• আইসিসি বিশ্বকাপ ২০১৫
  • " />

     

    উইন্ডিজের আইরিশ লজ্জা প্রথম নয়!

    উইন্ডিজের আইরিশ লজ্জা প্রথম নয়!    

    ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আয়ারল্যান্ডের আজকের জয়টা অঘটন কিনা সে নিয়ে জোর তর্ক চলতে পারে। এ পর্যন্ত খেলা ৯১টি একদিনের আন্তর্জাতিকের মধ্যে ৪২টি জিতেও পোর্টারফিল্ডরা কেন টেস্ট মর্যাদা পাচ্ছেন না, প্রশ্ন উঠতে পারে তা নিয়েও। ২০০৭ বিশ্বকাপে প্রথম অংশগ্রহণেই পাকিস্তান, বাংলাদেশকে হারিয়ে চমকে দেয়া দলটা গত আসরে হারায় ইংল্যান্ডকে। আর এবারের যাত্রার শুরুতেই উইন্ডিজ বধ তো ক্রিকেট দুনিয়ার উদ্দেশ্যে পরিষ্কার বার্তাই, আয়ারল্যান্ডের গা থেকে ‘মিনো’ তকমা উঠিয়ে ফেলার সময় হয়ে গেছে!

     

     

    তবে কেউ যদি ভেবে থাকেন যে বাইশ গজের উইকেটে আইরিশ চমকের ইতিহাস মাত্র এ ক’ বছরেরই, তবে বড় ধরণের ভুলই করবেন। আজকের ভঙ্গুর ওয়েস্ট ইন্ডিজ নয়, ক্যারিবিয়দের সোনালি যুগেই ক্লাইভ লয়েডদের এক অবর্ণনীয় লজ্জায় ডুবিয়েছিল যুক্তরাজ্যের দেশটি। একদিনের একটি প্রীতি টেস্ট ম্যাচে সাধারণ মানের আইরিশ বোলিং আক্রমণ মাত্র ২৫ রানে গুড়িয়ে দিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুঁদে ব্যাটিং লাইন আপ!

     

     

    সময়টা ১৯৬৯ সালের মাঝামাঝি। তিন টেস্টের একটি সিরিজ খেলতে ইংল্যান্ড গিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল। সে সিরিজের ফাঁকেই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে দুটো ম্যাচের আয়োজন করা হয়। ইতোমধ্যে ইংল্যান্ডের সাথে দুই টেস্ট হেরে বসা ক্যারিবিয় দলের অনেকেই পুঁচকে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একটা জয় দিয়ে একটু হাঁফ ছেড়ে বাঁচতে চাইছিলেন।

     

     

    ২রা জুলাইয়ের সে ম্যাচের আগে রাতভর বৃষ্টিতে সিওন মিলসের উইকেট, আউটফিল্ড সবই স্যাঁতস্যাঁতে হয়ে গিয়েছিল। তারপরও একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ দেখতে গ্যালারিতে হাজির হয়েছিলেন হাজার দুয়েক দর্শক।

     

     

    অনানুষ্ঠানিক ম্যাচটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল কতোটা হালকা ভাবে নিয়েছিল সেটার প্রমাণ দিতেই বুঝি অধিনায়ক বাসিল বুচার মাঠে উপস্থিত হলেন নির্ধারিত সময়ের বেশ কিছুক্ষণ পর! টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে একবার পিচের দিকে চেয়ে দেখারও প্রয়োজন বোধ করলেন না! এমনকি দলের একাধিক নিয়মিত খেলোয়াড়কে বসিয়ে রেখে গড়া একাদশে ছিলেন ম্যানেজার ক্লাইড ওয়ালকটও!

     

     

    ক্যারিবিয় শিবিরের এমন দিবানিদ্রা কেটে যেতে অবশ্য বেশী সময় লাগলো না। জেগে জেগে এক ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন দেখা শুরু হল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাঘা বাঘা সব ব্যাটসম্যান উইকেটে যাচ্ছেন আর আসছেন। বাজে সব শট খেলে আউট হবার আগে কেউ যেন উইকেটের দিকে তাকিয়ে দেখার সুযোগটুকুও পাচ্ছিলেন না। ক্লাইভ লয়েডের মতো কিংবদন্তীও ফিরে গেলেন মাত্র ২ রান করে। চার চারজন ব্যাটসম্যান ফেরেন কোন রান না করেই। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকা শিলিংফোর্ড করেন সর্বোচ্চ ৯ রান। ২৫ রানে অল-আউট হবার আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল খেলে ২৫.৩ ওভার। শুরুর দিকে রান তোলার হার ছিল ওভারপ্রতি ১-এরও কম!

     

     

     

    আয়ারল্যান্ডের পক্ষে ডগলাস গুডউইন ৫টি ও অ্যালেক ও’রিওরডান ৪টি উইকেট লাভ করেন। বলা বাহুল্য, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো প্রথম সারির একটি আন্তর্জাতিক দলের বিপক্ষে এমন বোলিং ফিগার তাঁরা হয়তো কখনও স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেন নি।

     


     

    জবাবে ৮ উইকেটে ১২৫ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে আয়ারল্যান্ড। পুনরায় ব্যাট করতে নামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এবারেও মাত্র দু’ রানে দুই উইকেট নেই! তবে দিনের মধ্যে দ্বিতীয়বার দুঃস্বপ্ন দেখার হাত থেকে দলকে বাঁচান অধিনায়ক বুচার। তাঁর অর্ধশতকে ভর করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দিনের খেলা শেষ করে ৪ উইকেটে ৭৮ রান নিয়ে। প্রথম ইনিংসে এগিয়ে থাকার সুবাদে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় আয়ারল্যান্ডকে।