• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    ম্যানচেস্টার সিটিঃ প্রতিদান পাবেন গার্দিওলা?

    ম্যানচেস্টার সিটিঃ প্রতিদান পাবেন গার্দিওলা?    

    শুরুটা হয়েছিল স্বভাবসুলভভাবেই। স্পেন, জার্মানী জয় করে ইংল্যান্ডে এসেই জয় পেয়েছিলেন নিজের প্রথম দশ ম্যাচের প্রতিটিতেই। কিন্তু প্রিমিয়ার লিগ যে আর দশটা লিগের মত নয়! বিশ্বমঞ্চ মাতানোর সাথে যে ইংল্যান্ডে সাফল্যের সম্পৃক্ততা নেই, তা আবারো প্রমাণিত হল পেপ গার্দিওলার মাধ্যমে। একটা সময় শিরোপাস্বপ্নে বুঁদ সিটিকে শেষমেশ সন্তুষ্ট হতে হয় তৃতীয় স্থান নিয়ে। কোচ হিসেবে নিজের সবচেয়ে বাজে মৌসুম কাটানো গার্দিওলাও বুঝে যান, কেন প্রিমিয়ার লিগকে কঠিনতম লিগ বলে গণ্য করা হয়...

     

    অতীতের ব্যর্থতায় ডুবে থাকার লোক নন গার্দিওলা। নতুন মৌসুমে নিজেকে প্রমাণ করার জন্য রীতিমত আঁটঘাট বেঁধে নেমেছেন এই স্প্যানিয়ার্ড। ইতোমধ্যেই পছন্দমত দল বানাতে খরচ করেছেন তিনশ’ মিলিয়ন পাউন্ডেরও বেশি। টেকোমাথার এই ‘মাস্টার ট্যাকটিশিয়ান’-এর ওপর তাই পূর্ণ আস্থা রাখছেন সমর্থক ও সিটি বোর্ড। তিন বছর পর আবারো দেশসেরা ক্লাবের পাশাপাশি চ্যাম্পিয়নস লিগেও ভাল করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে মাঠে নামবেন গার্দিওলার শিষ্যরা।

    সবচেয়ে দামী এডারসন

    গোলরক্ষক নিয়ে সিটির সমস্যাটা দীর্ঘদিনের। হার্ট, কাবায়েরো, ব্রাভো- কেউই ঠিক থিতু হতে পারেননি তেমনটা। ফলশ্রুতিতে প্রায় প্রতি মৌসুমে সিটির গোলবারের নিচে দেখা যায় নতুন কাউকে। ব্যতিক্রম হবে না এবারও। গত মৌসুমে ব্রাভোর একের পর এক নড়বড়ে পারফরম্যান্সের কারণে বেনফিকা থেকে প্রায় ৩৫ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে এডারসনকে নিয়ে এসেছেন গার্দিওলা, যা একজন গোলরক্ষকের জন্য সর্বকালের সর্বোচ্চ ট্রান্সফার ফি। বিগত মৌসুমে বেনফিকার হয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের পর থেকেই  গার্দিওলার নজরে ছিলেন দীর্ঘদেহী এই ব্রাজিলীয়ান।

     

    এডারসনের কারণে নতুন মৌসুমের সিংহভাগ সময় বেঞ্চেই কাটাতে হবে ব্রাভোকে। ওদিকে ধারে ওয়েস্ট হ্যামে যোগ দিয়েছেন জো হার্ট, কাবায়েরো পাড়ি জমিয়েছেন চেলসিতে।

     

     

    খোলনলচে বদলানো রক্ষণ

    গোলরক্ষকের পাশাপাশি ডিফেন্ডারদের দুর্বলতাও বেশ ভুগিয়েছে সিটিকে। তাই এবার নিজের রক্ষণভাগকে একেবারে ঢেলে সাজিয়েছেন গার্দিওলা। সেন্টারব্যাকের চেয়ে ফুলব্যাকে বেশি মনোনিবেশ করেছেন তিনি। রিয়াল থেকে দানিলো, স্পার্স থেকে ওয়াকার এবং মোনাকো থেকে মেন্ডিকে আনতেই খরচ করেছেন প্রায় ১৩০ মিলিয়ন পাউন্ড। এর ফলে সর্বকালের সবচেয়ে দামী ডিফেন্ডারদের তালিকার প্রথম দুই স্থানে এসে পড়েছেন মেন্ডি এবং ওয়াকার।

     

    রক্ষণের মধ্যখানে কম্পানির পাশে স্টোনসকে দেখার সম্ভাবনা সবচেয়ে প্রবল। ধারাবাহিক পারফরম করলে জায়গা করে নিতে পারেন ওতামেন্ডি এবং মাঙ্গালাও। অবশ্য গার্দিওলার নতুন ৩-৫-২ ফরমেশনের কারণে দলে চমক আসতে পারে বেশ কিছু।  ইঞ্জুরির কারণে মেন্ডি মৌসুমের মাসখানেক মাঠের বাইরে থাকায় রক্ষণের বাঁ-প্রান্তে দানিলোকে দেখার সম্ভাবনা প্রবল। আগস্টের ৩১ তারিখে দলবদলের বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে একজন সেন্টারব্যাক কেনার ইচ্ছাও পোষণ করেছেন তিনি। 

