• " />

     

    সেই ন্যাসিওনালকে হারাল শ্যাপেকোয়েন্স

    সেই ন্যাসিওনালকে হারাল শ্যাপেকোয়েন্স    

    মাত্র পাঁচ মাস আগে কলম্বিয়ার এই ক্লাবের সাথে খেলতে গিয়েই ঘটেছিল সেই দূর্ঘটনা। মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় ক্লাবের ১৯ জন খেলোয়াড়, কর্মকর্তাসহ নিহত হন মোট ৭১ জন। গত ২৯ নভেম্বর ঘটে যাওয়া ফুটবল ইতিহাসের স্মরণকালের ভয়াবহতম ট্র্যাজেডির পর একরকম শূন্য থেকেই আবার যাত্রা শুরু করতে হয়েছে ব্রাজিলের ক্লাব শ্যাপেকোয়েন্সকে। রিকোপা  সুদামেরিকানার প্রথম লেগে সেই শ্যাপেকোয়েন্সই ২-১ গোলে হারিয়ে দিয়েছে অ্যাটলেটিকো ন্যাসিওনালকে। 

    লাতিন আমেরিকান ফুটবলের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ এই টুর্নামেন্টে প্রতিবছর মুখোমুখি হয় কোপা লিবার্তোদোরেস ও কোপা সুদামেরিকানা চ্যাম্পিয়নরা। উয়েফা সুপার কাপের আদলের সাথে এই ফরম্যাটের মিল খুঁজে পেতে পারেন আপনি। লিবার্তোদোরেস চ্যাম্পিয়ন অ্যাটলেটিকো ন্যাসিওনাল উঠেছিল সুদামেরিকানার ফাইনালেও। সেই ম্যাচে তাঁদের প্রতিপক্ষ ছিল শ্যাপেকোয়েন্স।

    বিমান দূর্ঘটনার পর ব্রাজিলিয়ান ক্লাবটির সম্মানে কোপা সুদামেরিকানা জয়ী হিসেবে শ্যাপোকোয়েন্সের নাম ঘোষণার অনুমতি চায় অ্যাটলেটিকো ন্যাসিওনাল। কনমিবলও সেই সিদ্ধান্তে সাড়া দেয়ায় শ্যাপেকোয়েন্সের ঘরেই যায় কোপা সুদামেরিকানার শিরোপা।

    কলম্বিয়ান ক্লাবের সেই মহৎ নিদর্শনের কৃতজ্ঞতা জানাতেও ভোলেনি ব্রাজিলের ক্লাবটি। ২ লাখ মানুষের শহর শ্যাপেকোতে পা রাখার পরই প্রতিপক্ষ ন্যাসিওনালের খেলোয়াড়দের নায়কের বেশে বরণ করে নেন ব্রাজিলিয়ানরা। আর্জেন্টিনার সীমানা ঘেষা ব্রাজিলের সবচেয়ে দক্ষিণের এই শহরের অ্যারেনা কোন্ডা স্টেডিয়ামেই মাত্র কয়েকদিন আগে ৫০ জনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল। শোক ভুলে সেখানেই আবার মাঠে নামল সেই দুই দল। 

    খেলায় ২৫ মিনিটেই এগিয়ে যায় স্বাগতিক শ্যাপেকোয়েন্স।  পেনাল্টি থেকে গোল করেন রেইনালদো। এরপর দ্বিতীয়ার্ধে সমতায় ফেরে ন্যাসিওনাল। প্রতিপক্ষের সমতায় ফেরা গোলও স্টেডিয়ামে উপস্থিত ২২ হাজার মানুষ উদযাপন করেন একইভাবে! ৭১ মিনিটে দূর্ঘটনায় নিহত ৭১ জনের স্মরণে গোটা স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শক দাঁড়িয়ে হাত তালি দিয়ে জানান দেন হারিয়ে যাওয়াদের কখনোই ভুলবেন না  তাঁরা। এর দুই মিনিট পরই শ্যাপেকোর হয়ে জয়সূচক গোল করেন লুইজ আন্তোনিও। 

    এই ম্যাচকে ঘিরে মাঠে এবং মাঠের বাইরে আগে থেকেই সৃষ্টি হয়েছিল আবেগঘন এক পরিবেশ। দূর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া শ্যাপেকোয়েন্স খেলোয়াডদের সাথে ম্যাচ দেখতে উপস্থিত হয়েছিলেন শহরের মেয়রও। সাথে ছিলেন কলম্বিয়ার মেডেলিনের মেয়র; যার শহরে ঘটেছিল মমর্মান্তিক সেই দূর্ঘটনা।  দুই মেয়রের কন্ঠেই ছিল ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার কথা। শ্যাপেকো মেয়র লুসিয়ানো বুলিগন মাঠে এসেছিলেন ন্যাসিওনালের জার্সি গায়ে জড়িয়ে। এসময় বেশ কয়েকবার চোখের জল মুছতেও দেখা গেছে তাঁকে। মেডিলিনের মেয়র ফ্রেডেরিকো গুতিয়েরেজ প্রতিপক্ষের দেয়া এমন সম্মানে আপ্লুত হয়ে বলেন "শ্যাপেকো এখন থেকে আমার নিজের ঘর। মারাত্মক ওই দূর্ঘটনাই আমাদের এক করেছে"।

    শ্রদ্ধা আর একে অন্যের প্রতি সহমর্মিতার এক বিরল নিদর্শন সৃষ্টি করল এই ম্যাচ। যেখানে হার-জিত ছাপিয়ে জয় হল ভালোবাসার। রিকোপা সুদামেরিকানার দ্বিতীয় লেগ হবে মেডিলিনে, আগামী মাসের ১১ তারিখ।