ঐ নতুনের কেতন উড়ে
কাল সংবাদ সম্মেলনে কথাটা অকপটে বলেছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। বিপিএলের পারফরম্যান্স দিয়ে কাউকে পরিমাপ করতে চান না বাংলাদেশ অধিনায়ক। নিউজিল্যান্ড সফরের ২২ জনের প্রাথমিক দল আগেই ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় সুযোগ নেই এখান থেকে কাউকে নতুন করে দলে নেওয়ার। কয়েকজন খেলোয়াড়ের চোটের কারণে অবশ্যই পরিবর্তন আসবে। তবে সেটাও স্ট্যান্ডবাই তালিকা থেকেই পূরণ হওয়ার কথা। তাহলে বিপিএলের প্রাপ্তি কী? প্রাপ্তি হলো আনকোরা কিছু তরুণ মুখ যারা নিজ প্রতিভার উত্তাপে বদলে দিতে পারে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ। নিজেদের প্রথম বিপিএলে প্রতিভার ছটা ছড়ানো এমন কয়েকজন তরুণ ক্রিকেটার নিয়েই এই লেখা।
প্রথমেই বলতে হয় আফিফ হোসেনের কথা। পুরো নাম আফিফ হোসেন ধ্রুব। নিজের অভিষেক টি-টোয়েন্টিতেই একগাদা রেকর্ড করেছেন এই ১৭ বছরের কিশোর। সবই বল হাতে। ২১ রানে ৫ উইকেট নিয়ে চমকে দিয়েছেন সবাইকে। সবচেয়ে কম বয়সে টি-টোয়েন্টিতে ৫ উইকেট নেওয়ার রেকর্ডটি এখন তাঁরই। বিপিএল অভিষেকেও সেরা বোলিং এটি। সব মিলিয়ে এবারের বিপিএলে সেরা বোলিংয়ের রেকর্ডও। তবে এরপরও নিজেকে বোলার ভাবতে রাজি নন খুলনার ছেলে। নিজেকে যে ব্যাটসম্যান ভাবেন তিনি! যে ব্যাটিং নিয়ে তাঁর চাপা গর্ব, সেটা এখনো অবশ্য দেখাই হয়নি। চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে আফিফের অভিষেক ম্যাচটি রাজশাহী ৬ উইকেটে জিতে নিলে তার ব্যাটিংয়ে নামাই হয়নি। কাল এলিমিনেটর ম্যাচে আবারও চট্টগ্রাম ভাইকিংসের মুখোমুখি হবে রাজশাহী কিংস। এবার হয়তো ব্যাট হাতেও নিজের প্রতিভার প্রমাণ দেবেন আফিফ।
রাজশাহী কিংসের আরেক তরুণ মেহেদী হাসান মিরাজকে অবশ্য ঠিক নতুন বলা যায় না। বাংলাদেশ অনুর্ধ্ব-১৯ দলের সাবেক অধিনায়কের আগমনী সঙ্গীত শোনা যাচ্ছিল অনেকদিন ধরেই। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক টেস্ট সিরিজে ১৯ উইকেট নিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে পেয়েছেন ‘বিস্ময় বালক’ হিসেবে পরিচিতি। সে রকম না হলেও, নিজের প্রথম বিপিএলে ভালোই করেছেন ১৯ বছর বয়সী তরুণ। ১২ ম্যাচে নিয়েছেন ১১ উইকেট। সেরা বোলিং ১২ রানে ২ উইকেট। তবে বোলিং নয়, এবারে দেখা গেছে ব্যাটসম্যান মিরাজকেও। রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ৩৩ বলে অপরাজিত ৪১ রান করে জিতিয়েছেন দলকে।
দল ভালো না করলেও নিজের সামর্থ্যের ঝলক ঠিকই দেখিয়েছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের পেসার মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন। নিয়েছেন ৯ ম্যাচে ৯ উইকেট। সেরা বোলিং রাজশাহী কিংসের বিপক্ষে ১২ রানে ৩ উইকেট। ব্যাট হাতে আলো ছড়িয়েছেন তাঁরই সতীর্থ নাজমুল ইসলাম শান্ত। ১২ ম্যাচে কুমিল্লার বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের সংগ্রহ ১৮০ রান। সর্বোচ্চ ইনিংস খেলেছেন অপরাজিত ৫৪ রানের। ১৯ চার মারলেও হাঁকাননি একটিও ছক্কা।
প্রথম বিপিএলে ভালোই করেছেন খুলনা টাইটানসের ওপেনার হাসানুজ্জামান। ৮ ম্যাচে ১৩৮ রান করেছেন। সর্বোচ্চ ৪০ রানের ইনিংস খেলেছেন। মেরেছেন ১৬টি চার ও ৪টি ছক্কা।
বয়স ত্রিশ স্পর্শ করলেও এবারেই প্রথম বিপিএলে খেলেছেন বরিশাল বুলসের এনামুল হক। ৬ ম্যাচে ৯২ রান করার পাশাপাশি ২টি উইকেটও নিয়েছেন তিনি। খেলেছেন সর্বোচ্চ পরাজিত ৪২ রানের ইনিংস। তাঁর সতীর্থ ফজলে মাহমুদ রাব্বিও ব্যাট হাতে প্রতিশ্রুতি দেখিয়েছেন। ৩ ম্যাচে করেছেন ৬৪ রান। সর্বোচ্চ ইনিংসটি ৪৩ রানের। এছাড়াও খুলনা টাইটানসের তাইবুর রহমান ও চিটাগং ভাইকিংসের জাকির হোসেন ইঙ্গিত দিয়েছেন উজ্জ্বল আগামীর।
বিপিএলের এই পারফরম্যান্স হয়তো রাতারাতি তাঁদের বদলে দেবে না। দেবে না জাতীয় দলের পরম আরাধ্য লাল-সবুজ জার্সি। কিন্তু প্রথম বিপিএলে এমন সাফল্য নিঃসন্দেহে এই তরুণদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দেবে বহুগুণ। দেশ ও বিদেশের তারকা ক্রিকেটারদের সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ারের অভিজ্ঞতাকে এর সঙ্গে উপরি হিসেবে ধরে নেওয়াই যায়।