নকআউটের আগের নকআউট?
মাশরাফি বিন মর্তুজা বলছেন এটা বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসেরই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ! তাই নয় কি? দুঃসময়ে পড়া ইংল্যান্ডের বিপক্ষে স্রেফ একটা জয় টাইগারদের পৌঁছে দেবে স্বপ্নের কোয়ার্টার ফাইনালে, নক-আউট লড়াই হওয়ায় যেটা ২০০৭-এর দ্বিতীয় পর্ব থেকে ঢের আলাদা। দুনিয়াজোড়া ক্রিকেট কিংবদন্তীরা এই ম্যাচে বাংলাদেশকেই ফেভারিট মানছেন! ডেভিড লয়েড, জিওফ বয়কট, বব উইলসের মতো সাবেক ইংলিশ গ্রেটদেরও ধারণা এই মুহূর্তে বাংলাদেশের থেকে ইংল্যান্ডকে এগিয়ে রাখার কোন সুযোগ তো নেই-ই, ক্ষেত্রবিশেষে মরগান বাহিনী মাশরাফির দলের চেয়ে পিছিয়েই আছে বলেও বিশ্বাস তাঁদের। কিন্তু কারও মুখের কথায় যে জয় ধরা দেবে না সেটা বাংলাদেশ দলও বেশ ভালো করেই জানে। তবে অ্যাডিলেডের মাঠে নিজেদের সামর্থ্যের সবটুকু উজাড় করে দেয়া সম্ভব হলে জয়টা যে খুব কঠিন কিছু হবে না সেটাও কি বলা বাহুল্য নয়?
ফিরে দেখা...
এ পর্যন্ত ১৫ বার মুখোমুখিতে ইংল্যান্ডের জয় ১৩টিতে, বাংলাদেশ ২টিতে। তবে এ দু’ দলের দ্বৈরথে আগের মতো ইংল্যান্ডকে একতরফা ‘ফেভারিট’ মানার দিন হয়তো ফুরিয়েছে বলে! শেষ তিন লড়াইয়ের দুটোতেই জয়ী দল বাংলাদেশ। এর মধ্যে দ্বিতীয়টি যে গত বিশ্বকাপেই চট্টগ্রামের মাঠে রুদ্ধশ্বাস ২ উইকেটের ইংল্যান্ডবধ সেটা পাঠকদের মনে না থাকার কোন কারণ নেই। বিশ্বকাপের মাঠেও দু’ দলের সাক্ষাৎ আগামীকালের আগে ওটাই একমাত্র।
দুই শিবিরে এক ঝলক
ইংল্যান্ড
বিশ্বকাপের আগে আগে নতুন অধিনায়ক এউইন মরগ্যানের নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়ার অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল খেলা দলটা বিশ্বকাপে ভালো কিছুর প্রত্যাশাই হয়তো করছিল। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার কাছে বড় ব্যবধানে হেরে শুরু হওয়া অভিযানে নিউজিল্যান্ড আর শ্রীলংকার বিপক্ষে ম্যাচ দুটোতেও ক্ষণিকের জন্য জয়ের সম্ভাবনা জাগাতে পারে নি ইংলিশরা। মাঝে এক স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জয় নিয়ে পিটার মুরসের ছেলেদের সামনে এখন কোয়ার্টার ফাইনালের একটাই সমীকরণ, বাংলাদেশ আর আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাকি দুটো ম্যাচই জেতা। তাতেও সমাধান মিলবে এমনটা বলার কোন সুযোগ নেই। কাল বাংলাদেশ হেরে গেলেও নিজেদের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে দিলে মরগানদের ফিরতি ফ্লাইটে চড়ে বসা ছাড়া গতি নেই।
এমন পরিস্থিতিতে আগামীকালের ‘মাস্ট উইন’ ম্যাচের দল নিয়েও দ্বিধায় ইংল্যান্ড। পেসার নির্ভর বোলিং আক্রমণে ধার খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বিশ্বকাপের শুরু থেকেই। বাংলাদেশের বিপক্ষে তাই স্টিভেন ফিনকে বসিয়ে অফস্পিনার জেমস ট্রেডওয়েলকে নেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করছে টিম ম্যানেজমেন্ট।
