সেই টটেনহাম থাকছে এবারও?
ঘড়ির কাঁটাটি বছরখানেক পিছিয়ে নেওয়া যাক। ২০১৬ সালের জুলাই মাস, ১৫-১৬ প্রিমিয়ার লিগ মৌসুম আসন্ন। গার্দিওলা, মরিনহো, ওয়েঙ্গার, ক্লপদের নিয়ে সাজানো লিগে খোঁচা খোঁচা দাড়ির মরিসিও পচেত্তিনোর স্পার্সকে বলতে গেলে গোনায় ধরেননি কেউই। অবশ্য ইংল্যান্ডের চিরাচরিত ‘বিগ ফোর’-এর মাঝে তরুণ কেন, আলিদের এড়িয়ে যাওয়াটা খুব কঠিনও নয়। বড় দলগুলো তারকাদের দলে ভেড়াতে উঠেপড়ে লাগলেও পচেত্তিনো ছিলেন নির্বিকার, দলে আনেননি বিশ্বমানের কাউকেই। কিন্তু গত মৌসুমে নিজের তরুণ তুর্কিদের নিয়ে রানার আপ হয়ে পচেত্তিনো যেন হুঙ্কার দিয়ে জানালেন, শুধুমাত্র চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলা নিয়েই আর সন্তুষ্ট থাকবে না স্পার্স; পাল্লা দিয়ে লড়বে ইংল্যান্ডের সেরা ক্লাবের মুকুটের জন্যও।
বছরখানেক পরও হিসাবটা অনেকটা একই রকম। দল বানাতে যেখানে সিটি, ইউনাইটেড, লিভারপুলরা কয়েক শত মিলিয়ন খরচ করেছে ইতোমধ্যেই, সেখানে আক্ষরিক অর্থেই কাউকে দলে ভেড়াননি পচেত্তিনো। সাফল্যের জন্য হয়তোবা গতবারের নীল নকশাতেই ভরসা রাখছেন এই স্প্যানিয়ার্ড...
কিপার লরিস, নেতা লরিসঃ
তারুণ্যের জয়গানে ভরপুর স্পার্স দলটিকে চমৎকারভাবে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন হুগো লরিস। বয়স ত্রিশের কোঠায় পৌঁছালেও গত মৌসুমের শুরুতেই চার বছরের জন্য চুক্তি নবায়ন করেছেন ফ্রেঞ্চ এই গোলরক্ষক। একের পর এক ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের পাশাপাশি রক্ষণভাগকেও দারুণভাবে সামলেছেন তিনি। পচেত্তিনোর মতে বিশ্বের সেরা পাঁচ গোলরক্ষকের একজন স্পার্সের ‘নাম্বার ওয়ান’।
ইঞ্জুরিতে না পড়লে নতুন মৌসুমের প্রায় পুরো সময়েই স্পার্সের গোল সামলাবেন লরিস। লরিসের বিকল্প হিসেবে দলে আছেন ডাচ কিপার মিচেল ভর্ম।
রক্ষণ যখন ‘গোপন অস্ত্র’:
লরিসের নেতৃত্বে স্পার্স রীতিমত এক রক্ষণদুর্গই গড়ে তুলেছিল গত মৌসুমে। লিগে পচেত্তিনোর শিষ্যদের সাফল্যের অন্যতম কারণ ছিল সর্বোচ্চ ১৭টি ক্লিনশীটের দুর্দান্ত রেকর্ড। রাইটব্যাক কাইল ওয়াকার ম্যান সিটিতে পাড়ি জমালেও অল্ডারওয়েরেল্ড, ভার্টনগেনরা আছেন এখনো। প্রাকমৌসুমে রক্ষণের ডানপ্রান্তে ইংলিশ তরুণ ট্রিপিয়েরকে খেলিয়েছেন পচেত্তিনো।
ওদিকে গত মৌসুমের শেষদিকে ইঞ্জুরিতে পড়া ড্যানি রোজ এখনো ফিট না হওয়ায় মৌসুমের শুরুর দিকে রক্ষণের বাঁপ্রান্তে দেখা যেতে পারে বেন ডেভিসকে। টবি অলডারওয়েরেল্ড এখনো চুক্তি নবায়ন না করলেও পচেত্তিনো বিশ্বাস, ভবিষ্যতেও স্পার্সেই থাকবেন এই বেলজিয়ান।
আবারো সেই আলি, এরিকসেনঃ
