আর্সেনালঃ ওয়েঙ্গারের শেষ সুযোগ?
শেষ ২১ বছরের ভেতর প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা করে নিতে পারেনি তার দল। এফএ কাপ জিতে সমর্থকদের আনন্দের উপলক্ষ্য এনে দিলেও আর্সেন ওয়েঙ্গারের গত মৌসুমের অভিজ্ঞতাটা তিক্তই ছিল। গতবার পাঁচ নম্বরে থেকে শেষ করায় ইউরোপা লিগ খেলতে হবে এবার আর্সেনালকে। নতুন মৌসুমে আর্সেনালের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ তাই শীর্ষ চারের জায়গা পুনরুদ্ধার করা। আর্সেন ওয়েঙ্গার আরও দুই মৌসুমের জন্য পেয়েছেন দায়িত্ব। কিন্তু এই মৌসুমে আবারও ব্যর্থ হলে চাকুরিটা বাঁচাতে পারবেন কি না, সেই প্রশ্ন তোলাই যায়।
এফএ কাপ জিতে মৌসুম শেষ করার পর চেলসিকে হারিয়ে কমিউনিটি শিল্ড জিতে নতুন মৌসুমটা ঠিক সেখান থেকেই শুরু করেছে আর্সেনাল। অতীত রেকর্ড আর বাকি দলগুলোর সাথে তুলনা করে তবুও ঠিক সেই অর্থে আর্সেনালকে শিরোপার দাবিদার হিসেবে ধরা যাচ্ছে না। তবে মাঝমাঠে ভারসাম্য ফিরে আসলে কাগজ-কলমের হিসেব সরিয়ে রেখে শিরোপার লড়াইয়েও ফেরত আসতে পারে গানাররা।
আক্রমণভাগই সেক্ষেত্রে আর্সেন ওয়েঙ্গারের সবচেয়ে বড় ভরসা। কিলিয়ান এমবাপ্পে, থমাস লেমারদের সাথে চুক্তি করতে আপাতত ব্যর্থ হলেও, ক্লাব রেকর্ড গড়ে দলে আনা স্ট্রাইকার অ্যালেক্সান্ডার লাকাজেত সেই আফসোসটা পুষিয়ে দিতে পারেন। আর তার সঙ্গী হিসেবে সানচেজ, ওজিলরা তো আছেনই। সানচেজকে নিয়ে দলবদলের মৌসুমে ক্লাব ছাড়ার গুঞ্জন শোনা গেলেও অবস্থাচিত্তে মনে হচ্ছে শেষ পর্যন্ত আরও এক মৌসুম নর্থ লন্ডনেই থাকছেন চিলিয়ান ফরোয়ার্ড।
গোল চেক দেবেন চেক!
আর্সেনালের গোলবার আরও একবার পিটার চেকের পাহারাতেই থাকবে। তবে বয়সের সাথে কিছুটা নিম্নগামী চেকের ফর্ম। কিছুক্ষেত্রে তাই দেখা মিলতে পারে ডেভিড অস্পিনারও।
স্থিতিশীল রক্ষণভাগ
এফএ ও কমিউনিটি শিল্ডে আর্সেন ওয়েঙ্গারের পছন্দ করা দল ইঙ্গিত দিচ্ছে নতুন মৌসুমে রক্ষণে তিনজনকেই খেলাবেন তিনি। সেক্ষেত্রে লরেন্ট কসিয়েনলির জায়গাটা সেন্টারব্যাক পজিশনে পাকা। বিকল্প হিসেবে ওয়েঙ্গার পাচ্ছেন মার্তেসাকারকে। কসিয়েনলির সাথে দুই পাশে মুস্তাফি ও মনরিয়েল মিলে আর্সেনালের রক্ষণকে ভরসাই যোগাচ্ছেন।
