নতুন 'পেস-সম্রাট'?
আসর শুরুর আগে থেকেই চলে আসছিল কথাগুলো, কয়েকটা ম্যাচ হয়ে যাওয়ার পর তো আরও জোরেশোরে- ব্যাটিং বান্ধব নিয়ম-কানুন ও উইকেট সাঙ্গ করে ব্যাটসম্যান আধিপত্যময় এক টুর্নামেন্ট হতে চলেছে এটা। বিশ্বকাপের শেষে এসে দেখা যাচ্ছে, যথেষ্ট যৌক্তিক ও যথার্থ বক্তব্য ছিল ওগুলো। রানের বন্যায় ভেসে গেছে আসর, গ্যালারিতে বল আছড়ে পড়েছে অগণিতবার, বেধড়ক পিটুনি খেয়েছেন ক্রিকেট দুনিয়ার বাঘা বাঘা সব বোলার। তবে মজার ব্যাপার হল, এই সব কিছুর পরেও টুর্নামেন্ট সেরা কিন্তু একজন বোলার- তরুণ অস্ট্রেলিয়ান পেসার মিচেল স্টার্ক।
বহুদিন পর বিশ্বকাপ ক্রিকেট দেখলো গতি ও সুইংয়ের দ্যুতিতে ব্যাটসম্যানের মনে ভীতি জাগানিয়া ‘পেস বোলিং’। কিউই পেসার ট্রেন্ট বোল্ট দেখিয়েছেন, দেখিয়েছেন স্টার্কও, প্রায় একই কায়দায়। তবে যথার্থতা বিবেচনা করলে কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকবেন স্টার্ক। যথার্থতার সঙ্গে আরও একটা জিনিস যোগ হওয়ায় ব্যাটসম্যানের জন্য রীতিমত মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হয়েছেন, সেটা হল ব্যাট-প্যাডের ফাঁক দিয়ে বল প্রবেশ করানোর ক্ষেত্রে অসামান্য দক্ষতা। আর এই কাজটা তিনি করেন নিজের সেরা অস্ত্র ‘রিভার্স সুইঙ্গিং ইয়র্কার’ দিয়ে, ঠিক যেভাবে করেছেন আজ ম্যাককালামের উইকেটটা তুলে নেওয়ার ক্ষেত্রে।
শুধুমাত্র ২২টি উইকেট ও একটি ম্যাচে ম্যাচসেরা হওয়াটা প্রায় কিছুই প্রকাশ করতে পারছেন না পুরো আসরে স্টার্কের পারফরমেন্সের। এমনও ম্যাচ গেছে, যেখানে পাটা ব্যাটিং উইকেটে প্রায় কিছুই অনুকূলে ছিল না বোলারদের। সেখানেও ভেলকি দেখিয়েছেন তরুণ এই বাঁহাতি। তাঁর সবচেয়ে বড় বিশেষত্বটাও এখানেই। ধারাবাহিকতার চরম দৃষ্টান্ত স্থাপন করে পারফর্ম করে গেছেন একের পর এক ম্যাচে। একটা উদাহরণ দিলেই পরিষ্কার হবে বিষয়টা, আট-আটটি ম্যাচ খেলে একটাতেও মাঠ ছাড়েননি কমপক্ষে দুটো উইকেট না নিয়ে।
বিস্ময়ে তাক করে দেবার মতো ব্যাপার হলো তাঁর বোলিং গড় ও ইকোনমি। প্রতি উইকেট তুলে নেওয়ার জন্য রান খরচ করেছেন মাত্র ১০.১৮। আর ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিংয়ের এই স্বর্ণযুগে ৩.৫০ ইকোনমি তো একপ্রকার অবিশ্বাস্যই। এই ইকোনমিই ব্যাটসম্যানদের উপর তাঁর আধিপত্য ফুটিয়ে তোলার জন্য যথেষ্ট।
দিনে দিনে ব্যাটসম্যানের রাজত্বে পরিণত হওয়া ক্রিকেট নামক এই খেলাটায় উজ্জ্বলতম ব্যতিক্রম মিচেল স্টার্ক। স্টার্ক, বোল্টদের মতো তরুণদের হাত ধরে পেস বোলিংয়ের সোনালী সময়টা কি তবে আবার ফিরে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছে? ছবি-সৌজন্যঃএএফপি