দায় কাঁধে নিলেন ডি ভিলিয়ার্স
বিশ্বকাপের আগে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা দলটা যেন আচমকাই খেই হারিয়ে ফেলেছে। বিশ্বকাপ তাঁদের চিরায়ত দুর্ভাগ্যের নাম বলেই কি? জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঘাম ঝরানো জয়ের পর ভারতের কাছে শোচনীয় পরাজয়ের লজ্জা; মাঝে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর আয়ারল্যান্ডকে চার শতাধিক রানের পাহাড়ে চাপা দিয়ে প্রোটিয়া শিবির যখন আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে করেছে তখনই আবার হোঁচট। বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২৩২ রানের মামুলি লক্ষ্যমাত্রা তাড়া করতে নেমে ২০২ রানেই গুটিয়ে গেলো আমলা, ডু প্লেসি, ডি ভিলিয়ার্স, মিলার, রুশোদের নিয়ে গড়া ব্যাটিং লাইন আপ!
অথচ দ. আফ্রিকার ইনিংসের শুরুর অনেকটা সময়ও এমন চিত্র কল্পনা করা যাচ্ছিল না। স্কোরবোর্ডে ৯ ওভার শেষে ১ উইকেটের বিনিময়ে তোলা ৬৭ রান প্রোটিয়াদের অনায়াস জয়ের সম্ভাবনাই জানান দিচ্ছিল। কিন্তু নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে শেষ পর্যন্ত ২৯ রানের পরাজয়! ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক ডি ভিলিয়ার্স হতাশাটুকু লুকোনোর কোন চেষ্টা করলেন না, “আরও একবার আমরা চাপের মুখে প্রয়োজনীয় জুটি গড়তে ব্যর্থ হলাম। আমরা তো আগেও এমন পরিস্থিততে ম্যাচ জিতেছি, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজ রাতে আমরা পারলাম না। খুবই হতাশাজনক।”
না চাইলেও গণমাধ্যমের প্রশ্নের মুখে ব্যর্থতার কারণ খুঁজতেই হল ক্যাপ্টেনকে। তবে সেটা প্রকাশে বেশ সাবধানীই থাকলেন ভিলিয়ার্স, “আমি কাউকে দোষারোপ করছি না। আমি এটাও বলছি না যে কারও সামর্থ্যের অভাব ছিল। আমার কেবল মনে হচ্ছে আমরা সময়মত জ্বলে উঠতে পারি নি।”
৭টি চার ও ৫টি ছক্কায় ৫৮ বলে ৭৭ রানের ইনিংস খেলে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছেন দলকে। তারপরও পরাজয়ের দায় নিজের কাঁধে তুলে নিলেন, “আমার জন্য মনে হয় এটা একটা সতর্ক বার্তা। আমার দায়িত্ব ছেলেদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যেটা আমি আজ করতে পারি নি। সুতরাং এর দায়ভার বোধহয় আমারই নেয়া উচিৎ।”
ডি ভিলিয়ার্স মনে করছেন তাঁর দল সামর্থ্যের পুরোটা দিয়ে খেলতে পারছে না, “আমার মনে হচ্ছে আমরা কোনকিছুই শতভাগ দিতে পারছি না। অনেকটা দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় গিয়ারে আটকে যাওয়া গাড়ির মতো। এভাবে ক্রিকেট খেলা জেতা যায় না, অন্তত চাপের মুখে বা বিশ্বকাপের মতো বড় আসরে।” গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচের আগে তাঁরা সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে আমিরাতের বিপক্ষে পঞ্চম গিয়ারেই মাঠে নামার চেষ্টা করবেন বলেও জানান ডি ভিলিয়ারস।
হতাশার ভিড়ে অবশ্য প্রতিপক্ষকে কৃতিত্ব দিতে ভুললেন না প্রোটিয়া অধিনায়ক, “তাঁরা আসলেই খুব ভালো বল করেছে। জেতার জন্য তাঁরা কতোটা মরিয়া ছিল সেটা মাইলখানেক দূর থেকেও বোধকরি বোঝা সম্ভব ছিল।”
ওদিকে বাজে শুরুর পর টানা তিন ম্যাচ জিতে ঘুরে দাঁড়ানো মিসবাহদের দলটাকে কোচ ওয়াকার ইউনুস তুলনা দিলেন ‘৯২ বিশ্বকাপজয়ী পাকিস্তান দলের সাথে, “বিশ্বকাপ মানেই চাপের খেলা আর আমাদের ১৯৯২-এর দলটা সে চাপ খুব ভালোভাবে মোকাবেলা করতে পেরেছিল। তাঁরাও প্রথম ম্যাচগুলো হেরে দারুণভাবে ফিরে এসেছিল। তাঁদের ভিতর বিশ্বাস ছিল, আমার মনে হচ্ছে সে বিশ্বাস আমাদের ড্রেসিং রুমেও আসতে শুরু করেছে। আমরা সামনে আরও ভালো করতে যাচ্ছি।”
৫টি করে ম্যাচ খেলে দক্ষিণ আফ্রিকা ও পাকিস্তান উভয় দলই জয় পেয়েছে ৩টি করে। শেষ আটে জায়গা নিশ্চিত করতে দু’ দলকেই শেষ ম্যাচ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তুলনামূলক দুর্বল প্রতিপক্ষ আরব আমিরাতের বিপক্ষে জিতে হয়তো নিশ্চিতভাবেই কোয়ার্টার ফাইনালে যাবে দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু ‘আন্ডারডগ’ আয়ারল্যান্ড ম্যাচ নিয়ে অতোটা নিশ্চিত থাকার সুযোগ নেই মিসবাহদের।