• আইসিসি বিশ্বকাপ ২০১৫
  • " />

     

    টিমটিমে আলো থেকে হাজার ভোল্টের ঔজ্জ্বল্যে

    টিমটিমে আলো থেকে হাজার ভোল্টের ঔজ্জ্বল্যে    

    ১৩৮ বলে ১০৩ রানের ইনিংসটা খেলে প্যাভিলিয়নে ফেরার সময়টাতেও হয়তো একটা চেনা অস্বস্তির বাতাবরণ ঘিরে রেখেছিল তাকে; দল হারলে না আবার পরাজয়ের কারণ হিসেবে তাঁকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেয়া হয়! ক্যারিয়ারের শুরু থেকে তো এ-ই দেখে আসছেন। প্রাপ্তিতে মাখা জয়গুলোতে নিজের কাজটা ঠিকমতো করেও সেরা পারফর্মারের আড়ালে ঢাকা পড়ে থাকেন, আর রেষারেষির কোন ম্যাচে হেরে যাবার পর প্রায়ই দেখা যায় আতসি কাচের নিচে চলে আসে তাঁর মন্থর ব্যাটিং। আর গত বছর ফর্মটা সাথে ছিল না বলে তো স্বজনপ্রীতির জোরে দলে আছেন- এমন কথাও শুনতে হয়েছে।

     

    স্বভাবতই বিষয়গুলো নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি তাঁকে হতেই হয়। লক্ষনীয় বিষয়, বিতর্কিত ব্যাপারগুলো নিয়ে কথা বলার সময় কখনোই আবেগের কোন বহিঃপ্রকাশ দেখা যায়না তাঁর মধ্যে। মাঠেও উচ্ছ্বাস বা হতাশার অভিব্যক্তি তুলে ধরাতে সব সময়ই একটু মিতব্যয়ী যে মাহমুদউল্লাহকে সচরাচর দেখে আমরা অভ্যস্ত, তাঁকে কিন্তু আজ দেখা যায়নি। আজ যাকে দেখা গেল, তিনি সেঞ্চুরি করে দর্শকদের উদ্দেশ্যে ‘উড়ন্ত চুমু’ ছুড়ে মারেন, ম্যাচশেষে পাগলের মত জড়িয়ে ধরেন সবাইকে।

     

     

    হবে নাই বা কেন, এ তো শুধু একটা সেঞ্চুরি নয়; টিমটিমে আলো থেকে চোখ ধাঁধানো ঔজ্জ্বল্যে প্রবেশ একজন ক্রিকেটারের, পার্শ্বনায়ক থেকে মূলনায়ক হবার এক অনবদ্য গল্প। বিশ্বকাপে বাংলাদেশীদের মধ্যে সর্বপ্রথম সেঞ্চুরি করবেন কে? এ প্রশ্নের উত্তরে কিছুদিন আগেও হয়তো আপনার সেরা তিন পছন্দের তালিকায় ছিলেন না তিনি। কেউ তাঁর নাম বলে থাকলে হয়তো ক্রিকেটজ্ঞান নিয়ে টিটকারিও শুনতে হয়েছে তাঁকে। নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পাবার পাশাপাশি এহেন সম্মান অর্জনের দিনে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ তো আকাশে উড়তেই পারেন।

     

    আর উপলক্ষটা এমন যে, নেহাত বেরসিক ব্যক্তির মনেও দোলা দিয়ে যাবে উন্মাদনা, আর রিয়াদ তো এ উপলক্ষের নায়কই। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রানের ইনিংসটাকে(১০৩) বলা যায় বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের মেরুদণ্ড। আর ম্যাচশেষে প্রমাণ হয়েছে, ইনিংসটাকে গড়তে কিছুটা বেশি সময় লেগে যাবার পরও এটাকে অবলম্বন করেই জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলতে পেরেছেন মাশরাফি, রুবেলরা। খেলা শেষ হওয়ার পর অবশ্য নিজের চেয়ে বোলারদেরই বেশি কৃতিত্ব দিলেন দল অন্তপ্রাণ মাহমুদুল্লাহ, পাশে দাঁড়ালেন শেষদিকে মহাগুরুত্বপূর্ণ ক্যাচ ফেলা সতীর্থ তামিম ইকবালের। পেছনে ফেলে আসা বাজে সময়টায় তিনি নিজেও এরকমটাই পেয়ে এসেছেন সতীর্থদের কাছ থেকে, সেরা সময়ে এসে সুদসমেতই ফেরত দিচ্ছেন তা। ছবি-সৌজন্যঃবিসিবি