• নিউজিল্যান্ড-বাংলাদেশ
  • " />

     

    ড্রয়ের চিন্তা করা হবে আত্মঘাতী

    ড্রয়ের চিন্তা করা হবে আত্মঘাতী    

    দারুণ একটা দিন গেল বাংলাদেশের। কিন্তু সাকিব-মুশফিকদের কাছ থেকে এরকম কিছুই কি প্রত্যাশিত ছিল? বাংলাদেশের এই টেস্টে কৌশল কী হওয়া উচিত? উইকেট কি পরের তিন দিন এরকমই থাকবে? প্যাভিলিয়নে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল...


    সাকিব নিজের সেরাটা দেখিয়েছে 

    স্বপ্নের মত একটা দিন গেল। এই সিরিজে এই দিনের জন্যই আমরা অপেক্ষা করছিলাম। তামিম-মুমিনুলের শুরুর পরে এরচেয়ে ভালো দিন আমরা চাইতে পারতাম না। সাকিবের গায়ে পাকাপাকিভাবে সীমিত ওভারের ক্রিকেটারের একটা তকমা পড়ে যাচ্ছিল। কিন্তু আজ সে দেখিয়ে দিয়েছে, টেস্টেও আসলে বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার হওয়ার দাবি রাখে সে। তার স্ট্রোক, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, মুশফিককে সাথে করে নিয়ে এগিয়ে চলা, নিউজিল্যান্ডের বিধ্বংসী বোলিং অ্যাটাককে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া; সবকিছু মিলে সাকিব আজ নিজের সেরাটাই দেখিয়েছে। এখনো অবশ্য বোলিংয়ে অনেক কিছু করার ক্ষমতা আছে তার। আমি খুবই খুশি, শেষ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডে আমরা ওদের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছি। 

     

    ড্র করার চিন্তাই মাথায় রাখা যাবে না 
    আমি একটা কথা বলি, আমরা কিন্তু যখনই টেস্ট জয়ের জন্য নামি, তখনই জিততে পারি। কিন্তু ড্র করার উদ্দেশ্য নিয়ে নামলে আমরা বেশির ভাগ সময়ই হেরেছি। খেলার এই অবস্থা থেকে ড্র করার মানসিকতা নিয়ে নামাটা হবে পুরোপুরি আত্মঘাতী মানসিকতার পরিচায়ক। এই টেস্টে ড্র করার মানসিকতা থাকলে ক্রিকেট খেলাই উচিত নয়। এই মুহূর্তে এই টেস্টে বাংলাদেশ ড্রাইভিং সিটে। বেসিন রিজার্ভের উইকেট শেষ দুই দিনে স্পিন ধরবে। সেখানে সাকিব ও মিরাজ বড় একটা ভূমিকা রাখতে পারে। 


    প্রথম ইনিংসে যত বেশি সম্ভব রান করা উচিত
    প্রথম ইনিংসে আসলে যতটা সম্ভব বেশি রান করে নেওয়া উচিত। আমি বলব, কাল সাব্বিরের লক্ষ্য থাকা উচিত টেল এন্ডারদের নিয়ে আরো বেশকিছু রান করে স্বাগতিকদের ওপর চাপটা আরও বাড়িয়ে দেওয়া। চতুর্থ ইনিংসটা যত পরে ওদের খেলানো যায় আমাদের লাভ। এমনও হতে পারে, আমরা নিউজিল্যান্ডকে ফলো অনও করাতে পারি। এই মুহূর্তে আমাদের মাথায় শুধু ইতিবাচক চিন্তাই রাখতে হবে।


    এই ক্রিকেটই প্রত্যাশিত ছিল
    খুব সম্ভবত, বাংলাদেশ আজ টেস্টে এক দিনে নিজেদের সর্বোচ্চ রান করেছে। একটা ব্যাপার অবশ্যই বলতে হয়, এখানে অবদানটা কিন্তু মূলত দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ তিনজনের। আর সঙ্গে আছে মুমিনুল। তামিম-মুমিনুলদের দেখিয়ে দেওয়া পথেই কিন্তু সাকিব-মুশফিকরা এই চূড়ায় যেতে পেরেছে। আমি বলব, দলের অভিজ্ঞ তিনজনের কাছ থেকে এরকম কিছুই প্রত্যাশিত ছিল। তামিম-সাকিব-মুশফিক অনেক দিন ধরেই বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের স্তম্ভ; তাদের কাছ থেকে দল এরকম বড় কিছুই চায়। বরং এই তিনজন কেন নিয়মিত বিরতিতে বড় কিছু করতে পারছে না সেটাই অস্বাভাবিক। আর আমাদের নিয়মিত ভালো করাটাও খুবই অনুমিত। আমি বলব আজকের আত্মবিশ্বাস পরের টেস্টেও কাজে আসবে।

     

    সাকিব-মিরাজের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে
    যেকোনো টেস্ট ম্যাচে আসলে প্রথম দিনের কয়েক ঘন্টা একটু ব্যাটিং উপযোগী থাকে। বেসিন রিজার্ভে অবশ্য সেটাও ছিল না। এই উইকেটটা অনেকটা ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ডের উইকেটের কম্বিনেশনের মতো। এখানে তলাটা খুব শক্ত। আবার ওপরে ঘাস, যেটা আসলে ব্যাটসম্যানদের সাহায্য করছে। বরং আমি বলব, চতুর্থ ইনিংসে গিয়ে আমাদের তিন ফাস্ট বোলারের চেয়ে সাকিব ও মিরাজ অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে। আমাদের তিন ফাস্ট বোলার মাত্র দুইটি টেস্ট খেলেছে। তাদের কাছ থেকে খুব বড় কিছু আশা করাটা অনুচিত হবে। আমাদের স্পিনার দুজনেরই কিছু বল দুই দিকে মুভ করে। আমার মনে হয়, এই উইকেটে দুজনের বলই কার্যকরী হবে। ওরা দু'জন ভালো করলে আমরা ম্যাচও জিততে পারি। এখনও আসলে ম্যাচের অনেকটা বাকি। কালকেও উইকেট এরকমই থাকার কথা। এর পরের দিন থেকে হয়তো একটু স্পিন ধরবে। 


    সুযোগ কাজে লাগাতে হবে 
    সাকিব কিন্তু কালকে একটা সুযোগ দিয়েছিল। আজ সকালেও বেশ কয়েকবার বল ওদের স্লিপ কর্ডন দিয়ে গেছে। পরে টেলরও একটা ক্যাচ মিস করেছে পয়েন্টে। বড় ইনিংসে এরকম এক দুইটা ভাগ্য পাওয়া যেতেই পারে। আমি শুধু বলব, বাংলাদেশের ফিল্ডাররা মনে রাখুক, এখানে প্রতিটা সুযোগই কাজে লাগাতে হবে। সেটা হোক ক্যাচ, স্টাম্পিং কিংবা রান আউট।