• নিউজিল্যান্ড-বাংলাদেশ
  • " />

     

    যে ইমরুল কিপিংয়ের

    যে ইমরুল কিপিংয়ের    

    বোল্ডই হলেন মিচেল স্যান্টনার। স্ট্যাম্পের উপরের দিকে লেগে দিক পরিবর্তন করলো বলটা। ইমরুল ঝাঁপিয়ে পড়লেন ডানদিকে, ধরলেন বল। আবেদন করতে গিয়ে দেখেন, শুভাশীষ রায় উল্লাস শুরু করে দিয়েছেন। বল স্ট্যাম্পে লেগেছে, তাতে কী, ইমরুলে কাজ বল ধরা। ইমরুল বলটা ধরেছেন! ব্যাটে লাগার পর ধরেছেন, তাসকিন-শুভাশীষ-কামরুলের বাউন্সার, শর্ট বল ধরেছেন। সাকিব-মিরাজ-মাহমুদউল্লাহর স্পিন ‘সামলিয়েছেন’ বেশ দক্ষতায়। ওয়াটলিংয়ের আউটে যে দক্ষতা দেখিয়েছেন, রীতিমতো হিংসা করবেন সব পূর্ণকালীন উইকেটকিপাররাই!  

    ****


    লেগ স্ট্যাম্পের অনেক বাইরের বল। মাহমুদউল্লাহর দেয়া ‘ললিপপ’টা ঠিক কোনদিক দিয়ে বাউন্ডারি পাঠাবেন, বিজে ওয়াটলিং যেন সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলেন সেটাই। রীতিমতো ঘুরে গেলেন, শট খেলতে। পেছনে সরে গেলেন ইমরুল কায়েসও। ওয়াটলিং এভাবে মারবেন, অনুমান করেছিলেন যেন ঠিক সেটাই! শেষ মুহুর্তে বলের ওপর থেকে চোখ সরিয়ে নিলেন ইমরুল, তবে গ্লাভসজোড়া সরলো না জায়গা থেকে। ওয়াটলিংয়ের ব্যাট বলকে সীমানাছাড়া করতে পারলো না, আটকা পড়লো উইকেটে পেছনে ইমরুলের গ্লাভসেই। কে বলবেন, ইমরুল কায়েস খন্ডকালীন উইকেটকিপার, মুশফিকুর রহিমের চোটের কারণেই তাঁর এই দায়িত্ব!


    টেস্টে উইকেটকিপিংয়ের দায়িত্ব পালন অবশ্য ইমরুলের জন্য নতুন নয়। ২০১৫ সালে খুলনা টেস্টে প্রায় ১৩২ ওভার কিপিং করতে হয়েছিল তাঁকে, মুশফিকের চোটের কারণেই। তবে ইমরুল কিপিংয়ের পর সে টেস্টে যা করেছিলেন, তাতে তাঁর মাহাত্ম্য বেড়ে যায় আরও কয়েকগুণ। তামিম ইকবালের সঙ্গে গড়েছিলেন টেস্টে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের জুটি, ব্যাটিং করেছিলেন ৩৫১ মিনিট! এবারও নামলেন ওপেনিংয়েই, তবে খানিক বাদেই উঠে যেতে হলো মাংসপেশীতে টান পড়ায়। 

    ****


    ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের প্রথম উইকেটটাই এলো তাঁর হাত ধরে। কামরুলের বলে যুতসই শটটা খেলতে পারলেন না জিট রাভাল, এজ হয়ে বল গেল পেছনে। বুকের খানিকটা উঁচুতে মুখের সামনে ধরলেন ইমরুল, অর্থোডক্স পদ্ধতিতেই। উইকেটকিপার ইমরুল প্রথম পরীক্ষায় উৎরালেন ভালোভাবেই। এরপরের ক্যাচটা আরেকটু নীচুতে, কোমর উচ্চতায়। তাসকিন আহমেদের প্রথম টেস্ট উইকেট, কেন উইলিয়ামসন দিয়েছিলেন পেছনে ক্যাচ। তাসকিন উইকেটটা মনে রাখবেন, সঙ্গে হয়তো এটাও মনে পড়বে, ক্যাচটা ধরেছিলেন একজন ‘খন্ডকালীন’ উইকেটকিপার!
     

    একই অভিজ্ঞতা শুভাশীষেরও। ডি গ্র্যান্ডহোম আগের দুই বলের মেরেছিলেন চার-ছয়, এ বলেও ড্রাইভ করতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন পেছনে। এবারও কোনো ভুল হলো না ইমরুলের, বাঁদিকে ঝুলে পড়ে নীচু হয়ে নিলেন ক্যাচটা। শুভাশীষের উচ্ছ্বাসেও তাই ঘাটতি থাকলো না কোনো। ইমরুলের উচ্ছ্বাস হারিয়ে গেল সে উচ্ছ্বাসের মাঝেই।
     

    বুকসমান উচ্চতায় ক্যাচ হলো, কোমরসমান উচ্চতায় ক্যাচ নেয়া হলো, ক্যাচ নেয়া হলো নীচু হয়েও। অসাধারণ অনুমানক্ষমতার প্রদর্শনীও হয়ে গেল। বাকী থাকলো সবচেয়ে সহজটা। নেইল ওয়াগনার সেই সুযোগটা দিলেন, আসলে দিতে বাধ্য হলেন কামরুলের কারণে। বাউন্সারের নাকাল হয়ে যাওয়া কিউই টেইলএন্ডার পুল করতে গিয়ে আকাশে তুললেন বল। একটু এদিক ওদিক হয়ে গ্লাভসে পুরলেন ইমরুল কায়েস। খন্ডকালীন উইকেটকিপার হিসেবে সবচেয়ে বেশী ক্যাচের রেকর্ডটাও হয়ে গেল সঙ্গে সঙ্গেই!  

    ****

     

    ক্যাপ ওড়ে, হ্যাট ওড়ে, প্লাস্টিক ওড়ে। নড়েচড়ে যায় সাইটস্ক্রিন বা টেলিভিশন ক্যামেরা। ওয়েলিংটনে বাতাস আছে পৃথিবীর আর যে কোনো শহরের চেয়ে বেশী, বেসিন রিজার্ভের টেস্ট ম্যাচও বাতাসের কবল থেকে মুক্ত নয় তাই! ইমরুল কায়েসের ক্যাপটা বাতাসের চোটেই ছুটে গেল মাথা থেকে। ওদিকে ছুটেছে বল, ফাইন লেগে। কই থ্রো ধরার জন্য উইকেটের কাছে যাবেন, কায়েস প্রথমে ছুটলেন ক্যাপের পেছনে। একটু পরই যেন বলের কথা মনে পড়লো, ছুটলেন উইকেটের দিকে। ততক্ষণে মুমিনুল হক পৌঁছে গেছেন সেখানে, কিন্তু ফিল্ডার থ্রো করলেন কায়েসের কাছেই। ক্ষণিকের জন্য যেন ইমরুল মনে করিয়ে দিলেন, তিনি নিতান্তই ‘খন্ডকালীন উইকেটকিপার’।

     

    তা যতোই মনে করিয়ে দিন, এ ম্যাচের রেকর্ড মনে রাখবে অন্য ইমরুলকে। 

     

    যেমন মনে রাখবেন তাসকিন, শুভাশীষ।