বিপিএলের ওরা এগারজন
ঢাকা ডায়নামাইটস না রাজশাহী কিংস- বিপিএলের এবারের শিরোপা কার হাতে উঠছে সেটি জানার জন্য অপেক্ষা মাত্র এক ম্যাচের। কিন্তু এবারের বিপিএলের সেরা একাদশে কারা থাকবেন? চারজন বিদেশীর বেশি নেওয়ার নিয়ম নেই, সেক্ষেত্রে বাকি সাতজন দেশীই বা কারা হবেন?
মেহেদী মারুফ (ঢাকা ডায়নামাইটস)
এবারের বিপিএলে নিজেকে যেন নতুন করে চিনিয়েছেন। টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বেশি ২০টি ছয় তাঁর, রানের দিক দিয়েও তাঁর চেয়ে ওপরে আছেন শুধু পাঁচজন। এই জায়গায় আফগানিস্তানের মোহাম্মদ শেহজাদ হতে পারতেন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী। তবে রানের দিক দিয়ে শেহজাদ এগিয়ে থাকলেও স্ট্রাইক রেট বা মোট ছয়ের দিক দিয়ে মারুফই হয়তো একটু এগিয়ে থাকবেন।
তামিম ইকবাল (চট্টগ্রাম ভাইকিংস)
সেরা একাদশে “অটোমেটিক চয়েসের” মধ্যে অন্যতম। পুরো টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি রান ৪৭৬ রান তাঁর, আর কেউ ৪০০ রানও করতে পারেননি। টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বেশি ফিফটি (৬টি) ও সবচেয়ে বেশি চারও (৫৩টি) চিটাগং ভাইকিংসের অধিনায়কের।
মুশফিকুর রহিম (বরিশাল বুলস)
বরিশালের ভুলে যাওয়ার এক বিপিএলে সবচেয়ে জ্বলজ্বলে ছিলেন তাঁদের অধিনায়কই। এবারের বিপিএলের তৃতীয় সর্বোচ্চ ইনিংসও মুশফিকেরই। উইকেটের পেছনেও এবার সপ্রতিভ ছিলেন, বেশ কয়েকটি দারুণ ক্যাচ ধরেছেন। এখানে সাব্বির রহমান বা উইকেটকিপার হিসেবে কুমার সাঙ্গাকারা হতে পারতেন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী। ৩৪১ রানের সঙ্গে ৭টি ডিসমিসাল বাকি দুজনের চেয়ে এগিয়ে রেখেছে মুশফিককে।
মাহমুদউল্লাহ (খুলনা টাইটানস)
ব্যাটে-বলে খুব সম্ভবত ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্টের অন্যতম দাবিদার। টুর্নামেন্টের প্রথম দুই ম্যাচে শেষ ওভারে তিন উইকেট করে নিয়ে প্রায় হেরে যাওয়া ম্যাচই জিতিয়ে দিয়েছিলেন। তবে মূল কাজ যেটি, সেটিও করেছেন দারুণভাবে। ৩৯৪ রান ও হয়ে গেছে, তাঁর চেয়ে বেশি রান আছে শুধু তামিমের । বল হাতেও নিয়েছেন ১০ উইকেট।
মোসাদ্দেক হোসেন (ঢাকা ডায়নামাইটস)
রানের দিক দিয়ে তাঁর চেয়ে বেশি রান আছে আরও দশজনের। ফিফটিও আছে মাত্র একটি। তবে ১৩ ম্যাচে ২৯৯ মোসাদ্দেককে ঠিক বোঝাতে পারবে না। যখনই সুযোগ পেয়েছেন, নিজেকে চিনিয়েছেন। বেশ কয়েকটি ম্যাচে ঢাকার ত্রাণকর্তা ছিলেন, পুরো টুর্নামেন্টে দশের নিচে আউট হয়েছেন মাত্র দুইবার।
