মনে হয়েছে কোচ গায়ের জোরে কথা বলছেন
দল নির্বাচন নিয়ে কোচ হাথুরুসিংহের ব্যাখ্যায় দুই দিন থেকেই চলছে বেশ বিতর্ক। কিন্তু আসলে কোচের এই ব্যাখ্যা কতটা যুক্তিযুক্ত? টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সম্ভাবনাই বা কতটুকু? প্রথম একাদশ কেমন হওয়া উচিত? এসবই বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল...
কোচের ব্যাখ্যা কতটা যুক্তিযুক্ত?
আমি আগেও বলেছি, বাংলাদেশ দলে কোচের ভূমিকাটা আমার কাছে ঠিক পরিষ্কার না। ক্রিকেটে সাধারণত একজন কোচের দায়িত্ব দলকে টেকনিক্যালি ও মানসিকভাবে উজ্জীবিত করা। আগে তাঁর অধীনে আমরা সাফল্য পেয়েছিলাম, তখন তাঁর ফোকাস ছিল পুরোপুরি কোচিংয়ে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, কোচ সেখান থেকে সরে যাচ্ছেন। আমার কাছে মনে হয়, দল নির্বাচন বা ম্যানেজমেন্টে সময় না দিয়ে তাঁর কোচিংয়ে মনোযোগ দেওয়া উচিত।
দল নির্বাচন কীভাবে দেখছেন?
আমি বিভিন্ন জায়গায় যা দেখলাম, কোচ যেসব পরিসংখ্যান দিয়েছেন সেসব আমার কাছে কিছুটা হাস্যকর মনে হয়েছে। মনে হয়েছে যেন গায়ের জোরে কথা বলছেন। নাসিরকে দলে ফিরতে হলে অনেক রান করতে হবে, আর শুভাগতদের ক্ষেত্রে সেটি খাটবে না। একজন কোচ এভাবে তো কথা বলতে পারবেন না। দলে ফিরলে রান করতে হবে, সেটা তো সবাই জানে। কিন্তু একজন পরীক্ষিত খেলোয়াড়কে নতুন করে কী প্রমাণ করতে হবে, সেটা নিয়ে কোচ কিছু বলেননি। আর শুভাগতর ক্ষেত্রে আমি বলব, সৌম্যের মধ্যে আমরা যেরকম সম্ভাবনা দেখেছিলাম তার ক্ষেত্রে এখনো সেরকম কিছু দেখা যায়নি। সৌম্য বাংলাদেশের হয়ে কয়েকটা ম্যাচে সামনে থেকে পথ দেখিয়েছে। সেজন্য খারাপ সময়ের পরেও তার ওপর আস্থা রাখা হয়েছে। কিন্তু শুভাগতর মধ্যে সেরকম প্রতিভা দেখা যায়নি। আমি অবশ্যই চাইব, সে দলে ভালো করুক। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার দল নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ।
একাদশ কেমন হওয়া উচিত?
একটা সময় আমরা টি-টোয়েন্টি খেলাটা একদমই বুঝতে পারতাম না। তবে গত এক বছরে সেই দুর্নাম আমরা অনেকটাই ঘুচিয়েছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে এই দল নিয়ে খুবই আশাবাদী। আমার মনে হয়, বাংলাদেশের তিনজন পেসার নিয়ে খেলা উচিত। মাশরাফি, তাসকিনের সঙ্গে মুস্তাফিজ তো আছেই। আর দলে যেসব মাল্টি-স্কিলড খেলোয়াড় আছে, তাদের আরও ভালোভাবে কাজে লাগানো উচিত। বিশেষ করে মিরাজকে একটা সুযোগ দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। আর টি-টোয়েন্টিতেও মুশফিক নেই, সোহান ওর জায়গায় বেশ ভালো করছে। ভালো একজন বিকল্প পেয়ে গেছি বলেই আমরা মনে করি।
নিউজিল্যান্ড কতটা এগিয়ে থাকবে?
টি-টোয়েন্টি এমন একটা খেলা, প্রথম ছয় ওভারের অ্যাডভান্টেজ নিতে গিয়ে বরং হিতে বিপরীত হয়ে যায়। এখানে ১৩ থেকে ১৭ ওভারটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে কে কীভাবে খেলেছে সেটা ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিতে পারে। আর টি-টোয়েন্টি এমন একটা ফরম্যাট, যেটা নিয়ে আগাম কিছু বলা সবসময়ই কঠিন। আফগানিস্তানও এখানে যেমন ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো দলকে হারিয়ে দেয়। নিউজিল্যান্ড এই ফরম্যাটে এক নম্বর দল, তার ওপর নিজেদের মাটিতে খেলা। সবকিছু মিলে তাদের অবশ্যই বেশ খানিকটা এগিয়ে থাকার কথা। তবে খেলাটা টি-টোয়েন্টি বলেই বলব, বাংলাদেশের সুযোগ এখানে খুব একটা কম নেই। সাথে আমি একটা কথা বলব, এই ফরম্যাটে দুইটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ- ফিল্ডিং এবং রানিং বিটুইন দ্য উইকেট। এই দুই জায়গাতেই নিউজিল্যান্ড আমাদের চেয়ে এগিয়ে আছে।
উইকেট বা কন্ডিশন কেমন হতে পারে?
নেপিয়ারের এই মাঠে এর আগে ওয়ানডে হলেও টি-টোয়েন্টি খেলা হয়নি। খেলাটা হবে বিকেল বেলা, ওই সময় পিচ বেশ কিছুটা শুষ্ক থাকার কথা। টসে জিতলে অবশ্যই বাংলাদেশের আগে ব্যাটিং নেওয়া উচিত। তখন বড় রান করলে নিউজিল্যান্ডকে চাপে ফেলা যাবে।
ওয়ানডের হতাশা টি-টোয়েন্টিতে ভুলতে পারবে?
আমি অবশ্যই আশাবাদী, টি-টোয়েন্টিতে দল আবার ঘুরে দাঁড়াবে। এরাই কয়েক দিন আগে আমাদের অনেকবার আনন্দের উপলক্ষ এনে দিয়েছে। নতুন বছরে ওয়ানডের হতাশা ঝেড়ে ফেলেই আমাদের টি-টোয়েন্টিতে নামা উচিত। এই বছরটা এমনিতেও আমাদের জন্য অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। আমি মনে করি, সাকিব-তামিম-মাশরাফিদের কেউ জ্বলে উঠলেই টি-টোয়েন্টিতে আমাদের জয়ের খুব ভালো সুযোগ আছে।