নেতা দু'জন, লক্ষ্য এক
এবারের আসরে আক্রমণাত্মক অধিনায়কত্বের পুরোধা বলা যায় দু’জনকে। প্রতিপক্ষ দলের কৌশল পূর্বানুমানের অসামান্য ক্ষমতা আছে দু’জনেরই। তর্কসাপেক্ষে টুর্নামেন্টের সেরা ম্যাচটায় ছিলেন দু’জন দু’জনের প্রতিপক্ষ। আরও একবার একজন আরেকজনের মুখোমুখি হচ্ছেন মাইকেল ক্লার্ক ও ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, উপলক্ষ্যটা এবার ক্রিকেট দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ।
ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতাটা একজনের জন্য পুরনোই, এমনকি বিশ্বকাপ জেতাটাও। ২০০৭ সালের ২৮ এপ্রিল বার্বাডোজের কেনসিংটন ওভালে বিশ্বকাপজয়ী অস্ট্রেলিয়া দলের তরুণ এক সদস্য ছিলেন ক্লার্ক। অধিনায়ক ছিলেন না ২০১১ বিশ্বকাপেও, কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে সেবার ছিটকে পড়েছিল অজিরা। সমৃদ্ধ ক্রিকেট ঐতিহ্যের অধিকারী অস্ট্রেলিয়া দলের নেতা এবার তিনি। আটবারের মধ্যে ষষ্ঠবারের মতো ক্রিকেটের সর্বোচ্চ আসরের শেষ দুইয়ের লড়াইয়ে দলটি। চাপ, নাকি অনুপ্রেরণা? কোনটা ঘিরে থাকবে কাল ক্লার্ককে? এমনিতে মাঠের খেলায় চাপ-টাপ খুব একটা জেঁকে বসতে দেওয়ার মতো ব্যক্তি যে মাইকেল ক্লার্ক নন, সে তো জানাই। তবুও মঞ্চটা যখন বিশ্বকাপ ফাইনাল, দর্শকের সংখ্যাটা যেখানে লাখখানেক, হোক না সেখানে নিজেদের সমর্থকদের আধিপত্য, কিছুটা হলেও স্নায়ুচাপ কি অনুভব করবেন না বিশ্বকাপের পর ওয়ানডে ছেড়ে দেবার ঘোষণা দেয়া অস্ট্রেলিয়ান দলপতি?
ঠাণ্ডা মেজাজের সাইক্লোন বলা যায় নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক ম্যাককালামকে। ব্যাট হাতে তো অবশ্যই, ফিল্ডিংয়ে দল পরিচালনার সময়ও নির্লিপ্তভাবে আক্রমণ শানিয়ে যান প্রতিপক্ষের উপর। আর সেটা এতটাই আক্রমণাত্মক মনোভাবের পরিচয় দিয়ে যে, অনেক ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ সেটাকে ক্রিকেট অধিনায়কত্বের নতুন দিগন্ত বলে আখ্যায়িত করছেন। বিশ্বকাপের অতীত অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর নয়, তবে সব অপূর্ণতা ঘুচিয়ে দিচ্ছেন যেন এবার। বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ফাইনালে তুলেছেন নিউজিল্যান্ডকে। তাঁর দল যদি শেষমেশ নাও জিততে পারে বিশ্বকাপটা, ক্রিকেটাঙ্গিনায় ম্যাককালাম স্তুতি চলতে থাকবে ঠিকই। ফাইনালে অধিকতর চাপ অনুভব করার কথা ম্যাককালাম বাহিনীরই। কারণটা হয়তো ইতিমধ্যেই সবার জানা। তবে ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলে এতদিন ধরে যারা জিতে চলেছে একটার পর একটা ম্যাচ, তাদের অধিনায়কের উপর ফাইনালে চাপ থাকলেও সেটা পাহাড়সম হবে না বলেই বিশ্বাস ক্রিকেট বিশ্লেষকদের।
শেষ পর্যন্ত পার্থক্য গড়ে দেবে হয়তো এই ব্যাপারটাই। যে দলের অধিনায়ক চাপ ভালো সামলাতে পারবেন, কাপ হাতে মেলবোর্নে শেষ হাসি হাসবেন তিনিই। ছবিঃএএফপি