লিভারপুলঃ শক্তিশালী আক্রমণভাগ, দুর্বল রক্ষণ
সম্ভাবনার প্রদীপটা জ্বলে ওঠে প্রতিবারই। মনে হয়, অবসান এবার ঘটবেই। কিন্তু মৌসুমের শেষদিকে, অথবা নতুন বছরের শুরুতে কেন যেন সেই পুরনো হতাশাই ভর করে বসে! প্রিমিয়ার লিগ চালুর পর থেকে একবারও লিগ শিরোপা ঘরে তুলতে না পারা লিভারপুলের প্রতি মৌসুমের চিত্রনাট্যটা প্রায় একইরকম। বহু নামী-দামী তারকা ও ম্যানেজার এসেছেন, গেছেন; কিন্তু তারা কেউই পারেননি লিভারপুলকে কাঙ্ক্ষিত শিরোপা এনে দিতে।
ক্লপের অধীনে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্তও শিরোপাদৌড়ে ছিল লিভারপুল, কিন্তু ভাগ্যের আর পরিবর্তন হয়নি। নিজের তৃতীয় মৌসুমে তাই আবারো ‘অসাধ্য’ সাধনের মিশনে নামছেন এই জার্মান।
(গোল) রক্ষক যখন ভক্ষকঃ
২০১৬-১৭ মৌসুমের মত এবারও গোলরক্ষক নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে লিভারপুল সমর্থকদের। মিনিওলে, কারিওসের গড়পড়তা পারফরম্যান্সের পরও বিস্ময়করভাবে গোলরক্ষক কেনার দিকে মনোনিবেশ করেননি ক্লপ। গত মৌসুমে নড়বড়ে রক্ষণের পাশাপাশি গোলরক্ষকদের একাধিক ভুলে মূল্যবান পয়েন্টও হাতছাড়া হয়েছে ‘অল রেড’দের।
দলবদলে মাসখানেকেরও কম বাকি থাকতেও গোলরক্ষক না কেনায় সমর্থকদের মধ্যেও বিরাজ করছে হতাশা। নতুন কেউ না আসলে মিনিওলে, কারিওসকেই পালাক্রমে দেখা যাবে লিভারপুলের গোলবারের নিচে।
“আক্রমণভাগ আপনাকে ম্যাচ জেতাবে, আর রক্ষণভাগ জেতাবে শিরোপা”- ক্লপ খুব সম্ভবত স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের অন্যতম সেরা এই উক্তিটা ঠিক মানেন না। নইলে কেন একের পর এক আক্রমণভাগের খেলোয়াড় কিনলেও ডিফেন্ডার ভেড়াতে উদাসীন এই জার্মান? লিভারপুলের রক্ষণের অবস্থা যেন কিছুটা এদেশের বিভিন্ন ভাঙ্গা-রাস্তা ঘাটের মতো; কোনোমতে কাজ চালিয়ে নেওয়া যায় আর কি!
