তীরে এসে তরী ডোবা চলছেই
শন উইলিয়ামস তখন ৯৬ রানে, আর জিম্বাবুয়ের দরকার ২০ বলে ৩২ রান। কেভিন ও'ব্রায়েনের বলটি ডিপ মিড উইকেট দিয়ে উড়িয়ে মারলেন উইলিয়ামস। জন মুনি ঠিক বাউন্ডারি সীমানার সামনে বলটি তালুবন্দী করলেও ফিরে আসার সময় মনে হচ্ছিলো যেন দড়ি ছুঁয়ে গেছে মুনির পা। থার্ড আম্পায়ার অনেকক্ষণ দেখলেও ঠিক বোঝা যাচ্ছিলো না ব্যাপারটা। শেষ পর্যন্ত আউটের সিদ্ধান্তই বহাল থাকলো। ম্যাচটিও ঝুঁকে গেলো আইরিশদের দিকে।
গোটা ম্যাচে দল দুটোর মধ্যে পার্থক্য গড়ে দিয়েছে মূলত এ ঘটনাটাই, নইলে মোটামুটি একই ধারায় বইছিল দু’দলের ইনিংস। আয়ারল্যান্ডের হয়ে এড জয়েস ও অ্যান্ডি বালবির্নির জুটিটা(১৩৮) যে ভূমিকা রেখেছে, প্রায় একই ভূমিকা পালন করেছে জিম্বাবুয়ের পক্ষে ব্রেন্ডন টেলর ও শন উইলিয়ামসের পার্টনারশিপ(১৪৯)। আইরিশদের দেওয়া ৩৩২ রানের বিশাল লক্ষ্যটার উদ্দেশ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ৭৪ রানে ৪ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর এ জুটিটা শুধু ম্যাচেই ফেরায়নি জিম্বাবুয়ানদের, বিশ্বকাপে রান তাড়া করে জেতার নতুন রেকর্ড গড়ে জয়ের স্বপ্নও দেখাচ্ছিল। এমনকি ২২৩ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ১২১ রানে(৯১ বলে) টেলর ফিরে যাওয়ার পরও ম্লান হয়নি সে সম্ভাবনা, আশার প্রতীক হয়ে ছিলেন উইলিয়ামস। ক্রেইগ আরভিন ও রেজিস চাকাভাকে নিয়ে এক পর্যায়ে ৩০০ ছুঁইয়ে ফেললেন দলীয় সংগ্রহকে, ঠিক তখনই ঘটলো এ ঘটনা। এরপরও অবশ্য শেষ একটা চেষ্টা করেছিলেন ‘টেল এন্ডার’ তাওয়ান্দা মুপারিওয়া(৭ বলে ১৮), যাতে করে ২ উইকেট হাতে নিয়ে শেষ ওভারে লক্ষ্যটা দাঁড়ায় ৭ রানের। তবে স্নায়ুক্ষয়ী উত্তেজনাকর সে ম্যাচটাতে শেষ হাসি হাসে আয়ারল্যান্ডই, শেষ দুটো উইকেট তুলে নেয় ৩ বলের মধ্যেই।
জয়েস-বালবির্নির পার্টনারশিপটাই ছিল আইরিশদের ইনিংসের পুরোভাগে। ৭৯ রানের মাথায় দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে অধিনায়ক পোর্টারফিল্ড প্যাভিলিয়নে ফেরার পর জুটি বাঁধেন তাঁরা, যেটা বিচ্ছিন্ন হয় ২১৭ রানে গিয়ে। ব্যক্তিগত ১১২ রান করে এ সময় বিদায় নেন ম্যাচসেরা জয়েস। তবে বালবির্নি দলকে টেনে নিয়ে যান একেবারে শেষ ওভার পর্যন্ত। ৫০তম ওভারের প্রথম বলে রান আউট হওয়ার সময় তাঁর রান ছিল ৯৭।
কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার স্বপ্ন একপ্রকার শেষ হয়ে গিয়েছিল আগেই, এই হারের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবেই ছিটকে পড়ল জিম্বাবুয়ে। ভাগ্যটা তাদের এবার সত্যিই খারাপ, প্রায় প্রতিটা ম্যাচেই তীরে এসে তরী ডুবেছে। দিনশেষে এ ব্যাপারটাই হয়তো সবচেয়ে বড় আক্ষেপ হয়ে থাকবে তাদের জন্য। ছবি-সৌজন্যঃএএফপি