সমস্যাটা মানসিকতায়....
শ্রীলঙ্কার সাথে ম্যাচটাতে এনামুল যখন থিরিমান্নের ক্যাচটা ছাড়লেন, এরপর থেকে জুনিয়র খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষা কিভাবে পরিবর্তন হয়ে যেতে লাগলো, খেয়াল করেছিলেন? তারপর পড়া আরও দুটো ক্যাচ বা স্ট্যাম্পিংয়ের কথা বাদ দিন, ফিল্ডিংয়ে উদ্যমের অভাব বা অসহায় আত্মসমর্পণের একটা ভাব কিন্তু সাদা চোখেই ধরা পড়েছে। বলের দিকে তেড়ে এসে তুলেই আবার তীব্র গতির থ্রো দেখা গেছে কয়বার?
প্রতিপক্ষ ম্যাচের কর্তৃত্ব নিয়ে নিলে কিংবা গুরুত্বপূর্ণ কোন ক্যাচ মিস হয়ে গেলে এ ধরনের প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মধ্যে নতুন নয়। কোয়ার্টার ফাইনালে যাবার লক্ষ্য নিয়ে এগোনো মাশরাফি বাহিনীর জন্য সামনের তিনটি ম্যাচে সবচেয়ে চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়াবে এ ব্যাপারটাই। ম্যাচের পর মাশরাফি নিজেও স্বীকার করেছেন, হেরে যাওয়াতে একটা বড় ভূমিকা ছিল ফিল্ডিং ব্যর্থতার।
ক্রিকেটে ক্যাচ পড়তেই পারে, ম্যাচের কোন এক অংশে কর্তৃত্ব নিয়ে নিতে পারে প্রতিপক্ষ, তাই বলে হতাশা জেঁকে বসার সুযোগ করে দেয়ার তো কোন মানে নেই। ঐ সময়টায় বরং কর্তৃত্ব ফিরে পাবার লক্ষ্যে দ্বিগুণ উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। ফিল্ডিং কোচ রিচার্ড হ্যালসলও গতকাল মোটামুটি এমনটাই বললেন, “তরুণ খেলোয়াড়েরা দায়িত্ব ভারে নুয়ে পড়েছিল, এর পরিবর্তে তাদের উচিৎ সিনিয়রদের থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে কিভাবে ঘুরে দাঁড়ানো যায় শেখার চেষ্টা করা। কোন খেলোয়াড় ক্যাচ ফেলতেই পারে, রানআউটের সুযোগ নষ্ট হতেই পারে, আমাকে যেটা হতাশ করেছে তা হল সুযোগ ফস্কে যাবার পর তাদের প্রতিক্রিয়া।”
ব্যাপারটা এমন নয় যে, খেলোয়াড়দের ফিল্ডিংয়ের মানই এমন। আফগানিস্তান ম্যাচটাতে ফিরে যাই, প্রত্যেকটা খেলোয়াড় কি দারুণ ফিল্ডিং করেছিলেন সেদিন। গত জিম্বাবুয়ে সিরিজটা জুড়েও অসাধারন ফিল্ডিং নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছিলেন কিন্তু এই খেলোয়াড়গুলোই। সমস্যাটা আসলে মানসিকতায়। প্রতিপক্ষ চাপ প্রয়োগ করা শুরু করলে পাল্টা চাপ দেওয়াটা এখনও অভ্যাসে পরিণত করতে পারেননি তাঁরা। ফলে প্রায়ই পেয়ে বসছে বড় কোন প্রতিপক্ষ, হারার আগেই হেরে বসছে দল। ক্যাচ ফেলার পরের ব্যাপারটাও একই- একটা অপরাধবোধ মাথাচাড়া দেয়, ফলশ্রুতিতে মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন খেলোয়াড়েরা, বিশেষ করে তরুণদের ক্ষেত্রে এটা বেশি করে লক্ষণীয়।
অস্ট্রেলিয়া ম্যাচটা থেকে একটা পয়েন্ট পেয়ে যাবার পর কোয়ার্টার ফাইনালের দরজাটা এবার খুব কাছে মনে হচ্ছে টাইগারদের জন্যে। বাস্তবিক অর্থেই ইংল্যান্ডের চেয়ে বাংলাদেশের সম্ভাবনা এখন অনেকটা বেশি। পরবর্তী রাউন্ডে যেতে হলে সামনের সবকয়টা ম্যাচ কেবল জিতলেই চলবে না ইংলিশদের, প্রার্থনা করতে হবে স্কটল্যান্ড বা নিউজিল্যান্ডের সাথে বাংলাদেশ যেন হারে। অন্যদিকে সামনের তিনটা ম্যাচের যেকোনো দুটোতে জিতলেই নকআউট পর্বে চলে যাবে টাইগাররা, রানরেট বিবেচনার কোন প্রয়োজনই নেই। এহেন সমীকরণের মুখে দাঁড়িয়ে মানসিকতায় ঘাটতি যেন বড় কোন বিপর্যয় ডেকে না আনে, সেটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব এখন ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’-এর। ছবি-সৌজন্যঃবিসিবি