     

    ‘অনিশ্চিত’ মধ্যমাঠ

    ফরমেশন বদলানো আর একাধিক নতুন খেলোয়াড়ের আগমনের কারণে সিটির মধ্যমাঠে কাকে রেখে কাকে খেলাবেন গার্দিওলা, তা নিয়ে ধোঁয়াশা আছে বেশ। ডি ব্রুইন বাদে আর কারো জায়গা নিশ্চিত নয় দলে। সিলভা, তোরে, ফার্নান্দিনহো, ডেলফ, গুন্ডোগানদের মধ্যে দলে সুযোগ পাওয়া নিয়ে ‘যুদ্ধ’টা তাই দারুণ জমবে এবার। মৌসুমজুড়ে প্রায় ষাটেক ম্যাচ থাকায় অবশ্য রোটেশনের কারণে সুযোগ পাবেন মোটামুটি সবাই-ই।

     

    উইং-এ কে:

    প্রাকমৌসুমে সানে, স্টার্লিংয়ের দুজনই ভাল খেলায় দল বাছাই নিয়ে মধুর সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে গার্দিওলাকে। ওদিকে মোনাকো থেকে বার্নার্দো সিলভাকে নিয়ে আসায় মধ্যমাঠের মত তুমুল প্রতিযোগীতা থাকবে উইং-এ সুযোগ পাওয়া নিয়েও।

     

    ওদিকে গত মাসেই ‘সিটি ছাড়া সময়ের ব্যাপার’ বলে জানিয়েছিলেন নাসরি। কিন্তু এখনো কোনো দলই তাকে দলে ভেড়াতে আগ্রহী না হওয়ায় শেষমেশ হয়তো সিটিতেই থেকে যেতে পারেন এই ফ্রেঞ্চ তারকা। সেক্ষেত্রে উইং-এর লড়াইয়ে শামিল হবেন তিনিও।

     

    আগুয়েরো না হেসুস? নাকি দুজনই?

    সিটির স্ট্রাইকার মানেই আগুয়েরো। অ্যাটলেটিকো ছেড়ে সিটিতে পাড়ি দেওয়ার পর থেকে এটাই যেন ধ্রুব সত্য। কিন্তু সিটির ‘টার্গেট ম্যান’ আগুয়েরোকে গত মৌসুমে প্রায় সরিয়েই দিয়েছিলেন ব্রাজিলীয়ান তরুণ গ্যাব্রিয়েল হেসুস। সিটির জার্সিতে উড়ন্ত সূচনার পর দুর্ভাগ্যজনকভাবে ইঞ্জুরিতে পড়েন এই স্ট্রাইকার। কিন্তু ইঞ্জুরি থেকে সেরে উঠতেই আগুয়েরোর বদলে হেসুসেই আস্থা রেখেছিলেন গার্দিওলা। ফলশ্রুতিতে আগুয়েরোর ক্লাব ছাড়ার গুঞ্জনও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল বেশ।

     

    কিন্তু আগুয়েরোর ক্লাব ছাড়ার কথাকে স্রেফ গুঞ্জন বলেই উড়িয়ে দিয়েছেন গার্দিওলা। গার্দিওলা নতুন ৩-৫-২ ফরমেশনটি অবশ্য আগুয়েরোর জন্য সুসংবাদই বটে। পুরো প্রাকমৌসুমে হেসুস-আগুয়েরো জুটিকে একত্রেই খেলিয়েছেন গার্দিওলা। নতুন মৌসুমেও এমনটা দেখার সম্ভাবনা প্রবলই বলা চলে।

     

    আক্রমণভাগের ধার আরো শাণিত করতে সানচেজ, এমবাপেদের সিটিতে যোগ দেওয়ার কথা শোনা গেলেও এখন পর্যন্ত তেমন লক্ষণ দেখা যায়নি।

     

    সম্ভাব্য ফরমেশন (৩-৫-২): এডারসন; কম্পানি, স্টোনস, ওতামেন্ডি; ওয়াকার, তোরে, সিলভা, দানিলো (মেন্ডি); ডি ব্রুইন; আগুয়েরো, হেসুস।

    ইংল্যান্ডে প্রথম মৌসুমটা মনোঃপূত না হওয়ার পেছনে পছন্দের দল না পাওয়াকেই মূল কারণ হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন গার্দিওলা। এবার অবশ্য সেই অবকাশ থাকছে না। মনের মত দল সাজানোর সব ব্যবস্থাই তাকে করে দিচ্ছে সিটি বোর্ড, এখন অপেক্ষা ফলাফলের; যার ওপর ভিত্তি করেই এতদূর এসেছেন এই স্প্যানিশ কিংবদন্তী।