কন্তের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ?
এপ্রিল ৪, ২০১৬। অস্থায়ী ম্যানেজার গাস হিদিংকের বিদায়ের পর চেলসির হটসিটে বসলেন আন্তোনিও কন্তে। ইংল্যান্ডে উড়ন্ত এক সূচনা করলেও নিজের প্রথম ‘অগ্নিপরীক্ষা’তে ক্লপের লিভারপুলের কাছে হেরে গেলেন ‘দ্যা গডফাদার’। কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা হয়ে আসলো নগরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্সেনালের কাছে ৩-০ গোলের লজ্জাজনক হার। এই হারের পর ‘ব্লুজ’দের কট্টর সমর্থকরাই হতাশ হয়ে পড়লেন কন্তেকে নিয়ে। কন্তেও বুঝলেন, সমস্যা হচ্ছে অন্য কোথাও। বদলে ফেললেন ফরমেশন। ৪-৩-৩ থেকে ৩-৪-৩ এ নিয়ে আসলেন দলকে। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাদের। হ্যাজার্ড, কস্তাতে ভর করে নিজের প্রথম মৌসুমেই প্রিমিয়ার লিগ জিতে গেলেন কন্তে...
তবে নতুন মৌসুম শুরুর আগে অতীতের সুখস্মৃতিতে থোড়াই কেয়ার কন্তের। প্রাক-মৌসুমে বলেছেন, “গত মৌসুম আমাদের জন্য ভাল গেলেও সেটা এখন অতীত। নতুন মৌসুমেও লিগশিরোপা ধরে রাখার পাশাপাশি চ্যাম্পিয়নস লিগে ভাল করাটাই আমাদের মূল লক্ষ্য”। নতুন মৌসুমে আত্মতুষ্টিতে ভোগার ভুল নিশ্চয় কন্তে করবেন না।
স্ট্যামফোর্ড ব্রিজেই থাকছেন কর্তোয়াঃ
রিয়াল মাদ্রিদের নতুন গোলকিপারদের সম্ভাব্য তালিকায় ডি গেয়ার পাশাপাশি বেশ জোরেশোরেই শোনা যাচ্ছিল থিবো কর্তোয়ার নাম। সংবাদমাধ্যমে এমনও গুঞ্জন উঠেছিল যে, কর্তোয়া নিজেই নাকি রিয়ালে যেতে রীতিমত একপায়ে খাড়া। অবশ্য এসব খবরকে কেবলই গুঞ্জন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন স্বয়ং কর্তোয়াই। চেলসির ‘নাম্বার ওয়ান’ হিসেবেই দীর্ঘদিন থাকার ইচ্ছাও পোষণ করেছেন দীর্ঘদেহী এই বেলজিয়ান। ফলশ্রুতিতে আগামী মৌসুমের সিংহভাগ সময়ই চেলসির গোলবারের নিচে দেখা যাবে কর্তোয়াকেই।
গত মৌসুমে কর্তোয়ার কারণে দলে তেমন সু্যোগ না পাওয়ায় বোর্নমাউথে পাড়ি জমিয়েছেন বেগোভিচ। বসনিয়ান গোলরক্ষকের বদলি হিসেবে ম্যান সিটি থেকে কাবালেরোকে নিয়ে এসেছেন কন্তে।
‘নতুন’ কাহিল, পুরনো রক্ষণঃ
কর্তোয়া থাকলেও চেলসির রক্ষণভাগে এই মৌসুম থেকে দেখা যাবে না এক মহীরূহকে। সুদীর্ঘ দুই দশকের যাত্রা শেষে গত মাসে প্রাণের ক্লাব চেলসি ছেড়ে অ্যাস্টন ভিলায় পাড়ি জমিয়েছেন জন টেরি। অবশ্য টেরির চেলসিযাত্রার শেষের শুরুটা হয়েছিল কন্তে আসার পরই। বর্ষীয়ান এই কিংবদন্তীর চেয়ে গ্যারি কাহিলকেই বেশি পছন্দ ছিল এই ইতালিয়ানের। কোচের আস্থার পূর্ণ প্রতিদানটাও দিয়েছেন কাহিল। একের পর এক ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে হয়ে উঠেছেন কন্তের চেলসির অপরিহার্য এক সদস্য।
দলে টেরির স্থলাভিষিক্ত হওয়ার পাশাপাশি চেলসির অধিনায়কত্বের গুরুদায়িত্বও এসে জুড়েছে কাহিলের কাঁধে। টেরির শূণ্যস্থান পূরণ করতে রোমা থেকে জার্মান ডিফেন্ডার রুডিগারকে নিয়ে এসেছেন কন্তে। অ্যাজপিলিকুয়েতা, মোজেস, আলোন্সোর সবাই-ই আছেন দলে। রোটেশন ছাড়া রুডিগারের মূল দলে জায়গা পাওয়াটা যে বেশ কঠিনই হয়ে পড়বে- এমনটা হয়তো মানেন রুডিগার নিজেও।
এবারও ব্রাত্য ফ্যাব্রেগাস?:
