• আইসিসি বিশ্বকাপ ২০১৫
  • " />

     

    ব্যাকফুটের লড়াই

    ব্যাকফুটের লড়াই    

    গা গরমের ম্যাচগুলো থেকে শুরু হওয়া চমকটা চলছে টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্বে বেশ ক’টা ম্যাচ হয়ে যাবার পরও। প্রস্তুতি ম্যাচে শ্রীলংকাকে হারিয়ে জিম্বাবুয়ে, বাংলাদেশকে হারিয়ে আয়ারল্যান্ড নজর কেড়েছিল। আর নিজেদের প্রথম ম্যাচেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে দিয়ে গ্রুপ বি’র হিসেবনিকেশে ওলটপালটের শুরুটা করে পোর্টারফিল্ডের দলই। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকাকে নাকাল করে হোয়াটমোরের জিম্বাবুয়ে কষ্টার্জিত জয় পেয়েছে র‍্যাঙ্কিং বিচারে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে দুর্বল দল আরব আমিরাতের বিপক্ষে। ওয়ার্ম আপে স্যামি- গেইলদের প্রায় হারিয়ে বসা স্কটল্যান্ড ভয় পাইয়ে দিয়েছে অন্যতম ফেভারিট নিউজিল্যান্ডকেও। সব মিলিয়ে চলতি বিশ্বকাপের কোন ম্যাচের আগেই এখন আর শতভাগ নিশ্চিত কোন ভবিষ্যৎবাণী করা যাচ্ছে না। সে দৃষ্টিকোণ থেকেই আফগানিস্তানের মতো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে অজানা শঙ্কা সঙ্গী করেই মাঠে নামতে হচ্ছে বর্তমান রানার আপ শ্রীলংকাকে।

     

     

    নিজেদের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডের কাছে ৯৮ রানের বড় পরাজয় দেখা ম্যাথিউসের দলের কাছ থেকে আগামীকাল মোটা দাগে ব্যবধান জিইয়ে রেখে জেতাটাই প্রত্যাশিত। অথচ লম্বা নিউজিল্যান্ড সফরে রীতিমতো ধুকতে থাকা লঙ্কান লায়নদেরকে আফগান যোদ্ধাদের থেকে খুব একটা এগিয়ে রাখার সুযোগ মিলছে না। ম্যাচটা নিয়ে তাঁরা কতোটা সতর্ক সেটা প্রকাশ পেলো খোদ ম্যাথিইউসের বয়ানেই, “তাঁরা খুবই ভয়ঙ্কর দল। নিজেদের দিনে যে কোন বড় প্রতিপক্ষকেই চমকে দেয়ার সামর্থ্য রাখে। তারচেয়েও বড় কথা তাদের হারানোর কিছু নেই।"

     

     

     

    আসলেই কি মোহাম্মদ নবীদের হারানোর কিছু নেই? আফগানদের ইংলিশ কোচ অ্যান্ডি মোলস নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যায় বেশ সতর্কই থাকলেন, “অবশ্যই শ্রীলংকা কিছুটা এগিয়ে থাকবে। কিন্তু আমার কথা হল তাঁরা আমাদের খেলা দেখে নি। সহযোগী দেশগুলোর জন্য ধারাবাহিকতার অভাবটাই বড় সমস্যা। আমার যখন ভালো খেলি খুবই ভালো খেলি। ভালো দিন, খারাপ দিন মিলিয়েই আমাদের ক্রিকেট।”

     

     

     

    বিশ্বকাপ শুরু আগে থেকেই নবীরা বলে আসছিলেন অভিষেক আসরে তাঁদের অন্যতম লক্ষ্য বাংলাদেশকে হারানো। সাকিব-তামিমবিহীন টাইগারদের বিপক্ষে এশিয়া কাপের জয়টা যে সে প্রত্যাশার পালে হাওয়া যুগিয়েছে তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু দিনশেষে ১০৫ রানের পরাজয় পার্থক্যটা পরিষ্কার করে দিয়েছে দিনের আলোর মতোই।

