দায়মোচনের পর ইতিহাস : এ শুধু বাংলাদেশের দিন!
ওয়েলিংটনের আকাশ সকাল থেকেই ঝকঝকে। মেঘের লেশমাত্র নেই, বৃষ্টি তো আরও দূরে। যার আড়ালে হারিয়ে গিয়েছিল গতকালের বেশীরভাগ খেলা। উইকেটের ঘাস একটু বিবর্ণ, জায়গায় জায়গায় শুধু দাগ একটু। বাতাসও কম। ব্যাটিংয়ের জন্য উপযুক্ত কন্ডিশন, অন্তত নিউজিল্যান্ডে ব্যাটিংয়ের জন্য এর চেয়ে উপযুক্ত কন্ডিশন আর কিইবা হতে পারে! হতে পারে না, কিন্তু এ সিরিজে বাংলাদেশ এমন সুযোগ হেলায় হারালো তো কতোবার! দিনের তৃতীয় ওভারেই মুমিনুল হক ফিরে গেলেন আজ, গতকালকের স্কোরের সাথে কোনো রান যোগ না করেই। উঁকি দিচ্ছিল কি আরেকটা ধ্বসের সম্ভাবনা?
সে সম্ভাবনাকে হেলায় উড়িয়ে দিয়েছেন দুইজন। সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। সে ওভারেই সাকিবের একটা বাউন্ডারি, দিনের প্রথম। মুশফিক এলেন, প্রথম স্কোরিং শটটাই বাউন্ডারি তাঁরও। সাকিব এরপর বাউন্ডারি মেরেছেন আরও ২৮টি, মুশফিক ২৩টি। এরপর থেকে যে শুধুই সাকিব-মুশফিকের গল্প। কিউই বোলিংয়ের ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার, রেকর্ডবুক ওলট-পালট করে দেয়ায়।
পঞ্চম উইকেটে ইতিহাসের চতুর্থ সর্বোচ্চ জুটি, বাংলাদেশের যে কোনো উইকেটে সর্বোচ্চ জুটি, নিউজিল্যান্ডের মাটিতে পঞ্চম উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটি। সাকিব থেমেছেন বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ স্কোর (২১৭) করে, মুশফিক নিজের তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের পর। এর আগেই তিন কিউই বোলারের ‘শতরান’ হয়ে গেছে, আগের ১১ টেস্টে যা ছিল শুধু ৫ জনের। টিম সাউদি দিয়েছেন ১৪৪, ট্রেন্ট বোল্ট ১২১, নেইল ওয়াগনার ১২৪।
দুজনই লাঞ্চে গিয়েছিলেন ফিফটি করে, বাংলাদেশের রান তখন ৪ উইকেটে ২৬৯। টি-ব্রেকের সময় দুজনেরই সেঞ্চুরি হয়ে গেছে, বাংলাদেশের রান ৩৯১, ৪ উইকেটেই। মুশফিকের উইকেটে ভেঙ্গেছে রেকর্ড ভাঙ্গার ৩৫৯ রানের জুটি। দিনের শেষ বলে মেহেদী হাসানের উইকেটে বাংলাদেশের রান ৫৪২, হাতে আছে ৩ উইকেট। অথচ এই বেসিন রিজার্ভে এর আগের চার ইনিংসে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান ছিল ১৪৩! আর নিউজিল্যান্ডে সব ভেন্যু মিলিয়ে ছিল ৪০৮, হ্যামিল্টনে। তবে ৪০৮-এর পর আর কোনো ৩০০ রানের স্কোরও ছিল না, ১১ ইনিংস মিলিয়ে।
কিন্তু আজ তো রেকর্ড-ভাঙ্গার দিন বেসিন রিজার্ভে। আজ দায়মোচনের দিন, সীমিত ওভারে হেলায় হারানো সুযোগের অপ্রাপ্তির খাতায় কিছু যোগ করার দিন। সেই কিছুটা শেষ পর্যন্ত অনেক কিছুতে গিয়েই তো দাঁড়ালো!