ব্যাট হাতেও নিয়মিত রান পাচ্ছেন না প্রথম সারির ব্যাটসম্যানদের কেউই। সাবেক তারকাদের পরামর্শ মেনে হয়তো আগামীকালের একাদশে তিন নম্বর পজিশনে গ্যারি ব্যালেন্সের পরিবর্তে অ্যালেক্স হেলসকে নামানো হতে পারে।
বাংলাদেশ
স্পিনে দুর্বল ইংল্যান্ডকে ঘূর্ণি বলে কাবু করার মন্ত্রনা দিচ্ছেন অনেক বোদ্ধাই। আগামীকালের ম্যাচে সাকিবের সাথে একজন বাড়তি নিয়মিত স্পিনার নেয়ার চিন্তাভাবনার কথা জানিয়েছেন অধিনায়ক মাশরাফিও। সেক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা আর নতুন বলে দক্ষতা বিচারে আরাফাত সানিই হয়তো হবেন প্রথম পছন্দ, তবে কন্ডিশন বিবেচনায় তাইজুলকেও দেখা যেতে পারে।
কাঁধে চোট পেয়ে বিশ্বকাপ থেকেই ছিটকে পড়েছেন ওপেনার এনামুল হক। বদলি হিসেবে স্কোয়াডে যোগ দেয়া ইমরুল কায়েস আগামীকালের একাদশে ঠাই পাবেন কিনা সেটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আগের দুটো ম্যাচেই ব্যাট হাতে বড় সংগ্রহ (যথাক্রমে ৭৬ ও ৬০) গড়ে দলের জয়ে অবদান রেখেছিলেন। উল্লেখ করা প্রয়োজন ওই দুই ম্যাচেই বাংলাদেশ পক্ষে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক তিনিই ছিলেন, বিশ্বকাপের ম্যাচটিতে তো ম্যাচসেরাও নির্বাচিত হন।
স্কটল্যান্ডের ছুঁড়ে দেয়া ৩১৮ রান তাড়া করে জেতায় দলের আত্মবিশ্বাস প্রত্যাশিতভাবেই বাড়ার কথা। দলের ব্যাটিং লাইন আপে মাহমুদুল্লাহ, মুশফিক, সাকিবরা নিয়মিত রান পাচ্ছেন। গত দু’ ম্যাচেই ব্যাট হাতে দারুণ মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন সাব্বির রহমান। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৫ রানের বড় ইনিংস খেলে রানে ফিরেছেন ওপেনার তামিম ইকবালও।
উইকেটে এক নজর
প্রচুর রানের প্রত্যাশা করছেন ইংলিশ কোচ পিটার মুরস। তবে বাংলাদেশ ক্যাপ্টেনের বিশ্বাস ২৭০-৮০ রানই জেতার জন্য ‘যথেষ্ট ‘ সংগ্রহ হবে। প্রসঙ্গত, গত এক দশকে অ্যাডিলেড ওভাল তিন শতাধিক রান দেখেছে একবারই, চলতি বিশ্বকাপের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে। উইকেটে গতির অভাব পেসারদের জন্য সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। সব মিলিয়ে টস জেতা অধিনায়ক প্রথমে হয়তো ব্যাটিংই করতে চাইবেন।
উদ্ধৃতি
“প্রতিপক্ষ কে সেটা কোন বিষয় নয়। অবশ্যই এটা একটা চাপের ম্যাচ। তবে ছেলেরা আত্মবিশ্বাসী। যদি আমরা এটা জিততে পারি তবে দলের সবার জন্যই সেটা হবে দারুণ এক স্মৃতি।” - মাশরাফি বিন মর্তুজা, বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক।
“চাপ তো আছেই কারণ আমরা এখনও পর্যন্ত আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলতে পারি নি। তবে চাপ মোকাবেলা করা এবং চাপের মুখে খেলে যাওয়াটাই একজন আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ের ধর্ম। আমাদের ছেলেদের জন্য আগামীকাল সেটাই হবে চ্যালেঞ্জ।” - পিটার মুরস, ইংল্যান্ড দলের কোচ।