ব্যাটসম্যানের ঘাড়ের নিরাপত্তায় মুনির 'গর্জেট'!
অ্যাডিলেডের মাঠে শন অ্যাবটের বাউন্সার আঘাত হানলো ফিলিপ হিউজের ঘাড়ে; সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়া প্রতিভাবান ব্যাটসম্যানটি দু’ দিন মৃত্যুর সাথে চিরতরে পাড়ি জমালেন না ফেরার দেশে। শোকে মুহ্যমান হল ক্রিকেট দুনিয়া। অতি আবেগী কেউ কেউ বাউন্সার নিষিদ্ধ করার দাবী তুললেন। ক্রিকেটীয় বাস্তবতায় সেটার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলো। তবে হেলমেটের নিরাপত্তা বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে দ্বিমত হলেন না কেউই। কিন্তু ওই আওয়াজ তোলা পর্যন্তই। হিউজের মৃত্যুর পর পেরিয়ে গেছে তিন মাস। মাঠে ফিরেছে ক্রিকেট, চলছে ব্যাটবলের লড়াইয়ে সবচেয়ে বড় আসর বিশ্বকাপ। হেলমেটের নিরাপত্তা বৃদ্ধির বিষয়টি যেন সবাই বেমালুম ভুলে গেছে। হয়তো আরেকজন ফিলিপ হিউজ খবরের শিরোনাম না হওয়া পর্যন্ত...।
কিন্তু জন মুনি এই দলে নন। আইরিশ অলরাউন্ডারের ভাষায় ‘বিপজ্জনক’ খেলাটির সময় মাথার পিছনের উন্মুক্ত অংশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তাঁর হেলমেটকে তিনি দিয়েছেন বাড়তি সুরক্ষা। বিশেষ সুরক্ষা প্রদায়ক সেই হেলমেট পড়েই তিনি নেমেছিলেন আরব আমিরাতের বিপক্ষে ব্যাট করতে। মাত্র ৬ বল মোকাবেলায় ২ রান করার সুযোগ পেলেও এই স্বল্প সময়ে মুনি নজর কাড়েন ব্রিসবেনের গ্যালারি তথা টিভি পর্দার সামনে বসে থাকা কোটি দর্শকের।
ক্রিকইনফোর সাথে এক সাক্ষাৎকারে মুনি শোনাচ্ছিলেন তাঁর এই নতুন আবিষ্কারের পিছনের গল্প, “গত বছর ক্লাব ক্রিকেটের একটি ম্যাচ খেলার সময় আমার কাজিন মাথার পিছনে আঘাত পায়। তখনই আমার মধ্যে হেলমেট নিয়ে কাজ করার চিন্তাটা আসে। নভেম্বরে ফিলিপ হিউজ যখন অনুরূপ দুর্ঘটনায় পৃথিবীর মায়াই ত্যাগ করলো তখন আমার মনে হল আমাকে কিছু একটা করতেই হবে।”
“আয়ারল্যান্ডের হয়ে আমি ব্যাট করতে নামি নিচের দিকে। ওই সময়টায় আমাকে প্রচুর শর্ট বল মোকাবেলা করতে হয় এবং এসব বল প্রায়ই আমার মাথায় আঘাত করে। একজন ক্রিকেটার হিসেবে, একজন বাবা হিসেবে বিষয়টা আমার উদ্বেগ বাড়াতে থাকলো। এটা যে একটা বিপজ্জনক খেলা সেটা কেবল তখনই আমাদের মনে হয় যখন কিছু একটা ঘটে যায়।”
“আমার শ্বশুর একজন স্থপতি এবং হাতের কাজে তিনি খুবই দক্ষ। তাঁর সাথে কথা বলে এক বিকেলে কিছু কোট ঝোলানোর হ্যাঙ্গার নিয়ে বসে আমরা হেলমেটের নিরাপত্তা বাড়ানোর বিষয়টা চিন্তা করে ফেললাম। সে অনুযায়ী স্থানীয় একজন লোহার কারিগর দিয়ে কয়েকটা খসড়া বানিয়ে নিলাম। সে প্রচেষ্টার ফসলই আপনারা এখন দেখছেন।”
মুনি এর নাম দিয়েছেন ‘গর্জেট’ বা কণ্ঠহার, মধ্যযুগীয় যোদ্ধারা ঘাড়ের সুরক্ষায় যা ব্যবহার করতেন। ঠিক কিভাবে সুরক্ষা নিশ্চিত করছে গর্জেট? “হেলমেটের সামনে যেমন গ্রিল থাকে ঠিক তেমন একটা গ্রিল এর পিছন দিকে লাগিয়ে নেয়া। এর ফলে হয়তো হেলমেটের ওজন কিছুটা বেড়ে যায়, তবে সেটা সেভাবে অনুভূত হয় না। আপনি এটার সাথে একটা সাধারণ হেলমেট নিয়ে দুটো আলাদাভাবে মাথায় দিলেই সেটা বুঝতে পারবেন।”
মুনির এই হেলমেট এখনই সবাই ব্যবহার করতে পারছেন না। পরীক্ষানিরীক্ষার পর আইসিসির নীতিনির্ধারকদের তরফে স্বীকৃতি মিললেই কেবল এর সার্বজনীন ব্যবহার সম্ভব হবে। সেটার প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানালেন মুনি। সে জন্য তিন থেকে ছয় মাসের মতো লাগতে পারে বলে তাঁর ধারণা। এর মধ্যে বৈশ্বিক বিপণনের জন্য বড় কোন বানিজ্যিক সংস্থা বা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসবে - এটাই তাঁর প্রত্যাশা।