শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে আইরিশদের জয়
নিঃসন্দেহে এবারের আসরের সবচেয়ে জমজমাট লড়াইটি উপহার দিল আয়ারল্যান্ড ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। ৯৯.২ ওভার খেলা হয়েছে, রান হয়েছে ৫৫৭, উইকেট পড়েছে ১৭টি- এই পরিসংখ্যানও হাড্ডাহাড্ডি লড়াইটা পুরোপুরি ফুটিয়ে তুলতে পারছে না। ম্যাচের শেষ ওভার পর্যন্ত নখ কামড়ানো উত্তেজনা ছড়িয়ে শেষমেশ অবশ্য হেরে গেছে আমিরাত, তবে পরপর দুই ম্যাচে ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলে ক্রিকেট বিশ্বের সমীহের দৃষ্টি কিন্তু কিছুটা হলেও আদায় করে নিয়েছে।
আয়ারল্যান্ডের সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় নিয়ে এ ম্যাচটার আগে অনেকেই সহজ জয় দেখছিলেন আইরিশদের। তবে ম্যাচের শেষ ওভারে জয়সূচক রান দুটো নিয়ে জর্জ ডকরেলের অতি উচ্ছ্বসিত উদযাপনটাই প্রমাণ করে কতটা সংগ্রাম করে ম্যাচটা জিততে হয়েছে তাদের।
টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের শুরুটা চমৎকার করেছিল আমিরাত। কোন উইকেট না হারিয়েই ৮ ওভারে ৪২ রান তুলে ফেলেন দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান আমজাদ আলি ও আন্দ্রে বেরেঙ্গার। অ্যালেক্স কুসাক ও পল স্টারলিং এসে আঁকড়ে ধরেন রানের চাকা। চাপ জেঁকে বসায় ছন্দপতন ঘটতে দেরী হল না। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়তে পড়তে এক পর্যায়ে তৌকিরের দলের স্কোর দাঁড়ায় ৬ উইকেটে ১৩১।
ঐ সময়টায় পুরো ৫০ ওভার তারা ব্যাট করতে পারবে কিনা, সন্দেহ হচ্ছিল। তবে কোণঠাসা অবস্থায় প্রতি-আক্রমণের পথ বেছে নেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঝড় তোলা শাইমান আনোয়ার। আমজাদ জাভেদকে নিয়ে ৭১ বলে গড়া ১০৭ রানের জুটিটা সপ্তম উইকেটে বিশ্বকাপ ইতিহাসেই সর্বোচ্চ। আরব আমিরাতের ওয়ানডে ইতিহাসে দ্বিতীয় ও বিশ্বকাপে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে সেঞ্চুরি তুলে নেন শাইমান। ৮৩ বলে ১০৬ রানের ইনিংসটায় ১০টি চার ও ১টি ছয়ের মার ছিল। মূলত তাঁর ব্যাটে ভর করেই পুরো ৫০ ওভার খেলে ৯ উইকেটে ২৭৮ রান জমা করতে সক্ষম হয় তাঁর দল, আমজাদ জাভেদ করেন ৩৫ বলে ৪২ রান।
আমিরাত মূলত হেরে গেছে তাদের ফিল্ডিং ব্যর্থতার কারণে। ক্যাচ পড়েছে দুটো, রানআউটের সুযোগ নষ্ট হয়েছে বেশ কয়েকটা। নইলে ব্যাট ও বল হাতে আইরিশদের সাথে সমানে সমানেই পাল্লা দিয়েছিল তারা। ম্যাচের শেষভাগে ঐ সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারলে হয়তো বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম জয় নিয়েই মাঠ ছাড়তে পারত মোহাম্মদ তৌকিরের দল। এগুলোর মধ্যে ৪৮তম ওভারের শেষ বলে অ্যালেক্স কুসাকের রানআউটের সুযোগটা এবং ৪৩তম ওভারের প্রথম বলে কেভিন ও’ব্রায়ানের দেয়া ক্যাচের সুযোগটা উল্লেখযোগ্য। সেই সময় ও’ব্রায়ানের রান ছিল ২৩।
কেভিন ও’ব্রায়ানের ‘ব্লাইন্ড হিটিং’টাকেও ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট বলা যায়। ৩৯তম ওভারে তিনি যখন উইকেটে আসেন, ওভারপ্রতি প্রায় ১০ রান প্রয়োজন তখন আইরিশদের। ২৫ বলে ৫০ করে তিনি ফিরে যাওয়ার সময় প্রয়োজনীয় রান তোলার হারটা নেমে আসে ৭-এ !
শুধু কেভিনের কথা বললে অবিচার করা হবে ম্যাচসেরা গ্যারি উইলসনের সাথে। ৯৭ রানে ৪ উইকেট পড়ার পর এসেছিলেন উইকেটে। ফিরে গেছেন দলকে জয়ের খুব কাছাকাছি পৌঁছে দিয়ে। ৬৯ বলে ৮০ রানের ইনিংসটা তাঁকে আরও বেশি তৃপ্তি দিত, যদি জিতিয়ে ফিরতে পারতেন দলকে। নিরপেক্ষ ক্রিকেট দর্শকেরা হয়তো খুশিই হয়েছেন ঐ সময় তাঁর আউটে। তিনি শেষ পর্যন্ত উইকেটে থাকলে কি অন্তিম লগ্নের সেই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো ম্যাচটাতে? ছবি-সৌজন্যঃগেটিইমেজেস