• " />

     

    ম্যাচজয়ী অধিনায়ক ও ১১ জনই ম্যাচসেরা

    ম্যাচজয়ী অধিনায়ক ও ১১ জনই ম্যাচসেরা    


    গত পরশু ওয়েস্ট ইন্ডিজ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে স্কোরকার্ডটা দেখলে একটু চমকে যেতে পারেন। শ্যানন গ্যাব্রিয়েল ও অ্যাশলি নার্স পেয়েছেন তিন উইকেট। জোনাথন কার্টার করেছেন ফিফটি। তারপরও হারারেতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৬২ রানের জয়ে জেসন হোল্ডারকে ম্যাচসেরা দেওয়া হল কেন? ১৬ রান দিয়ে ২ উইকেটের চেয়ে কাগজে কলমে ভালো পারফরম্যান্স তো এই ম্যাচেই আছে। স্কোরকার্ড দিয়ে অবশ্য হোল্ডারকে ঠিক চেনা যাবে না। শুরুর অসাধারণ স্পেলেই শ্রীলঙ্কার টপ অর্ডারের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছেন, ৫ ওভারের প্রথম স্পেলেই ফিরিয়ে দিয়েছেন ধনঞ্জয় ডি সিলভা ও কুশল মেন্ডিসকে। কিন্তু শুধু বোলিংই কি হোল্ডারকে ম্যাচসেরা করেছে? 

    স্কোরকার্ড অবশ্য এও বলছে না, অধিনায়কত্বেরও তাতে অবদান আছে। নিজে পথ দেখিয়েছেন, পরে বোলারদের যেভাবে ব্যবহার করেছেন তাতে ম্যাচ অ্যাডজুডিকেটর ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ককেই পুরস্কারের জন্য সবচেয়ে যোগ্য মনে করেছেন।

    হোল্ডারের ম্যাচসেরা হওয়াটা অতি অবশ্যই শুধু অধিনায়কত্বের জন্য নয়। কিন্তু ক্রিকেটে স্রেফ অধিনায়কত্বের জন্য ম্যাচসেরার উদাহরণ কিন্তু আছে।

     

    ২ 
    সেটা জানতে হলে ফিরে যেতে হবে ৩৩ বছর আগে ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপে। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ওই ম্যাচে সেবার টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিলেন ইংলিশ অধিনায়ক বব উইলিস। তখনকার পুঁচকে শ্রীলঙ্কা শুরু থেকেই একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে, শেষ পর্যন্ত ৫০.৪ ওভারেই অলআউট হয়ে যায় ১৩৬ রানে (তখনকার খেলা হতো ৬০ ওভারের)। উইলিস নিজে নিয়েছিলেন ১ উইকেট। তবে ইয়ান বোথাম, নরমান কাওয়ান্স ও ভিক মার্কস নিয়েছিলেন ২ উইকেট। আর ৩ উইকেট নিয়ে সফলতম বোলার ছিলেন পল অ্যাবট। আর গ্রায়েম ফাওলারের ৭৭ বলে ৮১ রানে মাত্র ১ উইকেট হারিয়েই ২৪ ওভারে ওই রান টপকে যায় ইংল্যান্ড। 

    হিসেব অনুযায়ী ফাওলার বা অ্যাবটেরই ম্যাচসেরা হওয়া উচিত ছিল। বা নিদেনপক্ষে বোথাম, কাওয়ান্স বা মার্কসের। কিন্তু সেটি উঠল উইলিসের হাতে। অন্য কিছু নয়, স্রেফ দুর্দান্ত অধিনায়কত্বের জন্যই ওই পুরস্কার পেয়েছিলেন উইলিস।

     


    উইলিস তাও এক উইকেট পেয়েছিলেন, ১৯৮৪ সালে ল্যাঙ্কাশায়ারের জন আব্রামস তাও পাননি। কাউন্টি ক্রিকেটের বেনসন অ্যান্ড হেজেস কাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ওয়ারউইকশায়ার ও ল্যাঙ্কশায়ার। শুরুতে ব্যাট করে ওয়ারউইকশায়ার আউট হয়ে গিয়েছিল ১৩৬ রানে। অ্যালট, জেফরিস নিয়েছিলেন তিন উইকেট। পরে ফিউজের ৩৫ ও ফেয়ারব্রাদারের ৩৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়েই সেটি টপকে যায় ল্যাঙ্কাশায়ার। অধিনায়ক আব্রামস বল করেননি, আর ব্যাট করতে নেমে শূন্য রানে আউট হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু ম্যাচসেরা হলেন তিনিই। নিজের নাম শোনার পর বিহবল আব্রামস নাকি বলে উঠেছিলেন, "কে? আমি?"
     

    ৩ 
    ম্যাচসেরার অদ্ভুত ঘটনা আরও অনেকই আছে। অনেক ম্যাচেই যেমন একাধিক ক্রিকেটার ম্যাচসেরা হয়েছেন, কিন্তু দলের ১১ জনকেই সেই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে, সেটি কি কখনো শুনেছেন? সেই অদ্ভুত কীর্তি হয়েছে ক্রিকেটে একাধিকবার। 

     

    ১৯৯৬ সালে প্রথমবার সেটি হয়েছিল গায়ানার জর্জটাউনে। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নিউজিল্যান্ড অলআউট হয়ে গিয়েছিল মাত্র ১৫৮ রানে । সর্বোচ্চ ৪১ রান করেছিলেন ওপেনার ক্রেগ স্পিয়ারম্যান। কিন্তু সেই রান তাড়া করতে নেমেই একের পর উইকেট হারাতে থাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ পর্যন্ত ১৫৪ রানে অলআউট হয়ে ম্যাচটা হেরে যায় ৪ রানে। নিউজিল্যান্ডের গ্যাভিন লারসেন, জাস্টিন ভন ও ক্রিস কেয়ার্নস নিয়েছিলেন দুই উইকেট। তার আগে ব্যাট হাতে ২৯ রান করেছিলেন কেয়ার্নস। পুরস্কারটা হয়তো তাঁর-ই পাওয়ার কথা। কিন্তু ম্যাচ অ্যাডজুডিকেটর বলেছিলেন, নিউজিল্যান্ডের ১১ জনই পুরস্কারের যোগ্য। সবাই তাই পেয়েছিলেন ওই সম্মান। 

    এর পরের ঘটনাটি তিন বছর পর টেস্টের। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩৫১ রানে হারিয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ধবলধোলাই করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে সেখানে সবারই সম্মিলিত অবদান ছিল। গ্যারি কারস্টেন, জন্টি রোডস, মার্ক বাউচার সেঞ্চুরি করেছিলেন। উইকেটগুলো ভাগাভাগি করে নিয়েছিলেন অ্যালান ডোনাল্ড, শন পোলক, ল্যান্স ক্লুসনার, পল অ্যাডামস, জ্যাক ক্যালিসরা। শেষ পর্যন্ত অ্যাডজুডিকেটর আলাদা কাউকে বেছে না নিয়ে পুরো দলকেই দিয়েছেন ম্যাচসেরার সম্মান।