মৌসুমজুড়ে সাউদাম্পটন ডিফেন্ডার ভার্জিল ভ্যান ডাইকের কথা শোনা গেলেও তেমন কোনো অগ্রগতি নেই সেখানে। লেফটব্যাকে মিলনারের বদলি হিসেবে এসেছেন অ্যান্ডি রবার্টসন, আছেন স্প্যানিশ আলবার্তো মরেনো। কিন্তু ডানপ্রান্তে ক্লাইনের বদলি হিসেবে তেমন কেউ না থাকাটা বেশ ভাবাচ্ছে লিভারপুল সমর্থকদের। আর রক্ষণের মাঝের অবস্থা তো আরও করুণ! লভরেন, মাতিপ, ক্লাভানরা প্রত্যাশ্যামত খেলতে না পারায় বেশ ভুগতে হচ্ছে লিভারপুলকে। দলবদল শেষের আগে ডিফেন্ডার না কিনলে হয়তো গত মৌসুমের পরিণতিই অপেক্ষা করছে ক্লপের শিষ্যদের জন্য।
কুতিনহো তুমি কার?:
ইন্টার মিলান থেকে ইংল্যান্ডে পাড়ি জমানোর পর থেকে লিভারপুল তো বটেই, সমগ্র ফুটবলবিশ্বকে নিজের পায়ের জাদুতে বিমোহিত করে রেখেছেন কুতিনহো। ইউরোপের একাধিক বড় ক্লাবের নজরে পড়েছেন বহু আগেই। নেইমারের ট্রান্সফার ফিতে ফুলে ওঠা কোষাগার নিয়ে কুতিনহোকে ন্যু ক্যাম্পে আনতে রীতিমত আটঘাট বেঁধে নেমেছে বার্সা। শোনা যাচ্ছে, কাতালানদের হয়ে খেলার তীব্র ইচ্ছার কথা নাকি ক্লপকে সরাসরি জানিয়েছেন লিভারপুলের ‘নাম্বার টেন’। দলবদলের মাত্র সপ্তাহ তিনেক বাকি থাকতে কুতিনহোর থাকা-না থাকার ওপর নির্ভর করছে লিভারপুলের অনেক কিছুই।
কুতিনহো না থাকলেও মধ্যমাঠে ঠিকই দেখা যাবে হেন্ডারসন, চাঁন, ওয়াইনাল্ডামদের। কিন্তু উরুর পেশীতে চোট পাওয়ায় মৌসুমের প্রথম মাস দুয়েক মিস করবেন লালানা। ভ্যান ডাইকের মতই মৌসুমজুড়ে লাইপজিকের নাবি কেইটার নাম শোনা গেলেও ‘মার্সিসাইডে’ পাড়ি জমানোর সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ এই মিডফিল্ডারের।
'ভয়ঙ্কর সুন্দর ' আক্রমণঃ
ডর্টমুন্ডে ‘অ্যাটাকিং’ ফুটবলের জন্য খ্যাতি অর্জন করা ক্লপ লিভারপুলকেও পরিণত করেছেন ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা আক্রমণাত্মক দলে। এই আক্রমণভাগের কাছেই গত মৌসুমে হার মেনেছে শীর্ষ ছয়ের প্রত্যেকেই। মানে, ফিরমিনোদের পাশাপাশি আক্রমণভাগ শাণিত করতে রোমা থেকে মোহাম্মদ সালাহকে নিয়ে এসেছেন ক্লপ। সালাহ, মানে, ফিরমিনো- দুর্দান্ত এই ত্রিফলায় প্রতিপক্ষেকে বিদ্ধ করতে প্রস্তুত ক্লপ ও লিভারপুল।
সালাহর পাশাপাশি চেলসি থেকে তরুণ ডমিনিক সোলাঙ্কিকেও এনেছে লিভারপুল। এছাড়া দলে আছেন ওরিগি, স্টারিজরাও। প্রাক মৌসুমে আক্রমণভাগের প্রত্যেকেই গোল পাওয়ায় আক্রমণভাগে দলবাছাইয়ে মধুর সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে জার্মান এই কোচকে।
সম্ভাব্য একাদশ (৪-২-৩-১): মিনিওলে; ক্লাইন, লভরেন, মাতিপ, মিলনার; হেন্ডারসন, চাঁন; সালাহ, কুতিনহো, মানে; ফিরমিনো।
সম্ভাবনায় শুরু, হতাশায় শেষ- ইংল্যান্ডে নিজের দ্বিতীয় পূর্ণ মৌসুমে ক্লপ কি পারবেন লিভারপুলের চিরায়ত এই ধারা ভাঙ্গতে? সালাহ, ফিরমিনোরা কি পারবেন ‘অসম্ভবকে’ বাস্ততায় পরিণত করতে? উত্তরগুলো জানতে অপেক্ষা করতে আরো বছরখানেক।