ধারাবাহিকতা ছিল স্পার্সের গত মৌসুমের ‘হাইলাইট’। রক্ষণ, আক্রমণ- সবখানেই তাদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে রোটেশন নিয়ে তেমন একটা ভাবতে হয়নি পচেত্তিনোকে। হ্যারি কেন গোল্ডেন বুট জিতে পাদপ্রদীপের প্রায় সবটুকু আলো নিয়ে নিলেও ডেলে আলি, ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনদের অবদান ছিল অনস্বীকার্য। গত মৌসুমে ২০ গোল করে ইউরোপের বড় ক্লাবগুলোর নজর কাড়লেও গত মাসেই পাঁচ বছরের জন্য চুক্তি নবায়ন করেছেন আলি।
আলির পাশাপাশি মধ্যমাঠে অনবদ্য ছিলেন এরিকসেন। অ্যাসিস্টের ফুলঝুড়ি ছড়ানোর পাশাপাশি দলের প্রয়োজনে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ গোলও করেছেন এই ডেনিশ সুপারস্টার। আলির মত এরিকসেনের ওপরও চোখ পড়েছিল বার্সেলোনার মত ক্লাবগুলোর। কিন্তু পচেত্তিনোর ‘স্পার্স প্রজেক্ট’-এ পূর্ণ আস্থা রেখে তিনিও জানিয়ে দিয়েছেন, থাকতে চান উত্তর লন্ডনেই। এরিকসেন, আলিরা যখন আক্রমণভাগ সামলেছেন, তখন মুসা দেম্বেলে, ভিক্টর ওয়ানইয়ামা, এরিক দিয়েররা ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে নিজেদের কাজ করে গেছেন নীরবে-নিভৃতে।
ভরসার নাম হ্যারি কেনঃ
মাত্র ২৪ বছর বয়সে ইতোমধ্যেই দুবার প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন হ্যারি কেন। ইঞ্জুরির কারণে গত মৌসুমের প্রায় দু মাস মাঠের বাইরে কাটালেও ২৯ গোল করে ঠিকই জিতে নিয়েছেন গোল্ডেন বুট। বিগত দুই মৌসুমের মত এবারও স্বাভাবিকভাবেই স্পার্সের আক্রমণভাগের ‘নিউক্লিয়াস’ থাকবেন এই ইংলিশ স্ট্রাইকারই। কেনের ভবিষ্যৎ নিয়ে অবশ্য বিন্দুমাত্র দ্বিধান্বিত নন পচেত্তিনো। কারণ স্পার্সের ‘নাম্বার টেন’ সাফ আনিয়ে দিয়েছেন, ওয়াকারের মত ‘টাকার লোভে’ স্পার্স ছাড়বেন না কখনোই। ফিট থাকলে গোল্ডেন বুটের হ্যাটট্রিকও হয়ে যেতে এবার- এমন সম্ভাবনার বিপক্ষে বাজি ধরার লোকের সংখ্যা নেহায়েতই কম।
আক্রমণভাগে হিউং-মিন সনকে সঙ্গী হিসেবে পাবেন কেন। ওদিকে ইঞ্জুরি থেকে সেরে উঠতে পারলে দেখা যেতে পারে এরিক লামেলাকেও।
সম্ভাব্য একাদশ (৪-২-৩-১): লরিস; ট্রিপিয়ের, অল্ডারওয়েরেল্ড, ভার্টনগেন, রোজ; দিয়ের, দেম্বেলে; সন, এরিকসেন, আলি; কেন
চেলসির মতই ‘স্কোয়াড ডেপথ’ না থাকায় নতুন মৌসুমের আগে উদ্বিগ্ন খোদ স্পার্স সমর্থকরাই। অবশ্য গত মৌসুমেও প্রায় একই অবস্থা থেকেই প্রিমিয়ার লিগ রানার আপ হয়েছিল তারা। কিন্তু ওয়াইট হার্ট লেনের দর্শকসংখ্যা বাড়ানোর কারণে এই মৌসুমে ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ‘হোম’ ম্যাচগুলো খেলবে স্পার্স। ওয়াইট হার্ট লেনের ক্ষেত্রফল যেখানে ৬৭০০ বর্গমিটার, ওয়েম্বলির ক্ষেত্রফল যেখানে ৭২৪৫ বর্গমিটার। নতুন ‘হোমগ্রাউন্ডের’ বৃহত্তর মাঠে স্পার্স কেমন করবে, তা-ই এখন দেখার বিষয়।
পচেত্তিনো কি পারবেন গত মৌসুমের ধারাবাহিকতার পুনরাবৃত্তি করতে? নাকি ‘বিগ ফোর’-এর অর্থের কাছে হার মানবে ‘কিপ্টে’ স্পার্স? চ্যাম্পিয়নস লিগেই বা কেমন করবে পচেত্তিনোর দল? কেন, এরিকসেনরাই ভাল দিতে পারবেন সেই প্রশ্নের উত্তর...