     

     

     

    তারপরও আফগান পেস আক্রমণকে অন্তত প্রথম ম্যাচের বিচারে কৃতিত্ব না দিয়ে উপায় নেই। শাপুর জদরান, হামিদ হাসানরা সেভাবে গতির ঝড় তুলতে না পারলেও তামিম, আনামুলদের পরাস্ত করতে পেরেছিলেন বেশ ভালোভাবেই। মাঝপথে মুশফিক-সাকিব ওভাবে প্রতিরোধ না গড়লে ফলটা তো অন্যরকমও হতে পারতো! তবে মাশরাফি-রুবেল-তাসকিনদের সামনে ব্যাটিং টপ অর্ডার যেভাবে মুখ থুবড়ে পড়লো তাতে আরও বড় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে বড় সংগ্রহ গড়ে তোলা যে খুব সহজ হবে না তা বুঝতে বোদ্ধা হবার প্রয়োজন নেই।

     


    আরো পড়ুনঃ

    লঙ্কাবধে কিউইদের উড়ন্ত সূচনা

    পেরেরার নিখুঁত ফিনিশিং

    জাদরানের বলে ছত্রখান মাহেলার ব্যাট!


     

    তবে প্রতিপক্ষ যখন শ্রীলংকা তখন বোলিং আক্রমণের ধার নিয়েও প্রশ্ন থেকেও যায়। সার্জারির পর বিশ্বকাপ দিয়েই মাঠে ফেরা লঙ্কান পেস আক্রমণের পুরোধা লাসিথ মালিঙ্গা পুরনো রুদ্রমূর্তি কতো দ্রুত ফিরে পাবেন বলা কঠিন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১০ ওভার বল করে কোন উইকেটের দেখা পান নি, বিপরীতে হজম করেছেন ৮৪টি রান। বাকি দুই পেসারেরও ফিগার সুবিধেজনক নয়। কুলাসেকারা ৮ ওভারে ৭৮ আর লাকমাল ১০ ওভারে দিয়েছেন ৬২ রান।

     

     

     

    পরিসংখ্যান বিচারে এবারের আসরের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দলটির ব্যাটিং লাইন আপেও মন্দা দীর্ঘদিনের। সাঙ্গাকারা, ম্যাথিউস ছাড়া ধারাবাহিক রান পাচ্ছেন না প্রায় কেউই। কিউইদের বেঁধে দেয়া ৩৩২ রানের লক্ষ্যমাত্রায় শুরুটা ভালোই করেছিলেন থিরামানে, দিলশান, সাঙ্গাকারারা। কিন্তু ২২ ওভারে ২ উইকেটে ১২৪ রানের স্কোরবোর্ডে আচমকাই শনি ভর করলো। এক ম্যাথিউসের কল্যাণে ৪৬.১ ওভারে পুরোপুরি থমকে যাবার আগে সংগ্রহটা গিয়ে দাঁড়ালো ২৩৩-এ।

     

     


    অভিজ্ঞতা আর শক্তির বিচারে দুই প্রতিপক্ষের যতোটাই ফারাক থাকুক না কেন, ডানেডিনে আগামীকালের ম্যাচটির সমীকরণে গুরুত্বটা বেশী দিতে হচ্ছে দু’ দলের অতি সাম্প্রতিক রেকর্ডেই। আর সে বিবেচনায় আরও একটি অঘটনের সম্ভাবনাও পুরোপুরি উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। আফগান অলরাউন্ডার মিরওয়াইস আশরাফও তাই শ্রীলংকাকে আর নয়টা টেস্ট খেলুড়ে দেশের চেয়ে এগিয়ে রাখতে চান না। বিশ্বকাপের নবীনতম সদস্যদের সাথে সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নের প্রকৃত পার্থক্যটা না হয় মুখোমুখি লড়াইয়েই প্রমাণ হোক।