দ্বিতীয় মৌসুমেই অদ্বিতীয় মরিনহো?
ইউরোপা লিগ, লিগ কাপ জিতলেও প্রিমিয়ার লিগে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের গত মৌসুমটা কেটেছে হতাশায়। শীর্ষ চার থেকে ৭ পয়েন্ট পিছিয়ে থেকে ৬ নম্বরে লিগ শেষ করেছিল হোসে মরিনহোর দল। ছোট দলের সাথে নিয়মিত পয়েন্ট হারানো, ওল্ড ট্রাফোর্ডে একের পর ড্র করা- এসবই ছিল দলের প্রধান সমস্যা।
এবার নতুন খেলোয়াড় দলে এনে মূলত এই সমস্যাগুলোই কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন মরিনহো। গত মৌসুমের সর্বোচ্চ গোলদাতা ইব্রাহিমোভিচের সাথে চুক্তি নবায়ন না করলেও, প্রিমিয়ার লিগের পরীক্ষিত স্ট্রাইকার রোমেলু লুকাকুকে দলে ভিড়িয়েছেন। চেলসি থেকে মাতিচ ও সুইডিশ ডিফেন্ডার লিন্ডেলফও দলের নতুন সংযোজন।দীর্ঘ চার বছরের শিরোপা খরা কাটিয়ে নতুন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের দেখা মিলবে কি না তা জানতে অপেক্ষাই করতে হবে। তবে একটা জায়গায় কিন্তু ইউনাইটেডকে ‘নতুন’ বলা যাচ্ছে এখনই। ওয়েইন রুনিকে ছাড়া ১৩ বছর পর মৌসুম শুরু করতে যাচ্ছে ম্যান ইউনাইটেড।
ইউনাইটেড সমর্থকেরা অবশ্য আশায় বুক বাঁধতে পারেন অন্য কারণে। মরিনহোর দ্বিতীয় মৌসুম বলে! এখন পর্যন্ত ম্যানেজার হিসেবে সব ক্লাবেই দ্বিতীয় মৌসুমে লিগ জিতেছেন মরিনহো। ইউনাইটেডে সেই রেকর্ডটাই টিকে থাকবে? নাকি হাতছাড়া হবে? শুধুমাত্র কোচের পরিসংখ্যানের উপর ভর করেই অবশ্য লিগ জয়ের স্বপ্ন দেখতে হচ্ছে না সমর্থকদের। এবারের দলটা শিরোপা প্রতিদ্বন্দ্বীই। তবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছতে শুরুটা হতে হবে দারুণ। এক্ষেত্রে এবারের ফিক্সারটাও পক্ষে পাচ্ছে রেড ডেভিলরা। প্রথম ছয় ম্যাচে তুলনামূলক ছোট দলগুলোর সাথেই খেলতে হবে তাদের। গত বছরের পুনরাবৃত্তি না হলে শুরুটাও ভাল হওয়ার কথা মরিনহোর দলের। আর ভীত শক্ত হলে মরিনহোকে পা হড়কাতে হয়নি কখনোই!
ডি গিয়াই থাকছেন গোলবারের নিচে
ডেভিড ডি গিয়াকে নিয়ে প্রতি দলবদলের মৌসুমে গুঞ্জন যেন নিয়তিই হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে প্রতিবারই স্প্যানিশ গোলরক্ষক রাখতে সক্ষম ইউনাইটেড! গোলকিপার নিয়ে তাই আরও অন্তত এক মৌসুম নির্ভার থাকতে পারেন রেড ডেভিল সমর্থকেরা। গতবার ইউরোপা লিগে সার্জিও রোমেরা নিজের দৃঢ়তার পরিচয় দিলেও ডি গিয়াই প্রথম পছন্দ মরিনহোর। সেক্ষেত্রে প্রিমিয়ার লিগে রোমেরোর সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কমই।
রক্ষণটা ‘দূর্গই’ বানিয়েছেন মরিনহো
কাগজে কলমে গতবার প্রিমিয়ার লিগে রক্ষণের দিক দিয়ে বাকি সবার চেয়ে এগিয়ে ছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। বেইয়ি, রোহো, ব্লিন্ডদের পারফরম্যান্সও ছিল সন্তোষজনক। মরিনহোর অধীনে অ্যান্টোনিও ভ্যালেন্সিয়াও নিজেকে পরিণত করেছেন প্রিমিয়ার লিগের অন্যতম সেরা রাইট ব্যাক হিসেবে। তবে ইনজুরির কারণে গেল মৌসুমে বহুবারই সমস্যায় ভুগতে হয়েছে ইউনাইটেড ম্যানেজারকে। দলবদলের মৌসুমে তাই নিজের কেনাকাটার শুরুটা করেছিলেন একজন ডিফেন্ডার ভিড়িয়ে। বেনফিকা থেকে ভিক্টর লিন্ডেলফকে কিনতে খরচ করেছেন প্রায় ৩৫ মিলিয়ন ইউরো।
সুইডিশ ডিফেন্ডারের অতীত রেকর্ড ও খেলার ধরন বলছে প্রিমিয়ার লিগটা তার জন্যই! এরিক বেইয়ির সাথে লিন্ডেলফের জুটিটাই তাই পার্থক্য গড়ে দিতে পারে। রাইট ব্যাক পজিশনে ভ্যালেন্সিয়াকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়ার মতো ডিফেন্ডারও কেউ নেই বলেই মনে হচ্ছে। বিকল্প হিসেবে ডারমিয়ান, জোন্স তো আছেনই। তবে লেফটব্যাকের জায়গায়টা নিয়ে কিছুটা ঝামেলায় পড়তে পারেন মরিনহো। ড্যালে ব্লিন্ড, মার্কোস রোহো, লুক শরা তো আছেনই। একই পজিশনে খেলতে পারেন ডারমিয়ানও। প্রতিযোগিতাটা অনুমিত। তবে রোহো ইনজুরি আক্রান্ত হয়ে মাঠের বাইরে থাকায় ব্লিন্ডকেই আপাতত দেখা যেতে পারে লেফটব্যাক হিসেবে। সবমিলিয়ে একটি রক্ষণ ‘দুর্গের’ আশা করতেই পারেন ইউনাইটেড সমর্থকেরা।
এবার নিজেকে চেনাবেন পগবা?
