ঘূর্ণিঝড়কে যখন হারিয়ে দিল ক্রিকেট
হুট করে দেখলে মনে হবে, পুরো শহরটা কেউ যেন এসে দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে গিয়েছে। এখানে ওখানে বিক্ষিপ্ত পড়ে আছে গাছের ধ্বংসাবশেষ, রাস্তার ল্যাম্পপোস্টগুলো ভেঙেচুরে কোনোমতে দাঁড়িয়ে। চারদিন আগে সাইক্লোন ভারদাহ যে ছোবল মেরে গেছে, তার ক্ষতচিহ্ন চেন্নাইয়ের গায়ে এখনো দগদগে। কিন্তু ক্রিকেট এসে সেই ক্ষতটা সাময়িক হলেও উপশম দিচ্ছে। এই লেখা যখন পড়ছেন, চেন্নাইতে যে ভারত-ইংল্যান্ডের শেষ টেস্ট শুরুও হয়ে যাওয়ার কথা।
চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামেও ঘূর্ণিঝড়ের ধাক্কাটা এখনো টাটকা। এখানে ওখানে গকাচের ভাঙা টুকরো পড়ে আছে, গ্যালারিতে বেশ কিছু চেয়ারও উৎপাটিত। সাইটস্ক্রিনটা কেউ যেন ফালা ফালা করে কেটে দিয়ে গেছে। কিন্তু এতকিছু সামলে ঠিকই টেস্ট ক্রিকেটের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাচ্ছে চিদাম্বরম। আউটফিল্ডের বেশ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তবে উইকেটটা কোনোমতে ঢেকে রাখা গেছে। তারপরও উইকেটে তো ঝড়ের ঝাপটা একটু হলেও লেগেছে। সেটা শুকোতে তাই কয়লা-পদ্ধতিও প্রয়োগ করা হয়েছে। ফেসবুক-টুইটারের কল্যাণে যে ছবিটা এখন ভাইরাল।
ইংল্যান্ডের দলের আরেকটা ছবিও অনেকের চোখে পড়ার কথা। জো রুটরা রাস্তায় ব্যাটিং করছেন, দৃশ্যটা বেশ বিস্ময়ের। ঝড়ের পর স্টেডিয়ামের এননই দশা, সেখানে অনুশীলন করারও উপায় নেই। রুটরা তাই মজা করে সামনের রাস্তাতেই নেট-প্র্যাকটিস শুরু করে দিয়েছেন। দুই দিন আগেও শোনা যাচ্ছিল, টেস্টটা শেষ পর্যন্ত স্থগিত বা পরিত্যক্ত হতে পারে। কিন্তু চেন্নাইয়ের কিউরেটর, মাঠকর্মী থেকে শুরু করে সবাই একদিন উদয়াস্ত পরিশ্রম করেছেন। সাইক্লোনের ঝড়টা একটু একটু ভুলিয়ে দিচ্ছে ক্রিকেট।
কী কাকতালীয়, আট বছর আগে এই চেন্নাই আরেকটি শোক ভুলে দিয়েছিল। মুম্বাইয়ের ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর চেন্নাইয়ের টেস্ট হবে কি না, সেটা নিয়েও ছিল সংশয়। ৬০০ মানুষ নিহত হয়েছিলেন ওই হামলায়, সেই শোক সামলাতে অনেক দিনই লেগেছিল ভারতের। শেষ পর্যন্ত ক্রিকেটেই সেই শোককে শক্তিতে পরিণত করেছিলেন ধোনিরা। এবার কোহলিরাও তো "ঝড়কে আমি করব মিতে, নড়ব না তার ভ্রুকুটিতে"- মন্ত্রটা জপতে চাইবেন।