এবার নতুন দলে আসা বসনিয়ান লেফটব্যাক কোলাসিনাচও দলে যোগ করবেন বাড়তি শক্তিমত্তা। শারীরিক দিক দিয়ে অন্য যে কোনো ডিফেন্ডারের চেয়ে এগিয়ে থাকায় গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোতে আর্সেনালের রক্ষণের হাল ধরতে পারেন এই বসনিয়ান। লেফটব্যাক হলেও কোলাসিনাচ অবশ্য মিডফিল্ডেও খেলতে পারেন। থ্রি ম্যান ডিফেন্সের দুই উইংব্যাকে কোলাসিনাচের সাথে ডান পাশে বেয়ারিনের জায়গাটাও অনেকটাই নিশ্চিত। সবমিলিয়ে আর্সেনাল রক্ষণকে স্থিতিশীল বলা যায় চোখবুজেই।
সমস্যার নাম মাঝমাঠ
সান্টি কায়োরলার অনুপস্থিতি অনেকদিন ধরেই ভোগাচ্ছে আর্সেন ওয়েঙ্গারের দলকে। স্প্যানিশ মিডফিল্ডার কবে ইনজুরি থেকে ফিরবেন সেটা এখনও নিশ্চিত নয়। বল পায়ে রেখে মাঝমাঠের খেলা ধরে রাখার মতো মিডফিল্ডারের অভাবটাই বড় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে ওয়েঙ্গারের জন্য। আপাত দৃষ্টিতে দলের সবচেয়ে বড় সমস্যাও মনে হচ্ছে এটাই। দলবদলের মৌসুম শেষের আগে অবশ্য আর্সেন ওয়েঙ্গারের কাছে সুযোগটা থাকছে নতুন কাউকে দলে ভেড়ানোর।
গ্রানিত শাকার সাথে মিডফিল্ডের হাল ধরতে হবে তাই অ্যারন রামসেকে। শাকা কিছুটা রক্ষণাত্মক, অন্যদিকে রামসের খেলার ধরন আক্রমণাত্মক। কায়োরলার অনুপস্থিতিতে এই দুইজনকেই নতুন কোনো পদ্ধতিতে সমন্বয় করে আর্সেনালের মাঝমাঠের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে হবে। তা না হলে আগের গল্পটারই পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে!
চারজনের মাঝমাঠে দল সাজালে দুই উইংব্যাকে কোলাসিনাচ ও বেয়ারিনের বিকল্প হতে পারেন চেম্বারলাইন, ইওবিরা। ককুইলিন, এলনেনিরা থাকছেন ওয়েঙ্গারের পরিকল্পনায়। তবে প্রথম একাদশে জায়গা করে নিতে হলে এলনেনিদের উন্নতি করতে হবে আরও।
ভয়ঙ্কর আক্রমণ
অ্যালেক্সিস সানচেজ, মেসুত ওজিলদের সাথে ‘লোন স্ট্রাইকার’ হিসেবে লাকাজেত থাকবেন আক্রমণভাগে। থিও ওয়ালকটও আছেন বিকল্প হিসেবে। আর লাকাজাতের বদলী হিসেবে নেমে অলিভিয়ের জিরুও যে কোন সময় বদলে দিতে পারেন খেলার ভাগ্য।
লাকাজেত, জিরুদের ভরসা যোগাচ্ছেন ওজিল ও সানচেজ। লাকাজেত আসায় সানচেজের ওপরই চাপ কিছুটা কমার কথা। সেক্ষেত্রে সানচেজের স্বভাবসুলভ খেলার সুযোগটাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেউ ইনজুরিতে না পড়লে অন্তত গোলের দেখা পেতে খুব বেশি ঝামেলা পোহাতে হবে না আর্সেনালকে।
সম্ভাব্য একাদশঃ ৩-৪-২-১
চেক, মুস্তাফি, কসিয়েনলি, মনিরিয়েল, বেয়ারিন, শাকা, রামসে, কোলাসিনাচ, ওজিল, সানচেজ, লাকাজেত।