প্রত্যাশিত ভেসে যাওয়া, নাকি অন্যরকম কিছু?
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম থেকে মোড়ের দোকানের চায়ের কাপ, ক্লাসরুম আড্ডা থেকে অফিসের ডেস্ক - সারাদেশে আলোচনার বিষয় এখন একটাই, অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডে আঘাত হানা সাইক্লোন যুগল মার্সিয়া ও লাম। ঝড়ের স্বরূপ ও বৃষ্টির তীব্রতা অনুধাবন করে হোক, বা না করে, ১৭ কোটি বাংলাদেশীর অধিকাংশের চাওয়াটা প্রায় একই- বৃষ্টিতে ভেসে যাক অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কালকের ম্যাচটা, ব্রিসবেন থেকে এক পয়েন্ট নিয়ে মেলবোর্নের উদ্দেশ্যে যাত্রা করুক ‘টিম টাইগার্স’।
বৃষ্টি বাধায় পণ্ড ম্যাচ থেকে এক পয়েন্ট পাওয়ার এই দৃষ্টিভঙ্গিটা অবশ্য একটুও পছন্দ হচ্ছে না বাংলাদেশ কাপ্তান মাশরাফি বিন মুর্তজার, “আমার মনে হয় এক পয়েন্টের এই চিন্তাটা পুরোপুরিই নেতিবাচক, সম্পূর্ণ একটা ম্যাচের জন্যই প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা।” ম্যাচ পরিত্যাক্ত হওয়াটা হতাশাজনক বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। খুব স্বাভাবিকভাবেই অস্ট্রেলিয়াও চাইবে না বৃষ্টিতে ভেসে যাক ম্যাচটা। ‘হ্যামস্ট্রিং সার্জারি’-র ধকল কাটিয়ে অনেকদিন পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে প্রস্তুত অসি কাপ্তান মাইকেল ক্লার্কের কথায়ও উঠে এসেছে এরকমটাই।
ঘণ্টায় ৯০ কিমি বেগে বাতাসের সম্ভাবনা দুশ্চিন্তার ভাঁজই ফেলবে মাশরাফি, ক্লার্কের কপালে। ‘ব্রিসবেন সিটি কাউন্সিল’ থেকে বারংবার সতর্ক করা হচ্ছে শহরবাসীদের। হঠাৎ বন্যার আশঙ্কায় সরবরাহ করা হয়েছে ৯০০০০ বালুর বস্তা। এই প্রতিবেদন লেখার সময়ে বৃষ্টি হচ্ছে না ব্রিসবেনে, তবে জানা গেছে এটা নাকি সাময়িক বিরতি। আগামীকাল তুমুল বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা বলছেন আবহাওয়াবিদরা।
সবচেয়ে বড় ব্যাপার, ব্রিসবেনের সানকর্প স্টেডিয়ামে আজ রাতে হওয়ার কথা থাকা অস্ট্রেলিয়ান লিগের একটি ফুটবল ম্যাচ পরিত্যাক্ত করা হয়েছে, আলাপ চলছে শনিবার রাতে একই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিতব্য রাগবির একটি বড় ম্যাচ পরিত্যাক্ত করা নিয়েও। ফুটবল, রাগবির মত খেলাগুলো- যেগুলোতে খুব বড় ধরনের প্রভাব আবহাওয়া ফেলতে পারে না, ওগুলোও যেখানে হুমকির মুখে, একটা ক্রিকেট ম্যাচের ভাগ্য সেখানে কি হতে পারে, তা অনেকটাই অনুমেয়।
তবে প্রতিযোগী দুই দলের জন্যে ক্ষীণ ও একমাত্র আশার আলোটা হল আবহাওয়ার পূর্ভাবাস কখনোই শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে দেওয়া হয় না। সবাইকে অবাক করে দিয়ে বৃষ্টি হয়তো থেমেও যেতে পারে দিনের কোন এক সময়। তখনই চলে আসবে পিচ ও আউটফিল্ডের অবস্থা প্রসঙ্গ। গ্যাবার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা যেকোনো বিচারে বিশ্বের সেরাগুলোর একটি। আকস্মিকভাবে বৃষ্টি থেমে গেলে মাঠ প্রস্তুত করতে হয়তো খুব বেশি সময় লাগবে না। আর প্রতি দলের ২০ ওভার করে খেলার সুযোগ থাকলেও যেহেতু মাঠে গড়াবে ম্যাচ, স্থানীয় সময় সন্ধ্যায়ও টি-টুয়েন্টিরূপী একটি ওয়ানডে ম্যাচ শুরু হওয়া সম্ভব।
এখনও পর্যন্ত অপ্রত্যাশিত সেই ঘটনাটি যদি ঘটে, তবে বল হাতে পেসাররা যে জাদু দেখাবেন, এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়। এমনিতেই ব্রিসবেনের গ্যাবা স্টেডিয়ামটি পুরো বিশ্বে পেস-স্বর্গ হিসেবে পরিচিত। তার উপর তিন দিন ধরে সূর্যের চেহারা দেখছে না এর উইকেট। আক্ষরিক অর্থেই বাউন্স ও সুইংয়ের মেলা বসে যাবে। আর এহেন উইকেটকে কাজে লাগিয়ে প্রচণ্ড বিধ্বংসী রুপে আবির্ভূত জনসন, স্টার্কদের সামলানোর জন্য নিজেদের সবটুকু প্রতিভা নিংড়ে দিতে হবে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের।
অবশ্য মাশরাফি, রুবেল, তাসকিনদের জন্যেও এটা বড় সুযোগ। আফগানিস্তানের সাথে গত ম্যাচে তাসকিন ও রুবেল দুজনই নিয়মিত ১৪০ কিমি বেগে বল করে গেছেন। মাশরাফি অতটা গতি উঠাতে না পারলেও লাইন-লেংথে নিখুঁত থেকে তিনিই ছিলেন সেদিন সফলতম বোলার। ব্রিসবেনে এর আগে খেলার অভিজ্ঞতা এঁদের কারও না থাকলেও ওরকম কন্ডিশনে বল করার জন্যে হয়তো মুখিয়ে থাকবেন তিনজনেই।
বাংলাদেশ একাদশে পরিবর্তন আসতে পারে একটি। একজন ব্যাটসম্যানকে বাদ দিয়ে তাইজুল বা সানিকে খেলানোর কথা শোনা যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে কোপটা হয়তো পড়বে গত ম্যাচেও অবহেলিত মমিনুলের উপর। অস্ট্রেলিয়া একাদশে একটি পরিবর্তন সুনিশ্চিত। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক জর্জ বেইলির জায়গায় খেলবেন নিয়মিত অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক। আর পেস আক্রমনে জশ হ্যাজেলউডের পজিশনে প্যাট কামিন্সকে হয়তো অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
মজার ব্যাপার হল, শক্তির বিচারে পার্থক্য অনেক হলেও দু’দলের সাম্প্রতিক রেকর্ডটা প্রায় একই সুতোয় গাঁথা। ওয়ানডেতে গত আট ম্যাচে টানা জয় পেয়েছে অসিরা, টাইগাররা ছয় ম্যাচে। ছবি-সৌজন্যঃএএফপি,ক্রিকেটঅস্ট্রেলিয়া