• " />

     

    গিলির স্কোয়াশ বল চমক!

    গিলির স্কোয়াশ বল চমক!    

    বার্বাডোজের আকাশ ছেয়ে এসেছে অন্ধকারে। আম্পায়ার আলীম দার ও স্টিভ বাকনর ‘লাইট অফার’ করলেন শ্রীলঙ্কান দুই ব্যাটসম্যানকে। তাঁরা সেটা গ্রহণও করলেন। ফাইনাল শেষ। টানা তৃতীয়বার বিশ্বকাপ জিতে ইতিহাস গড়লো অস্ট্রেলিয়া। উল্লাসে মত্ত অস্ট্রেলিয়ানদের খানিক বাদেই আলীম দার বলে বসলেন, ‘ম্যাচ শেষ হয়নি এখনও!’ অধিনায়ক রিকি পন্টিং ভাবলেন, দার হয়তো মজা করছেন। তবে দার বা বাকনর তখন মজা করার অবস্থায় ছিলেন না। তৃতীয় আম্পায়ার রুডি কোয়ার্টজেন ও ম্যাচ রেফারি জেফ ক্রো বার্তা পাঠিয়েছেন, ম্যাচ শেষ করতে হবে সেদিনই, শেষ করতে হবে বলতে ডি-এল পদ্ধতিতে যে ৩৬ ওভার খেলা হওয়ার কথা, পূর্ণ করতে হবে সেটাই!

     

    বিশ্বকাপ ফাইনাল। ২০০৭। ব্রিজটাউন। মুখোমুখি অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কা। 

     

    বার্বাডোজের অন্ধকার বাড়ছে বৈ কমছে না তখন। দুই অধিনায়কের সঙ্গে কথা বলছেন আম্পায়াররা। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হলো, অস্ট্রেলিয়া বাকি ওভারগুলো স্পিনার দিয়ে করাবে, তবুও শেষ করতে হবে ওই তিন ওভার! পুরস্কার বিতরণীর মঞ্চ, বোর্ড একবার মাঠে ঢুকে পড়েছিল, ফেরত পাঠানো হয়েছে আবার। খেলাও শুরু হয়েছে পুনরায়। আঁধারের মাঝে চলছে বিশ্বকাপ ফাইনাল, চলছে নিয়মরক্ষার কাজ। সবাই জানেন, ম্যাচ শেষ। নিয়মও বলে তাই। শুধু জানেন না, সিদ্ধান্ত নেবেন যাঁরা, সেই পাঁচজন! চার আম্পায়ার ও একজন ম্যাচ রেফারি। 

     

    শেষের এই ঘটনাটা ভুলে যেতে পারেন চাইলেই। আঁধারকে মনে রেখেই বা কী লাভ! ভুলতে সাহায্য করতে পারে একটা ইনিংস। সেদিন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট যে আলোর ফোয়ারা ছুটিয়েছিলেন কেনসিংটন ওভালে! বিশ্বকাপ ফাইনালের সর্বোচ্চ সেই ইনিংসের পেছনে ছিল একটা স্কোয়াশ বলের চমক!


     

    এমনিতেই ব্যাট-গ্রিপিংয়ের ধরনটা আলাদা ছিল গিলক্রিস্টের। শট খেলতে গেলে ব্যাটের হাতলটা ঘুরে যেতো হাতের মাঝেই। নীচের হাত বা বটম হ্যান্ডের গ্রিপটা একটু আলগাই ছিল গিলির। সেই বিশ্বকাপের আগে থেকেই, প্রায় বছর দশেক ধরে এই গ্রিপ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে গিলক্রিস্ট ব্যবহার করতেন একটা স্কোয়াশ বল। একটা ডেলার মতো কাজ করতো সেটা, হাতল থেকে একটু ওপরে নিয়ে হাত রাখলেও সমস্যা হতো না। গ্রিপিং হয়ে যেতো ‘ভি’ ধরনের। গিলি অনুশীলনেই ব্যবহার করতেন, তবে ম্যাচে কোনোদিন চেষ্টা করে দেখেননি।

     

     

    গিলক্রিস্টের ব্যক্তিগত কোচ ছিলেন বব মিউলমেন। পার্থের এই কোচের শরণাপন্ন প্রায়ই হতেন গিলি। সেই ববই বলেছিলেন, অনুশীলনে যদি স্কোয়াশ বল ব্যবহার করেন, ম্যাচে কেন নয়! কুইন্সল্যান্ডের সঙ্গে একটা ম্যাচে ব্যবহার করে গিলি সেঞ্চুরিও পেলেন। কদিন বাদেই বিশ্বকাপ, বব সেখানেও স্কোয়াশ বল টোটকাটা কাজে লাগাতে বললেন গিলিকে। এটাও বললেন, ‘যদি ব্যবহার করোই, এটা নিশ্চিত করো, ফাইনালে যাতে একটা সেঞ্চুরি আসে।’

     

    এক স্কোয়াশ সেন্টারে গিয়ে ছয়টা একটু পুরোনো ধাঁচের স্কোয়াশ বল এনে দিলেন বব। গিলক্রিস্ট ছুটলেন বিশ্বকাপ পানে।

     

    কিসের সাফল্য, বিশ্বকাপের প্রথম ছয় ম্যাচ মিলিয়ে গিলক্রিস্ট করলেন একটা মাত্র ফিফটি। হতাশ হয়ে সেমিফাইনালে নামলেন স্কোয়াশ বল ছাড়াই। দ্বিতীয় বলেই আউট, গিলক্রিস্ট তখনোই সিদ্ধান্ত নিলেন, ফাইনালে উঠলে আবার ব্যবহার করবেন সেই স্কোয়াশ বল। ঠিক ঠিক ফাইনালেই উঠলো অস্ট্রেলিয়া। স্কোয়াশ বলের শেষ ঝলকটা দেখানো বাকি গিলক্রিস্টের। আর বব মিউলমেনের সেই কথাটা, ‘ফাইনালে একটা সেঞ্চুরি করো’।

     

    চামিন্দা ভাসকে ফাইন লেগ দিয়ে চার মেরে শুরু। গিলক্রিস্ট এরপর শ্রীলঙ্কান বোলারদের যেন কঠিন কোনো জবাব দিতে নেমেছিলেন। মেঘাচ্ছন্ন আকাশে বিদ্যুত হয়তো চমকালো খানিকটা, তবে গিলির পুমা ব্যাট যে চমকটা দিল, সেটা কি সহসাই ভোলার মতো!

     

    ৮টা ছয়, ১৩টা চার। ১০৪ বল। ১৪৯ রান। রিকি পন্টিংয়ের মতে, এদিন সব বলই ব্যাটের মাঝ বরাবর লাগিয়েছিলেন গিলক্রিস্ট। শুধু বিশ্বকাপের কেন, ওয়ানডে ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা এক ইনিংস সেদিন খেললেন গিলক্রিস্ট।

     

    সেঞ্চুরির পর উদযাপনে এক হাতে দিয়ে আরেক হাতের গ্লাভসের দিকে ইঙ্গিত করছিলেন। তাঁর বাঁ হাতের গ্লাভসের ভেতরেই তো ছিল সেই স্কোয়াশ বল।

     

    সেই বিখ্যাত স্কোয়াশ বল।