ড্যারেন স্যামি (রাজশাহী কিংস) (অধিনায়ক)
পুরো টুর্ণামেন্টে খুব ধারাবাহিক ছিলেন না, কিন্তু যে তিনটি ম্যাচে ঝড়ো ইনিংস খেলেছেন, তাতেই পার্থক্য গড়ে দিয়েছেন। ওই তিনটি ম্যাচে সেরা খেলোয়াড় ছিলেন স্যামি, রাজশাহী কিংসের ঘুরে দাঁড়ানোতে নেতৃত্ব দিয়েছেন সামনে থেকেই। এই একাদশের "ক্যাপ্টেন ফ্যান্টাস্টিক' হিসেবে রাজশাহী কিংসের অধিনায়কই প্রথম পছন্দ।
মোহাম্মদ নবী (চিটাগং ভাইকিংস)
টুর্নামেন্টের ম্যাচসেরা হওয়ার আরও একজন বড় দাবিদার। এবারের বিপিএলে পেয়েছেন ১৮ উইকেট, তাঁর চেয়ে বেশি উইকেট আছে শুধু জুনাইদ খান ও ড্যারেন ব্রাভোর। ব্যাটিংয়ে ছিলেন দারুণ, রাজশাহীর বিপক্ষে তাঁর ৩৭ বলে ৮৭ রানের ইনিংসটা ছিল বিপিএলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
ডোয়াইন ব্রাভো (ঢাকা ডায়নামাইটস)
ঢাকার হয়ে আন্দ্রে রাসেলের অনুপস্থিতিটা ঢেকে দিয়েছেন ভালোমতোই। ২০ উইকেট নিয়ে জুনাইদ খানের সঙ্গে যৌথভাবে সবচেয়ে বেশি উইকেটও তাঁর। ব্যাট হাতে তেমন কিছু করতে হয়নি, তবে আগের ম্যাচে মহামূল্যবান ২৩ রান ঢাকার জয়ে রেখেছে বড় অবদান।
আরাফাত সানি (রংপুর রাইডার্স)
এই জায়গাটা নিয়ে একটু ভুরু কুঁচকাতেই পারেন। একাদশে একজন স্পেশালিস্ট স্পিনার থাকলে সেটা তো রশিদ খান বা শহীদ আফ্রিদির হওয়া উচিত। রশীদ খানের উইকেট সানির সমান (১৩টি), তবে অন্তত ১৩ ম্যাচ খেলেছেন, এমন বোলারদের মধ্যে রশিদের ইকোনোমিই সবচেয়ে কম। আর আফ্রিদি তো ১৭ উইকেট নিয়ে আরও অনেক ওপরে। কিন্তু একাদশের চারজনের বেশি বিদেশী তো রাখা যাবে না। সেক্ষেত্রে দেশী স্পিনারদের মধ্যে সানিই ছিলেন সবচেয়ে উজ্জ্বল। খুলনার সঙ্গে তো কোনো রান না দিয়েই পেয়েছিলেন তিন উইকেট।
জুনাইদ খান (খুলনা টাইটানস)
সেরা একাদশে আরও একজন “অটোমেটিক চয়েস।” ব্রাভোর সঙ্গে টুর্নামেন্ট সর্বোচ্চ ২০টি উইকেট খুলনার পাকিস্তানের এই পেসারের। তার চেয়েও বড় কথা, প্রতি ম্যাচেই ছিলেন দুর্দান্ত ধারবাহিক। ৬.০৮ ইকোনমি রেটও সে কথাই বলছে।
মোহাম্মদ শহীদ (ঢাকা ডায়নামাইটস)
সেরা একাদশের শেষ পেসারের জায়গায় তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারতেন খুলনার শফিউল ইসলাম বা চট্টগ্রামের তাসকিন আহমেদ। তবে চোটে পড়ার আগে শহীদ যে কয়টি ম্যাচ খেলেছেন, প্রতিটিতেই অন্তত একটি করে উইকেট পেয়েছেন। উইকেট প্রতি রানও তাঁরই সবচেয়ে কম। বাকি দুজনের চেয়ে ধারে-ভারে তিনিই বেশি এগিয়ে ছিলেন।