কোন ইতিহাস বদলাবে অকল্যান্ড?
সেমিফাইনাল বলতেই বুঝি দক্ষিণ আফ্রিকানদের স্মৃতিতে ভেসে ওঠে দেড় দশক আগের এক দুঃস্বপ্ন! তিন বলে ১ রান দূরে ফাইনাল, হাতে ১ উইকেট! ল্যান্স ক্লুজনার আর অ্যালান ডোনাল্ডের ভুল বোঝাবুঝি...স্ট্যাম্প উপড়ে দিয়ে অজিদের উল্লাস! বাকিটা এক করুণ ইতিহাসের অংশবিশেষ মাত্র। ‘নক-আউট’ লড়াইয়ে বারবার হেরে ‘চোকার’ বনে যাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা এবার নক-আউট জিতেই উঠে এসেছে সেমিফাইনালে।
এ এক স্বপ্নের সেমিফাইনালই বটে! বছরের পর বছর দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেও বিশ্বকাপ ফাইনালের মুখ না দেখা দুটো দলের একটি কাল নিশ্চিত করবে মেলবোর্নের টিকিট। এর আগে ছয় ছয়বার সেমিফাইনাল খেলেও ফাইনালে পৌঁছা হয় নি নিউজিল্যান্ডের। বিপরীতে ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপ অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত তিনবার শেষ চারের লড়াই থেকে ফিরে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।
চলতি বিশ্বকাপেই প্রথমবারের মতো ‘নক-আউট’ জয়ের স্বাদ নেয়া প্রোটিয়া অধিনায়ক যখন দুই ম্যাচ দূরে শিরোপা দেখছেন, কিউই কাপ্তান তখন নিউজিল্যান্ডবাসীকে খোলা চিঠি পাঠাচ্ছেন কাল ইডেন পার্কে তাঁদেরকে ইতিহাস লিখতে সাহায্য করার জন্য! হ্যাঁ ঘরের মাঠ, এই একটি জায়গায় কাল ডি ভিলিয়ার্সদের চেয়ে একটু হলেও এগিয়ে থাকবেন ম্যাককালামরা। সেটা জেনেও ভিলিয়ার্সের দাবী নিজেদের সেরাটা খেলতে পারলে এবার তাঁদের রুখবার সামর্থ্য কারও নেই! সামর্থ্যের প্রমাণটা না হয় মাঠেই হোক! অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে প্রথম সেমিফাইনাল ম্যাচটি শুরু হবে আগামীকাল বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টায়।
যেভাবে শেষ চারে
গ্রুপ পর্বের সবক’টি ম্যাচ জিতে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবেই নক-আউট পর্বে উন্নীত হয় নিউজিল্যান্ড। একাধারে শ্রীলংকা, স্কটল্যান্ড, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৪৩ রানের বিশাল ব্যবধানে উড়িয়ে শেষ চার নিশ্চিত করে কিউইরা। বিপরীতে গ্রুপ পর্বে জিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আয়ারল্যান্ড ও আরব আমিরাতের বিপক্ষে জিতলেও ভারত ও পাকিস্তানের কাছে হেরে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। গ্রুপ রানার আপ হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনালে শ্রীলংকার বিপক্ষে ৯ উইকেটের এক সহজ জয়ে ভিলিয়ার্স বাহিনী এখন সেমিফাইনালে।
ফিরে দেখা...
এ যাবতকালে ৬১টি মুখোমুখি লড়াইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় ৩৬টিতে, নিউজিল্যান্ডের ২০টিতে, আর ৫টি ম্যাচ পরিত্যাক্ত হয়। বিশ্বকাপের মাঠে কিউইরা জিতেছে ৪ বার, প্রোটিয়ারা ২ বার। গত বিশ্বকাপের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৮টি দ্বৈরথে ভিলিয়ার্সদের জয় ৬টিতে, ম্যাককালামদের ২টিতে।
দুই শিবিরে এক ঝলক
দক্ষিণ আফ্রিকা
অকল্যান্ডের উইকেট বিবেচনায় রেখেই হয়তো প্রোটিয়াদের পুরো বোলিং আক্রমণ শুধু পেসারদের দিয়েই সাজানোর পরামর্শ দিয়েছেন সাবেক অসি অধিনায়ক রিকি পন্টিং। দলটির সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি স্পিনার ইমরান তাহিরকেও তাই কাল বসিয়ে রাখার পরামর্শ তাঁর।
ইডেন পার্কের গতিময় উইকেটে কাল গর্জাবে কি 'স্টেইন-গান'?
