• আইসিসি বিশ্বকাপ ২০১৫
  • " />

     

    সাবলীল স্মিথের সিডনি জয়

    সাবলীল স্মিথের সিডনি জয়    

    ভারতীয় ইনিংসে ৩৭তম ওভারের খেলা চলছে। মিচেল স্টার্কের লেন্থ ডেলিভারি আজিঙ্কা রাহানের ব্যাটের উপর দিয়ে উইকেটরক্ষক ব্র্যাড হাডিনের গ্লাভসে। স্লিপ থেকে ক্যাপ্টেন মাইকেল ক্লার্ক কিছুটা লাফিয়ে উঠলেও বাকিদের মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো না। বোলার স্টার্কও ফিরে যেতে লাগলেন পরবর্তী বলটি করতে। কিন্তু দৌড়ে এলেন একজন ফিল্ডার, তাঁর জোর সন্দেহের বশেই ডেলিভারিটা ‘রিভিউ’ চাইলো অস্ট্রেলিয়া দল। তাতে দেখা গেলো রাহানের ব্যাটের উপর দিয়ে নয়, কানা ছুঁয়েই বলটি হাডিনের গ্লাভসে জমা পড়ে!

     

     

    দলীয় ১৭৮ রানের মাথায় পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে রাহানের ওই উইকেটটি ম্যাচে ভারতের টিকে থাকার শেষ আশাটুকুও কার্যত শেষ করে দেয়। ‘শেষ’ করে দেয়ার কাজটা যিনি করলেন, সেই বিচক্ষণ ফিল্ডারটির নাম স্টিভেন স্মিথ। মোটা দাগে আজকের বিজয়ী ২৫ বছর বয়সী এই অজি অলরাউন্ডারই। ভারতের সামনে অস্ট্রেলিয়ার ছুঁড়ে দেয়া ৩২৯ রানের পাহারসম লক্ষ্যটায় তাঁর অবদানই যে ১০৫ রান!

     

     

    অথচ যখন উইকেটে আসলেন তখন পরিবেশটা মোটেও ব্যাটিং উপযোগী ছিল না। পেস ডেলিভারি রীতিমতো গোলা হয়ে ছুটছিল। সেসব গোলার সামনে ৭ বলের বেশী টিকতে পারেন নি অজি ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার। ইনিংসের মাত্র চতুর্থ ওভারেই যাদবের শর্ট বল পুল করতে গিয়ে ওয়ার্নার কাভারে কোহলির তালুবন্দী হন।

     

     

    ব্যাট হাতে নেমে যাদবের ওই ওভারেই দুই-চারে ছ’রান যোগ করেন স্মিথ। এরপর থিতু হতে সময় নেন পুরো পাঁচটা ওভার। খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এলেন সেই যাদবেরই আরেকটি ওভারে, ইনিংসের সেটা দশম। অজি ব্যাটসম্যানকে উপর্যুপরি শর্ট বল দিয়ে যাওয়ার প্রাপ্যটা কড়ায়গণ্ডায়ই বুঝিয়ে দিলেন। ওই এক ওভারে যাদবকে চার চারবার সীমানা ছাড়া করেন স্মিথ।

     

    পুল করতে গিয়ে একবার প্রায় ৩৬০ ডিগ্রী কোণেই ঘুরে গেলেন

     

    ওপেনার অ্যারণ ফিঞ্চকে সঙ্গে করে রানের চাকা ঘুরিয়ে যান পুরো ৩১ ওভার। মাত্র ৯৩ বল মোকাবেলায় ১১ চার, ২ ছয়ে তুলে নেন ক্যারিয়ারের চতুর্থ ওডিআই শতক। সেই যাদবেরই এক বাউন্সার হুক করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ধরা পড়েন রোহিত শর্মার হাতে, ব্যক্তিগত ১০৫ রানে।  ১৮২ রানের অনবদ্য এক জুটিতে অস্ট্রেলিয়ার দলীয় সংগ্রহ তখন ১৯৭।

     

    চতুর্থ ওডিআই শতকের পর...

     

    ভারতের বিপক্ষে স্মিথের ব্যাট গর্জে ওঠার ব্যাপারটা অবশ্য নতুন কিছু নয়। লম্বা সময় ধরেই নীল জার্সির বোলারদের উপর ছড়ি ঘুরিয়ে চলেছেন। কেবল গত ডিসেম্বর-জানুয়ারিতেই ধোনিদের বিপক্ষে টেস্টে হাঁকিয়েছেন ৪টি শতক, ২টি অর্ধশতক। সীমিত ওভারের ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ভারতের বিপক্ষে ব্যাট করার সুযোগ পেলেন। জানুয়ারিতে প্রথমবারে ৫২ বল মোকাবেলায় করেছিলেন ৪৭ রান।

     

     

    সিডনিতে আজ স্মিথের এই ইনিংসটি না হলে ম্যাচের গল্পটা অন্যরকম হতে পারতো। ১৫ ওভার আর ৮ উইকেট হাতে নিয়ে দলকে রেখে যান প্রায় দুশো’র কাছাকাছি। ওই ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে অনেকেই অস্ট্রেলিয়ার স্কোরবোর্ডে চারশ’ রান দেখছিলেন।

     

    ফিঞ্চকে সঙ্গী করে দলকে এনে দিলেন বড় পুঁজি

     

    অথচ এরপর উপর্যুপরি উইকেট পতন আর শ্লথ গতির ব্যাটিংয়ে একটা সময় সেটা তিনশ’ পেরুবে কিনা এমন শঙ্কাও তৈরি হয়েছিল। ম্যাক্সওয়েল-ফকনার-জনসনদের ছোট ছোট ‘ক্যামিও’তে ভর করে সেটা অবশ্য শেষ পর্যন্ত ৩২৮-এ গিয়ে ঠেকে।

     

    বল আজ হাতে নেয়ার প্রয়োজন না পড়লেও ফিল্ডিংয়ে দুর্দান্ত একটা রান আউট করে ভারতীয় ইনিংসের কফিনে ঠিকই পেরেক ঠুকেছেন। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট থেকে সরাসরি থ্রোতে স্ট্যাম্প ভেঙে সাজঘরে ফেরান রবীন্দ্র জাদেজাকে। ২০৮ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারিয়ে ভারত তখন ম্যাচ থেকে ছিটকেই পড়েছে। সবক'টি উইকেট হারিয়ে শেষ পর্যন্ত যেটা দাঁড়ায় ২৩২-এ।

     

     

    ব্যবধান গড়ে দেয়া শতকটির জন্য আজকের ম্যাচসেরাও সতীর্থদের প্রিয় ‘স্মুজ’!