নাসের হুসাইনের ‘ঘরে ফেরা’
ম্যাচের আগে পিচের হাল হকিকত জানাতে প্রায়শই ২২ গজের সামনে দাঁড়ান। তবে সেদিনের দাঁড়ানোটা হয়তো একটু অন্যরকম ছিল। চেন্নাইয়ের পিচের সাথে নাসের হুসাইনের সম্পর্কটা যে অনেক পুরনো! ভারত-ইংল্যান্ড টেস্ট সিরিজের শেষ টেস্ট হচ্ছে চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে। এই শহরেই জন্ম নিয়েছিলেন নাসের, এখানে ফেরাটা তাই বহুকাল পড়ে ‘ঘরে ফেরার’ মতই।
ভারতের ‘ঘরের ছেলে’ নাসের কিন্তু নিজের ক্যারিয়ারটা করেছিলেন ইংল্যান্ডেই। ১৯৬৮ সালে তখনকার মাদ্রাজে জন্ম নেয়া নাসেরের পরিবার ৬ বছর পরেই পাড়ি জমায় ইংল্যান্ডে। তবে ১৯৮০ সালের দিকে ভারতে ফেরত এসে খেলেছিলেন তামিলনাড়ু ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের হয়ে, চিপকের এই মাঠে কয়েকটা সেঞ্চুরিও করেছিলেন! এরপর ইংল্যান্ডে ফিরে গিয়ে মূল ক্যারিয়ারের সূচনা করেন। নিজের জন্মস্থানে ফিরতে পেরে দারুন খুশি নাসের, “আমি নিজের জন্মস্থানে ফেরত আসতে পেরে দারুণ খুশি। আমার মনে হয় আমি স্টেডিয়ামের ঠিক পাশের হাসপাতালে জন্ম নিয়েছিলাম! এই ব্যাপারটা আমি খেয়ালই করিনি। সেদিন অশ্বিন আমাকে ব্যাপারটি বলেছে।”
নাসেরের বাবা
খেলার এই ব্যস্ততার মাঝেও চারপাশটা একটু ঘুরে দেখতে চান নাসের, “কাজের তো অনেক চাপ। খেলার শেষ দিনেই আমি চলে যাব। আসলে বাইরে ঘোরার কোন পরিকল্পনা করা হয়নি এখনো। আসলে চেন্নাইয়ে এসে এটা খুবই কম হয়। তবে আমি মাদ্রাজ ক্রিকেট ক্লাবে যাব। সেখানে বসে আমার বাবার স্মৃতি রোমন্থন করবো। মানুষের সাথেও কথাবার্তা বলব।”
ক্রিকেট ক্লাবে হয়তো আকবর ইব্রাহিমের সাথেও দেখা হয়ে যেতে পারে নাসেরের। এই ইব্রাহিমই কিন্তু নাসেরের ক্রিকেট গুরুদের একজন! এই ইব্রাহিমের কোম্পানিতেই কাজ করতেন নাসেরের বাবা। নাসেরের সাথে দেখা করার জন্য তাই মুখিয়ে আছেন তিনি, “হুসাইনের বাবা ইংল্যান্ডে যাওয়ার আগে আমাদের কোম্পানিতে কাজ করত। আমাদের সম্পর্ক এখনো আগের মতই আছে। আশা করি নাসেরের সাথে ক্লাবে দেখা হবে।”
১৯৮০ সালে কয়েকদিনের জন্য ছুটি কাটাতে আসলে এই ইব্রাহিমই নাসেরকে মাঠে নিয়ে যান। নিজে ছিলেন প্রথম শ্রেণি দলের অধিনায়ক। সেই সুবাদে সহজেই নাসেরকে সুযোগ করে দিয়েছিলেন। সেই স্মৃতি আজও মনে আছে নাসেরের, “আমার বাবাও এখানে খেলতেন। আমি ছুটি কাটাতে এসে কয়েকটি ম্যাচ খেলেছিলাম। তখন হয়তো আমার বয়স ১৮ ছিল, স্পিনের সাথে মানিয়ে নিতেই ম্যাচগুলো খেলেছিলাম।”
ঐ ম্যাচের দিনগুলোতে ইব্রাহিমের বাড়িতেই থাকতেন নাসের। সেই দিনগুলোর কথা স্মরণ করেন ইব্রাহিম, “সে দুই মৌসুম আমার বাড়িতে থেকে খেলেছিল। সে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চুল ঠিক করত আর সবাই হাসিতে ফেটে পড়ত। সে দারুন খেলে কয়েকটা সেঞ্চুরি করেছিল।”
যদি সেই এই ম্যাচগুলোর মতো বাকি সময়টাও এখানেই থেকে যেতেন, ক্যারিয়ারের চিত্রটা হয়তো অন্যরকম হয়ে যেত! হয়তো গায়ে উঠতে পারত ভারতের জার্সি। হয়তো ইংলিশ অধিনায়ক হয়ে লর্ডসে নয়, ভারতের অধিনায়ক হয়ে চিদম্বরম স্টেডিয়ামে দেখা যেত তাঁকে। হয়তো...