কেমন হবে সিডনির উইকেট?
মেঘচ্ছন্ন আকাশ থেকে থেমে থেমেই ঝরছে গুড়ি বৃষ্টি। আকাশের গুমোট ভাবটুকু যেন গ্রাস করে নিয়েছে পুরো সিডনি শহরটাকেই। রাত পোহালে যেখানে ক্রিকেট বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনাল, সেখানে উৎসবের আমেজ কোথায়? তাসমান সাগর তীরের সবচেয়ে জনবহুল শহরটিতে কাল ভারতের বিপক্ষে সপ্তম বারের মতো ফাইনালের ওঠার লড়াইয়ে নামবে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। অথচ সেই ম্যাচেও কিনা দর্শক নিয়ে ভাবতে হচ্ছে অজিদের? ৪৫ হাজার ধারণ ক্ষমতার এসসিজি গ্যালারীর অধিকাংশ টিকিটই ভারতীয় সমর্থকদের দখলে চলে গেছে বলে জোর গুঞ্জন! সেটা জেনেই কিনা স্বয়ং অজি কোচ সিডনিবাসীকে আহ্বান জানাচ্ছেন মাঠে পতাকাসমেত এসে দলকে জোর সমর্থন জানাতে!
তবে গ্যালারীর চেয়েও দু’ দলের থিংক ট্যাঙ্কে এই মুহূর্তে আরও বড় চিন্তার নাম এসসিজির পিচ। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবরের সারমর্ম করলে দাঁড়ায়, পিচ নিয়ে বিস্তর গবেষণাই চলছে উভয় শিবিরে। তবে ম্যাচের আগে বেশীরভাগ সময়ই আচ্ছাদনের নীচে থাকা ২২ গজের ওই মঞ্চ প্রস্তুতের ভার যার হাতে, এসসিজির কিউরেটর সেই টম পার্কার অবশ্য কথাবার্তায় বেশ হিসেবিই। পিচের প্রসঙ্গ উঠলে তো ভদ্রলোক মুখে রীতিমতো কুলুপ এঁটে বসেন!
শোনা যায়, খোদ অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট বোর্ডের পছন্দ-অপছন্দও তাঁর কাছে গুরুত্বহীন। পিচটা একপ্রকার নিজের মতো করেই বানান ভদ্রলোক। তবে টুর্নামেন্টটা যেহেতু আইসিসির, ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রধান পিচ বিশেষজ্ঞ অ্যান্ডি অ্যাটকিনসনও তাই পরখ করছেন বৃহস্পতিবারের ভেন্যু। কিন্তু যাই হোক, স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর ভাষ্য অনুসারে পিচের ব্যাপারে সর্বশেষ সিদ্ধান্তটা পার্কারই নেবেন।
এসসিজিতে উইকেটের পাশে কিউরেটর টম পার্কারের সাথে আইসিসির পিচ বিশেষজ্ঞ
আইসিসির নিয়ম অনুসারে পিচের ব্যাপারে ম্যাচের আগে আনুষ্ঠানিকভাবে কথা বলার নিয়ম এমনিতেও নেই। ভারতীয় সাংবাদিকরা অবশ্য এরপরও পার্কারের ভাষ্য নেয়ার চেষ্টা করে বিফলই হয়েছেন। তবে গণমাধ্যমরেই খবর, ঘনিষ্ঠজনদের সাথে আলাপচারিতায় পার্কার ‘গতানুগতিক’ এসসিজি উইকেটের আভাসই দিয়েছেন।
কেমন সেই ‘গতানুগতিক’ উইকেট? গোটা ক্রিকেট বিশ্বেই মোটামুটি প্রবাদের পর্যায়ে চলে যাওয়া ভাষ্যটি হচ্ছে, অস্ট্রেলিয়ার গতিময়, বাউন্সি, পেস সহায়ক উইকেটগুলোর ভিড়ে এই সিডনিই কেবল স্পিনসহায়ক। চলতি বিশ্বকাপের ম্যাচগুলোর দিকে ফিরে তাকালেও অমন মন্তব্যের আংশিক সত্যতা মেলে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এই মাঠেই ৫ উইকেট নেন দক্ষিণ আফ্রিকার লেগ স্পিনার ইমরান তাহির। সেই তাহিরই কোয়ার্টার ফাইনালে শ্রীলংকার ব্যাটিং ধ্বসিয়ে দেন ৪ উইকেট নিয়ে। সেদিন আবার হ্যাট্রিকও করে বসেন আরেক প্রোটিয়া স্পিনার জেপি ডুমিনি।
অবশ্য মাঝের অস্ট্রেলিয়া-শ্রীলংকা ম্যাচে রানের বন্যাই বয়ে গিয়েছিল এসসিজিতে। অস্ট্রেলিয়ার ৩৭৬ রানের জবাবে শ্রীলংকার সংগ্রহ ছিল ৩১২।
আগামীকালের সেমিফাইনালে তাহলে কোন উইকেটের দেখা মিলবে? অজি কোচ ড্যারেন ল্যামেনের প্রত্যাশা শ্রীলংকা ম্যাচের অনুরূপ উইকেটই কাল পাবেন তাঁরা। সোমবার পিচে হালকা ঘাসের আবরণ দেখে যদি কেউ ভেবে বসেন ল্যামেনের চাওয়াই পূরণ হতে যাচ্ছে, তবে উইকেটের পাশে দাঁড়িয়ে অজি ক্যাপ্টেন মাইকেল ক্লার্কের ভুরু কুঁচকানো বলছে শুকনো পিচে ‘প্রত্যাশিত’ কিছু তিনি অন্তত পাচ্ছেন না!
সর্বশেষ খবর বলছে ন্যাড়া উইকেটই বানানোর প্রস্তুতি চলছে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে। থেমে থেমে বৃষ্টির দমক আর পিচের উপর রোলারের নিয়মিত চালনায় সেটা হয়তো আগামীকালের ম্যাচে ঘূর্ণি বলের সহায়কই হয়ে দাঁড়াবে। সেক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন যাত্রায় বড় হুমকিই হয়ে দাঁড়াতে পারে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী স্পিন আক্রমণের ভারতীয় বোলিং লাইন আপ!
অজি ওপেনার অ্যারণ ফিঞ্চ অবশ্য এসব পূর্বানুমানে বিশ্বাসী হতে চাইছেন না। সোমবার দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তাঁর ভাষ্য ছিল, “শেষ যে ম্যাচটা এখানে খেলেছি সেটার আগেও মনে হচ্ছিল বল ঘুরবে। কিন্তু তেমন কিছু হয় নি। খেলার এখনও দু’ দিন বাকি, এখনই পিচের ব্যাপারে কিছু বলা কঠিন। দু’ দিনে উইকেট অনেক বদলে যেতে পারে, বিশেষ করে সিডনিতে।”