৮৩ বছর বয়সী ওয়ান্ডার ওম্যানের কোর্টে ফেরা
বয়সটা মোটেও দৌড়ঝাঁপের নয়। সমবয়সীদের অনেকেই বেঁচে নেই। যারা বেঁচে আছেন তাদের দিনটা হয়তো নাতি নাতনিদের জন্য সোয়েটার বুনেই কেটে যায়। কিন্তু আর্জেন্টিনার অ্যানা ওবারিও সবার চেয়ে একটু আলাদা। তাঁর বেশিরভাগ সময়ই কাটে বাড়ির পাশের টেনিস কোর্টে। দাদির হাত ধরে দুই নাতি নিয়মিত আসে অনুশীলন দেখতে। ৮৩ বছর বয়সী অ্যানার জীবনের এখন একটাই লক্ষ্য, ‘টেনিস খেলোয়াড়’ হওয়ার অপূর্ণ স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়া।
‘স্বপ্ন’; ছোট্ট একটা শব্দ মানুষকে কতদূর নিয়ে যেতে পারে অ্যানা তাঁর জলজ্যান্ত প্রমাণ। ছোটবেলা থেকেই টেনিসের প্রতি তাঁর ভালোবাসা দেখে বাবা ভর্তি করিয়ে দিয়েছিলেন স্থানীয় টেনিস ক্লাবে। ধীরে ধীরে নিজের প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়ে জিতে নিয়েছিলেন যুব চ্যাম্পিয়নশিপও। স্বপ্ন ছিল, একদিন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আর্জেন্টিনার প্রতিনিধিত্ব করবেন।
কিন্তু বিধি বাম। ১৯৪৯ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সেই বিয়ের পিড়িতে বসতে হয়। বিয়ের পর স্বামীর আপত্তির কারণে নিজেকে টেনিস থেকে সরিয়ে নেন। তবে এতে কোন আফসোস নেই অ্যানার, “দ্বৈত ইভেন্টে অন্য ছেলেদের সাথে খেলাটা আমার স্বামী পছন্দ করতেন না। তাঁর মানা করার পর আমি আর কোর্টে নামিনি। এটা নিয়ে আমার আসলে কোন আফসোস নেই। অতীতে ফিরে যেতে পারলে হয়তো একই কাজ করতাম। বাচ্চাদের বড় করাই আমার প্রধান দায়িত্ব ছিল। টেনিসের জায়গা অবশ্যই এটার পরে।”
নিজের স্বপ্নকে জলাঞ্জলি দিয়ে পরের বছরগুলোতে ১০ সন্তানকে বড় করেছেন। কিন্তু এতকিছুর মাঝেও টেনিসকে ভুলতে পারেননি। কাজের ফাঁকে ফাঁকে টিভিতে খেলা দেখতেন, হয়তো নিজের কৈশোরের কথা ভেবে চোখে জলও চলে আসতো। ৬০ বছর বয়সে স্বামীকে হারান। একাকীত্বের সেসব দিনে কোর্টে ফেরার ইচ্ছাটাও আবার নিউরনে টোকা দেয়। সন্তানরা প্রথমে বারণ করেছিল, এই বৃদ্ধ বয়সে খেলতে গিয়ে হাড়গোড় ভাঙলে তো মহা বিপদ!
স্বামীর কথা শুনে নিজের ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়েছিলেন। তবে সন্তানদের কথা কানে নেননি। প্রতি সপ্তাহে ৩ দিন করে অনুশীলন করা শুরু করেন। এককালের চ্যাম্পিয়ন অ্যানা ধীরে ধীরে ফিরিয়ে আনতে শুরু করেন নিজের সোনালি দিনগুলো। এই বয়সে তাঁর খেলার ধরন দেখে মুগ্ধ ৬০ এর দশকের আর্জেন্টাইন টেনিস তারকা নরমা বেলন, “তিনি তাঁর সমবয়সীদের মাঝে সবচেয়ে স্টাইলিশ খেলোয়াড়। তাঁর খেলায় আমরা রীতিমতো মুগ্ধ!”
৫০ এর দশকের সাদা ক্যানভাস জুতা আর গেঞ্জি-স্কার্ট পরেই খেলতে নামেন অ্যানা। এসব নাকি তাকে নিজের ছেলেবেলার কথাই মনে করিয়ে দেয়, “নিজের জুতা বেঁধে কোর্টে নামার সময় আমি দারুণ অনুভব করি। মনে হয় যেন সেই ছেলেবেলায় ফিরে গিয়েছি!”
শুধু কোর্টে নেমেই ক্ষান্ত হননি। এরই মাঝে জিতে নিয়েছেন আর্জেন্টিনা সিনিয়র মাস্টার্সের শিরোপা। দুই মেয়ে এবং ছয় নাতিনাতনি ফাইনালের দিন খেলা দেখতে এসেছিলেন। হারলিংহাম ক্লের কোর্টে প্রায় এক ঘণ্টার লড়াইয়ে প্রতিপক্ষকে হারিয়ে নিজের স্বপ্নপূরণের যাত্রায় আরেকধাপ এগিয়ে গিয়েছিলেন সেদিন। সারা দেশের ১০০০ জন বৃদ্ধ খেলোয়াড়ের মাঝে তৃতীয় স্থানে থাকা অ্যানার পরবর্তী লক্ষ্য এই বছরের ফ্লোরিডাতে সিনিয়র চ্যাম্পিয়নশিপ জেতা।
অ্যানার ১৯ বছর বয়সী নাতি লুপকে তাঁর বন্ধুরা প্রায় জিজ্ঞাসা করে দাদির টেনিস খেলার ব্যাপারে।কীভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি, তাঁর সুস্বাস্থ্যের রহস্যই বা কী? লুপ মুকচি হেসে জবাব দেন, “আমার দাদি তো ‘ওয়ান্ডার ওম্যান’!”