তবে ভিলিয়ার্সরা সে পথে হাটবেন কিনা তা ম্যাচ শুরুর আগে বলা যাচ্ছে না। আপাতত প্রোটিয়া শিবিরে সিদ্ধান্তহীনতার কারণ হতে পারে ভারনন ফিল্যান্ডার না কাইল অ্যাবট, কাকে রাখা হবে প্রথম একাদশে। চোটের কারণে গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচে ফিল্যান্ডারের বদলি হিসেবে ঠাই পান অ্যাবট। সুযোগটা কাজে লাগাতেও ভুল করেন নি। কোয়ার্টার ফাইনালসহ এই আসরে খেলা চার ম্যাচ থেকে তুলে নিয়েছেন ৯ উইকেট। তবে ফিল্যান্ডারের ব্যাটিং সামর্থ্যটা প্রাধান্য পেলে কাল তাঁকেই দেখা যেতে পারে একাদশে।
নিউজিল্যান্ড
বিগ ম্যাচের আগে অনুশীলনে বেশ ফুরফুরেই দেখা গেলো ব্ল্যাকক্যাপদের
গোড়ালিতে চোট নিয়ে সেমি ফাইনালের আগেই বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেছে পেসার অ্যাডাম মিলনের। তাঁর জায়গায় স্কোয়াডে ডাক পাওয়া ম্যাট হেনরিকে হুট করে কাল মাঠে নামিয়ে দেয়া হবে কিনা বলা কঠিন। নিউজিল্যান্ডের হাতে মিলনের অপর দুই বিকল্প কাইল মিলস ও মিচেল ম্যাকলেনাগান।
আবারও ‘লো স্কোরিং’ ম্যাচ?
চলতি বিশ্বকাপে এই অকল্যান্ডেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১ উইকেটের রুদ্ধশ্বাস জয় পেয়েছিল নিউজিল্যান্ড। অজিদের ১৫১ রান তাড়া করতে গিয়েই ৯ উইকেট খুইয়ে বসে কিউইরা। এরপর বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২৩২ রানের সহজ লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ২০২ রানে গুটিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস। সর্বশেষ ভারত-জিম্বাবুয়ে ম্যাচটিতেই কেবল ব্যাটসম্যানদের প্রাধান্য দেখা গেছে ইডেন পার্কে।
কালও গতিময়, বাউন্সি উইকেটেই খেলা গড়ানোর সম্ভাবনা প্রবল। তেমন কিছু হলে লড়াইটা হয়ে যাবে টিম সাউদি-ট্রেন্ট বোল্ট-কোরি অ্যান্ডারসনদের সাথে ডেল স্টেইন-মরনে মরকেল-ফিল্যান্ডার/অ্যাবটদের। দুর্ধর্ষ পেস আক্রমণের সামনে টিকে থাকার লড়াইটা অবশ্য হবে ম্যাককালামদের সাথে ভিলিয়ার্সদেরও।
দলপতিদের বয়ানে,
“বিশ্বকাপের মাঠে আমরা অনেক বাজে সময় পার করে এসেছি। এখন সময় উজ্জীবিত থাকার। প্রবল উত্তেজনা নিয়েই আগামীকালের জন্য অপেক্ষা করছি।” - এবি ডি ভিলিয়ার্স, দক্ষিন আফ্রিকা।
“দুর্দান্ত ক্রিকেট খেলেই আমরা এতদূর এসেছি। চাপের মুখে ভেঙে পড়ার আর সুযোগ নেই। সেরা হবার সবচেয়ে বড় সুযোগটাই এখন আমাদের সামনে।” ব্র্যান্ডন ম্যাককালাম, নিউজিল্যান্ড।