেরা।
অস্ট্রেলিয়ান বংশোদ্ভুত রেগ ডিকাসন কর্মজীবনের শুরুতে ছিলেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা। মেলবোর্নের পুলিশ বিভাগে অনেকদিন চাকরি করেছেন। অবসরের পর নিরাপত্তা বিশ্লেষক হিসাবে কাজ করা শুরু করেন। গত দুই দশক ধরে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্বটা পালন করে আসছেন। কিন্তু এবারের মতো অবস্থায় তাঁকে আগে কখনো পড়তে হয়নি।
ভালোয় ভালোয় সিরিজটা শেষ হয়েছে। নাহলে এতবছরের সম্মান একেবারেই ধুলোয় মিশে যেতে পারত। সবকিছু ঠিকঠাকভাবে হওয়ায় তাই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন ডিকাসন, “সব সুন্দরমত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার এবং ক্রিকেট বোর্ডের সহায়তায় আমরা মুগ্ধ। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সময় আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখেছিলাম। ইংল্যান্ড সিরিজের সময়েও তাঁরা সেরকমটাই করতে পেরেছে।”
ইংল্যান্ড যখন বিমানবন্দরে পা রাখে, আশেপাশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল চোখে পড়ার মতো! ডিকাসনের হিসাবে ঢাকাতে প্রায় ২ হাজার পুলিশ এবং চট্টগ্রামে ১৪০০ পুলিশ তাঁদের নিরাপত্তার জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। সবাই ভেবেছিল এত নিরাপত্তা বেষ্টনীতে ক্রিকেটারদের মনঃসংযোগ বিঘ্ন হবে। কিন্তু কোনকিছুই কুকদের সমস্যার কারণ হয়নি বলেই জানানেল, “অন্যরকম একটি পরিস্থিতিতে ঢুঁকে গেলে ২-৩ দিনের মাঝেই স্বাভাবিক হয়ে যায় ব্যাপারটা। প্লেনে ওঠার সময়ে, বাসে যাওয়ার সময়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল শুরু থেকেই। কিছুদিন পরেই এটা স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল সবার কাছে।”
সিরিজের আগে ঘুরে গিয়েছিলেন ঢাকাতে। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট হয়ে ইংল্যান্ডে ফিরে দলে সবাইকে বুঝিয়েছিলেন কতটা নিরাপদ বাংলাদেশ। অ্যান্ড্রু স্ট্রাউসকে সাথে নিয়ে দলের সবার সাথেই আলাদাভাবে কথা বলেছেন। এখানকার নিরাপত্তা নিয়ে তাঁর একেবারেই দুশ্চিন্তা হয়নি বলেই জানান, “গত ২০ বছরে আমি এই কাজ করছি। বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আমি সবচেয়ে শক্তিশালী হিসাবেই বলব।”
সবাই আসলেও আসেননি মরগান, হেলস। তবে তাঁদের না আসার কারণটা সম্পূর্ণই ব্যক্তিগত বিষয় বলে জানালেন ডিকাসন, “তাঁরা প্রাপ্তবয়স্ক, নিজের সিদ্ধান্ত নিজেরা নিতে পারে। দলের সাথে বৈঠক হয়েছিল, তবে সেটা কাউকে রাজি করানোর জন্য না। নিরাপত্তার ব্যাপারগুলো বুঝানোর জন্যই বসেছিলাম তাদের সাথে।”
বাংলাদেশে তো এসেছে ইংল্যান্ড, পাকিস্তানে কী যাবে? এই প্রশ্নের জবাবটা খুব কৌশলেই দিয়েছেন ডিকাসন, “দুই দেশের পরিস্তিতিকে মিলিয়ে ফেলাটা ভুল হবে। আকাশ পাতাল তফাত দুই জায়গায়। আমরা সবসময়ই ইতিবাচক ভাবতে চাই, তবে মাঝে মাঝে আমাদের মৌলিক কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয়। শুধু বাংলাদেশ, পাকিস্তানে না, ভারতেও নিরাপত্তার শঙ্কা রয়েছে। তবে ভারতে সেটা একটু কম। আমরা সেখানে রোড ক্লিয়ারেন্স পেয়েছি, যা শুধু রাজ্যের প্রধানদের দেওয়া হয়। তাই খুব একটা সমস্যা হবে না।”