রক্ষণভাগের প্রত্যেকের মত চেলসির দলে অপরিহার্য ছিলেন কান্তে এবং মাতিচও। মৌসুমজুড়ে দুর্দান্ত ধারাবাহিকতার নিদর্শন রাখায় পিএফএ-র বর্ষসেরা ফুটবলারও হয়েছিলেন কান্তে। কিন্তু মাতিচের প্রিয় গুরু মরিনহোর দল ম্যান ইউনাইটেডে পাড়ি জমানোয় কান্তের সঙ্গী নিয়ে কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ্বেই ছিলেন কন্তে। শেষমেশ প্রায় ৩৪ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে প্রথম পছন্দ তিয়েমুইয়ে বাকায়োকোকেই স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে আনতে সক্ষম হয়েছে চেলসি। এর ফলে এখনো মূল দলে জায়গা পাকাপোক্ত করতে পারেননি ফ্যাব্রেগাস। অবশ্য উরুর ইঞ্জুরির কারণে মৌসুমের শুরুর দিকে খেলতে পারবেন না বাকায়োকো। সেক্ষেত্রে কান্তের পাশে ফ্যাব্রেগাসকেই দেখা যাওয়ার সম্ভাবনাটা সবচেয়ে বেশি।
হ্যাজার্ডের বদলি কে?:
১৬-১৭ মৌসুমজুড়ে বলতে গেলে অপ্রতিরোধ্যই ছিলেন এডেন হ্যাজার্ড। গোলের দিক দিয়ে কস্তা এগিয়ে থাকলেও বেলজিয়ান এই সুপারস্টারের নৈপুণ্য ছিল স্পষ্ট। পিএফএ-র বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের শীর্ষ ৬-এ কান্তের পাশাপাশি ছিলেন তিনিও। কিন্তু মৌসুম শেষে বেলজিয়ামের হয়ে ট্রেনিং-এ অ্যাঙ্কেলের গুরুতর ইঞ্জুরিতে পড়ে তিন মাসের জন্য মাঠের বাইরে চলে যান হ্যাজার্ড। অবশ্য দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠায় এভারটনের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই দলে ফিরবেন তিনি- এমনটাই আশাবাদ কন্তের। হ্যাজার্ডের বদলে বাঁ প্রান্তে দেখা যেতে পারে উইলিয়ান বা পেদ্রোকে।
চোখ থাকবে এবার মোরাতার ওপর
হ্যাজার্ডের পাশাপাশি চেলসির আক্রমণভাগের মূল দায়িত্বটা ছিল কস্তার ওপর। ২০ গোল করে লিগে চেলসির সর্বোচ্চ গোলদাতা হলেও কন্তের সাথে সম্পর্কটা শীতল হতে থাকে মৌসুমের মাঝামাঝি থেকে। শেষমেশ এক ক্ষুদেবার্তায় কন্তে জানিয়ে দেন, ক্লাব ছাড়তে হবে কস্তাকে। ওদিকে প্রিয় ক্লাব অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ট্রান্সফার নিষেধাজ্ঞা থাকায় উভয় সংকটে পড়েছেন কস্তা। কস্তার বদলি হিসেবে রিয়াল মাদ্রিদ থেকে ৮০ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে আলভারো মোরাতাকে নিয়ে এসেছেন কন্তে। উল্লেখ্য, কন্তের অধীনে জুভেন্টাসে লিগ ও ইতালীয়ান কাপ জিতেছিলেন মোরাতা। প্রাক মৌসুমে বাতশুয়াই ভাল করলেও মোরাতাকেই মূল স্ট্রাইকার হিসেবে খেলানোর ব্যাপারটা নিশ্চিত করেছেন কন্তে। ক্যারিয়ারে এবারই প্রথম কোনো দলের মূল স্ট্রাইকার বনে গেলেন মোরাতা।
সম্ভাব্য একাদশ (৩-৪-৩): কর্তোয়া; অ্যাজপিলিকুয়েতা, কাহিল, লুইজ,; মোজেস, কান্তে, বাকায়োকো (ফ্যাব্রেগাস), আলোন্সো; উইলিয়ান, মোরাতা, হ্যাজার্ড (পেদ্রো)।
গত মৌসুমে ইউরোপীয়ান প্রতিযোগীতায় না থাকায় প্রিমিয়ার লিগ জয়টা কিছুটা হলেও সহজই হয়েছিল চেলসির। কিন্তু এবার চ্যাম্পিয়নস লিগের পাশাপাশি তেমন ‘স্কোয়াড ডেপথ’ না থাকায় কাজটা হয়তো আরো কঠিন হয়ে পড়বে কন্তের জন্য। ২০০৯ সালে ম্যান ইউনাইটেডের পর কোনো দলই লিগ শিরোপা ধরে রাখতে পারেনি। কন্তের চেলসি কি পারবে ৮ বছরের এই ‘খরা’ মেটাতে? নাকি কন্তের বদলে শেষ হাসি হাসবেন মরিনহো বা গার্দিওলা? সব প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে ১৭-১৮ মৌসুমের পর্দা নামার পরই।