গতবার ১০৪ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে জুভেন্টাসের কাছ থেকে পল পগবাকে আবারও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ফিরিয়ে এনেছিলেন মরিনহো। কিন্তু পগবাকে পুরো মৌসুম কিছুটা নিষ্প্রভই মনে হয়েছে। কারণ রক্ষণের দায়িত্বটাও পড়েছিল তার কাঁধেই।
এবার মিডফিল্ডে আরেকজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার থাকায় পগবার কাজটা আরও সহজ হয়ে যাওয়ার কথা। নেমানিয়া মাতিচের সাথে চুক্তিটা তাই আলাদা গুরুত্ব বহন করছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জন্য। আক্রমণেই মনোযোগটা বেশি দিতে পারবেন ফ্রেঞ্চ এই মিডফিল্ডার। দ্বিতীয় মৌসুমে এসে এবার পগবা পারবেন নিজেকে চেনাতে?
সময়ের সাথে অ্যান্ডার হেরেরাও নিজেকে আরও পরিণত করেছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের মিডফিল্ডে। ওল্ড ট্রাফোর্ডে প্রথম মৌসুমটা ভালো গেছে হেনরিখ মিখিতারিয়ানেরও। পগবা, মাতিচ, হেরেরা, মিখিতারিয়ানদের মাঝমাঠের জায়গা একরকম পাকাই বলা চলে।
হুয়ান মাতাও ইনজুরি থেকে ফিরেছেন। স্ট্রাইকারের পেছনে ‘ফলস নাইন’ হিসেবে মাতাও হতে পারেন মরিনহোর তুরুপের তাস। ক্যারিক, ফেলাইনিরাও আছেন মরিনহোর পরিকল্পনায়। সবমিলিয়ে গোছানোই বলা যায় ইউনাইটেডের মাঝমাঠ।
লুকাকু পারবেন?
আক্রমণভাগে রোমেলু লুকাকুর দায়িত্বটাই বেশি বলে মনে হচ্ছে। রুনি, ইব্রাহিমোভিচরা নেই। পুরোদস্তর স্ট্রাইকার বলতে যা বোঝায় তেমন আছেন লুকাকু একাই। র্যাশফোর্ড, লিনগার্ডদের ব্যবহার করার সুযোগও থাকছে মরিনহো জন্য। প্রস্তুতি ম্যাচগুলোয় আন্থনি মারসিয়ালও দেখিয়েছেন উন্নতির ছাপ। তবে ‘বড় দায়িত্বটা’ লুকাকুকেই নিতে হবে।
গত মৌসুমে এভারটনের হয়ে ২৫ গোল করেছিলেন লিগে। তবে বেশিরভাগই তুলনামূলক নিচের দিকের দলের বিপক্ষে। এই নিয়ে অবশ্য দুশ্চিন্তার কারণ নেই রেড ডেভিল সমর্থকদের। ‘ছোট দল’ গুলোর বিপক্ষে পয়েন্ট হারানোর তিক্ত অভিজ্ঞতাটা ভুলিয়ে দিতে পারলেই লুকাকুর পেছনে খরচ করা ৭৯ মিলিয়ন ইউরো সার্থক মনে করবেন তারা!
সম্ভাব্য একাদশঃ (৪-৩-৩)
ডি গিয়া, ভ্যালেন্সিয়া, বেইয়ি, লিন্ডেলফ, ব্লিন্ড, মাতিচ, পগবা, হেরেরা, মিখিতারিয়ান, মাতা, লুকাকু।