নাটকীয় শেষ ওভারে ম্লান সাব্বির বীরত্ব
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ
বরিশাল বুলস ২০ ওভারে ১৯২/৪ (নাফিস ৬৩, মুশফিক ৮১*, থিসারা ২৪*; ফরহাদ ২২/২, স্যামি ৩৬/১)।
রাজশাহী কিংস ২০ ওভারে ১৮৮/৬ (সব্বির ১২২, স্যামি ২৭, সামিত ১৫; আল-আমিন ৩৫/৩, হায়দার ২৯/১, মনির ৩০/১)
ফলঃ বরিশাল বুলস ৪ রানে জয়ী।
১৪ রানের মাথায় সাব্বির রহমানের ক্যাচ ছেড়েছিলেন আল-আমিন হোসেন। পয়েন্টে দাঁড়িয়ে একেবারে লোপ্পা ক্যাচটি ছাড়ার সময় তিনি হয়তো ঘূণাক্ষরেও ভাবেননি এরপর কী ঘটতে যাচ্ছে। সেই একবারই সুযোগ দিয়েছিলেন সাব্বির। এরপর পুরো ইনিংসজুড়ে দেখালেন এমনই চণ্ডীরূপ তাতে ভেঙে গেল বিপিএলের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের রেকর্ড। কিন্তু তাতেও এলো না পরম আরাধ্য জয়! খুলনা টাইটানসের বিপক্ষে ম্যাচের মতো শেষ ওভারের নাটকীয়তায় এবারও রাজশাহী কিংসের কাছ থেকে ফসকে গেল বিজয়ের পতাকা। ৬১ বলে ১২২ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস খেলার পরও বরিশাল বুলসের বিপক্ষে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ৪ রানে পরাজয় দেখতে হলো সাব্বির রহমানকে।
১৮তম ওভারের তৃতীয় বলে চার মেরেছিলেন বরিশাল অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। বোলার কেসরিক উইলিয়ামস হয়তো কিছু একটা বলে থাকবেন। ব্যাট হাতে উত্তর এলো পরের বলেই। প্রিয় কাউ কর্নার দিয়ে প্রকাণ্ড একটা ছয় হাঁকিয়ে বোলারকে আঙুল উঁচিয়ে উড়ন্ত বলের গতিপথ দেখিয়ে দিলেন মুশফিকুর রহিম। চাইলে এটাকে এই ম্যাচের বিজ্ঞাপন বলতে পারেন। দুই দলের চল্লিশ ওভারে যে ছক্কা হয়েছি কুড়িটি। অর্থাৎ প্রতি দুই ওভারে হয়েছে একটি করে ছয়।
শুরু করেছিলেন বরিশাল বুলসের শাহরিয়ার নাফিস ও মুশফিকুর রহিম। মন্থর সূচনার পর পায়ে একটু শক্ত জমিন পেতেই স্ট্রোকের ফুরঝুড়ি ছোটাতে থাকেন নাফিস ও মুশফিক। দুজন মিলে গড়ে তোলেন ৭১ বলে ১১২ রানের জুটি। ৪৪ বলে ৬৩ রান করে নাফিস আউট হলেও শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন মুশফিকুর রহিম। খেলেন ৫২ বলে ৮১ রানের এক বিস্ফোরক ইনিংস। নাফিস ফিরে গেলেও পরের উইকেটে থিসারা পেরেরার সঙ্গে গড়েন ২৪ বলে ৫৯ রানের দুর্দান্ত জুটি। ২২ রানে ২ উইকেট নেন রাজশাহীর বোলার ফরহাদ রেজা।
১৯৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা খায় রাজশাহী। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই ফিরে যান ওপেনার রকিবুল হাসান। তারপর পুরো ইনিংস জুড়েই ছিলেন সাব্বির রহমান। তৃতীয় বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে বিপিএলে সেঞ্চুরি করেছেন সাব্বির রহমান। এইবারের আসরে এটাই প্রথম সেঞ্চুরি। সব মিলিয়ে বিপিএলের চার আসরে এটা মাত্র নবম সেঞ্চুরি। এর আগে বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে বিপিএলে সেঞ্চুরি করেছিলেন শাহরিয়ার নাফিস ও মোহাম্মদ আশরাফুল।
সাব্বিরের ইনিংসটি রাজশাহীর জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ন ছিল তা একটি তথ্যেই বোঝা যায়। ৫ম ব্যাটসম্যান হিসেবে যখন আউট হন সাব্বির তখন দলের রান ছিল ১৫৯। এর ১২২ রানই ছিল রাজশাহীর এই আইকনের। দলের হয়ে ২য় সর্বোচ্চ ২৭ রান করেছেন অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি। রাজশাহীর হয়ে মারা ৯টি ছক্কার প্রতিটিই মেরেছেন সাব্বির। তিনি যখন সেই আল-আমিনের বলে ডেভিড মালানের ক্যাচে পরিণত হন, তখন জয়ের জন্য ২৪ বলে ৩৪ রান প্রয়োজন ছিল রাজশাহীর। শেষ ওভারে সেটাই এসে দাঁড়ালো ৯ রানে। কিন্তু পারলেন না ব্যাটসম্যান আবুল হাসান রাজু ও নুরুল হাসান সোহান। কোনো উইকেট না গেলেও এলো মাত্র ৪ রান। খুলনার বিপক্ষে শেষ ওভারের নায়কে পরিণত হয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। এবারে নায়ক হলেন বরিশালের শ্রীলঙ্কান পেসার থিসারা পেরেরা।
সাব্বিরের জন্য সান্ত্বনা, এই ম্যাচে ম্যাচসেরা নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।