মেলবোর্ন উৎসবের রাতে অস্ট্রেলিয়ার শিরোপা-পঞ্চক
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ নিউজিল্যান্ড ১৮৩/১০, ৪৫ ওভার (এলিয়ট ৮৩, টেলর ৪০; ফকনার ৩/৩৬, জনসন ৩/৩০); অস্ট্রেলিয়া ১৮৬/৩, ৩৩.১ ওভার (ক্লার্ক ৭৪, স্মিথ ৫৬*, ওয়ার্নার ৪৫; হেনরি ২/৪৬)
‘অলক্ষুণে’ একটা ইতিহাস ছিল অস্ট্রেলিয়ার পিছনে। সেমিফাইনালে শতক হাঁকানো কোন ব্যাটসম্যানের দল এ পর্যন্ত বিশ্বকাপ জিততে পারে নি! আশা জাগানিয়া একটা অতীত ছিল নিউজিল্যান্ডের সামনে, ‘৮৩ বিশ্বকাপে ঠিক ১৮৩ রান করেই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জিতে গিয়েছিল ভারত! না, কোন অতীতই ফেরে নি আজকের মেলবোর্নে। বরং, সেমিতে শতক হাঁকানো সেই স্মিথের ব্যাটে চার মেরেই পঞ্চমবারের মতো ক্রিকেট বিশ্বকাপের শিরোপা জিতে নিল অস্ট্রেলিয়া। দুই স্বাগতিকের ফাইনালে ৭ উইকেটের মিমাংসা বলছে প্রত্যাশিত লড়াইয়ের ছিটেফোঁটাও মেলে নি।
টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক ব্র্যান্ডন ম্যাককালাম। কিন্তু নিজের সিদ্ধান্তের প্রতি ষোলোআনা অবিচার করে ইনিংসের প্রথম ওভারের পঞ্চম বলেই ফিরে যান তিনি। মেলবোর্নের উইকেটে সুইং পাওয়া যায় না, এমন তত্ত্ব আজ বারেবারই ভুল প্রমাণিত হল। চমৎকার সুইং কাজে লাগিয়ে ম্যাককালামের অফ স্ট্যাম্প উড়িয়ে দেন মিচেল স্টার্ক।
ম্যাককালামকে শুন্য রানে বোল্ড করলেন স্টার্ক
এরপর গাপ্টিল-উইলিয়ামসন জুটি সতর্ক ব্যাটিংয়ে কিছুটা থিতু হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু দ্বাদশ ওভারে ম্যাক্সওয়েলকে এনে সে জুটিও ভাঙেন অজি ক্যাপ্টেন মাইকেল ক্লার্ক। এবার ম্যাক্সওয়েলের খাটো লেন্থের বল সামান্য বাঁকে আঘাত হানে গাপ্টিলের অফ স্ট্যাম্পে। পরের ওভারের উইলিয়ামসনকে কট এন্ড বোল্ড করে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ কার্যত পুরোটাই নিজেদের করে নেন মিচেল জনসন।
সতীর্থদের আসাযাওয়ার মিছিলে একাই লড়ে যান গ্র্যান্ট এলিয়ট
কিউই ইনিংসের সবচেয়ে বড় জুটিটা আসে এরপরই, নিউজিল্যান্ডের সেমিফাইনাল জয়ের নায়ক গ্র্যান্ট এলিয়টের সাথে রস টেলরের। ১১১ রানের সে জুটি ভাঙেন জেমস ফকনার। ইয়র্কার ধরণের স্লোয়ার ডেলিভারি টেলরের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে উইকেটরক্ষক ব্র্যাড হাডিনের গ্লাভসে। টিভি আম্পায়ারের সাহায্য নিয়ে টেলরের সাজঘরে ফেরা নিশ্চিত করেন ধর্মসেনা।
এক বল বাদেই ফকনারের আরেকটি স্লোয়ারে রানের খাতা খোলার আগেই ধরাশায়ী কোরি অ্যান্ডারসন। পরের ওভারে স্টার্কের শিকার লুক রঙ্কি।
একপ্রান্ত আগলে সতীর্থদের এমন আসাযাওয়া কাহাতক আর সহ্য করা যায়? ৮৩ রানের মাথায় হার মানলেন ইনিংসের নিঃসঙ্গ শেরপা গ্র্যান্ট এলিয়ট। ফকনারের আরও একটি চমৎকার স্লোয়ার এলিয়টের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে হাডিনের গ্লাভসে।
৪৫ তম ওভারে জনসন শেষ দুই টেলএন্ডারকে ফিরিয়ে দিলে নিউজিল্যান্ডের রানের চাকা থেমে যায় ১৮৩ রানে। তিনটি করে উইকেট নেন মিচেল জনসন আর জেমস ফকনার, দুটো উইকেট নেন মিচেল স্টার্ক।
মামুলি লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ওভারেই ফিঞ্চকে খুইয়ে বসলে অকল্যান্ড ম্যাচের পুনরাবৃত্তি দেখতে শুরু করেন অনেকেই। দুর্দান্ত এক ইনসুইঙ্গারে অ্যারণ ফিঞ্চকে কট এন্ড বোল্ড করে ফেরান বোল্ট।
কিন্তু বাহারি স্ট্রোকের ফুলঝুরিতে শঙ্কাটুকু সেখানেই মাটিচাপা দেন ওয়ার্নার-স্মিথ জুটি।
বল স্ট্যাম্পে লেগেও পড়লো না বেল, বেঁচে গেলেন স্মিথ
দলীয় ৬৩ রানের মাথায় ওয়ার্নার হেনরির শিকার হয়ে ফিরে গেলে বাকি পথের প্রায় পুরোটাই অধিনায়ক ক্লার্ককে সঙ্গী করে পাড়ি দেন স্মিথ।
ক্যারিয়ারের শেষ একদিনের আন্তর্জাতিকে ব্যাক্তিগত ৭৪ রানে ক্লার্ক যখন হেনরির দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হলেন, জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন তখন মাত্র ৯ রান। ওয়াটসনকে অপর প্রান্তে রেখে জয়াসূচক রানটা স্মিথ নেন সেই হেনরিকেই সীমানাছাড়া করে। অস্ট্রেলিয়া জিতে যায় বিশ্বকাপ, পঞ্চমবারের মতো।
৭১ বল মোকাবেলায় ৩ চারে স্মিথ অপরাজিত থাকেন ৫৬ রানে। টেলর এলিয়ট আর অ্যান্ডারসনের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি উইকেট দখলে নিয়ে ম্যান অব দ্য ফাইনাল অস্ট্রেলিয়ার জেমস ফকনার।