নেলসন নাম্বারঃ ক্রিকেটের জনপ্রিয়তম একটি কুসংস্কার
ডেভিড শেফার্ডকে মনে আছে? ১১১ কিংবা ২২২ রান হলে এক পা তুলে যিনি দাঁড়িয়ে থাকতেন কিংবা লাফাতে থাকতেন মাঠের মধ্যেই! ১১১ কে 'নেলসন নাম্বার' বলা হয়ে থাকে আঠারো শতকের এডমিরাল নেলসনের এক চোখ, এক হাত, এক পা হারানোর মিথের জন্য (যদিও ইতিহাস বলে, নেলসন এক পা কখনো হারাননি)।
এই 'নেলসন নাম্বার' ক্রিকেটের জনপ্রিয়তম কুসংস্কারের একটি; ধারণা করা হয় যে, এই স্কোরে পৌঁছালে খারাপ কিছু ঘটবে। ১১১ এর মতো ২২২-কে 'ডাবল নেলসন', ৩৩৩-কে 'ট্রিপল নেলসন' নাম্বার বলা হয়ে থাকে।
১১১-কে অনেকসময় ব্যাটসম্যানদের জন্য বিপজ্জনক সংখ্যা বলা হয়; কারণ অনেকেই ধারণা করতো, ক্রিকেটে ১১১ দিয়ে বেল ছাড়া তিনটি স্ট্যাম্পের প্রতীক বোঝানো হয়, যা ব্যাটসম্যানের দুর্ভাগ্য বয়ে আনে। অবশ্য কেবল ক্রিকেটে নয়, ব্যাংকাররাও এক পাউন্ড, এক শিলিং, এক পেনি-কে '১১১' বলে থাকেন কখনো।
এই নাম্বারে থাকার সময় শরীরের কোন অংশ মাটিতে না থাকলে এই দুর্ভাগ্য এড়ানো যায় বলে ধারণা করা হয়। এইজন্যই ডেভিড শেফার্ড এক পা তুলে দাঁড়িয়ে থাকতেন বা লাফাতে থাকতেন মাঠের মধ্যে এসময়। ডেভিড শেফার্ড যখন খেলোয়াড় ছিলেন, তখন থেকেই এই নিয়ম মেনে আসতেন; কয়েকজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছাড়া আর কেউ এই ব্যাপারে জানতো না। ১৯৮৫ সালে এজবাস্টন টেস্টে আম্পায়ার থাকার সময় ব্যাপারটা প্রথম নজরে আসে ক্রিকেটবোদ্ধাদের। বিখ্যাত ধারাভাষ্যকার ব্রায়ান জনস্টনকে একজন লিখে পাঠিয়েছিলো সেসময়, ''দেখেন, ১১১ রানে পৌঁছালে 'ইডিয়ট'-টা কি করে মাঠের মধ্যে''!
নব্বই দশকের 'ক্রিকেটার' ম্যাগাজিনের এক তথ্যে বের হয়ে আসে, নেলসন নাম্বারে আসলে খুব কমই উইকেটের পতন ঘটে, বরং 'শূন্য' রানে সবচে বেশি উইকেট পড়ে।
নিউজিল্যান্ডের 'নেলসন' নামে এক ক্রিকেট দল প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে ১৮৭৪ থেকে ১৮৯১ সাল পর্যন্ত খেলতো; তারা তাদের ১৮৭৪ সালের প্রথম ইনিংসে ও ১৮৯১ সালের শেষ ইনিংসে আশ্চর্যজনকভাবে ১১১ রানেই অল-আউট হয়েছিলো। দুইটি ম্যাচই ছিল ওয়েলিংটনের বিরুদ্ধে। নিউজিল্যান্ডের প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট তখন দুইদিনে শেষ হতো।১৮৭৪ সালের ২ মার্চের ম্যাচে 'নেলসন' দল খেলেছিলো ৫০ ওভার এবং ১৮৯১ সালের ২৭ ডিসেম্বর শেষ ম্যাচে অলআউট হতে তাদের লেগেছিল ৪১ ওভার। প্রথম ম্যাচটি হয়েছিল টাই আর শেষ ম্যাচটিতে তারা হেরেছিল ১ উইকেটে।
২০১১ সালের ১১ নভেম্বর (১১-১১-১১) কেপটাউন টেস্টে ১১টা ১১ মিনিটের সময় অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার ১১১ রান দরকার ছিল ম্যাচ জিততে। মাঠের দর্শকেরা এবং আম্পায়ার ইয়ান গোউল্ড ওই এক মিনিট এক পা তুলে দাঁড়িয়ে ছিলেন সেসময়।
এই কথা এখানে উল্লেখ্য যে, অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে '৮৭' নম্বরটিকে একই ভাবে 'শয়তানের সংখ্যা' হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অনেকে বলেন, ১০০ থেকে '১৩' রান কম, এইজন্য ৮৭-কে অপয়া বলা হয়। আবার অস্ট্রেলিয়ার একসময়ের অধিনায়ক ইয়ান জনসন একবার ঘরোয়া ক্রিকেটে ৮৭ রানে আউট হয়েছিলেন বলে কিংবা কেইথ মিলারের ভাষ্যমতে, ব্র্যাডম্যান একবার ৮৭ রানে আউট হয়েছিলেন বলে এই মিথের জন্ম হয়ে থাকতে পারে। অবশ্য পরে জানা যায়, ব্র্যাডম্যান আসলে সেদিন ৮৯ রানে আউট হয়েছিলেন; এমসিজি-র স্কোরার ভুলে দুই রান যোগ করেননি। কিন্তু '৮৭' রানের কুসংস্কারটি থেকে যায়। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বেশিরভাগ অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান ৮৭-র আশেপাশেই আউট হয়ে থাকেন।