ইউরোপিয়ান লিগের পঞ্চ-তন্ত্র | পর্ব : ৩
অসহায় আর্সেনাল
প্রথম ম্যাচে শেষদিকের গোলে লেস্টার সিটিকে হারিয়েছিল আর্সেনাল। পরের ম্যাচেই স্টোক সিটির কাছে হার। আর গতকাল লিভারপুলের বিপক্ষে ৪-০ ব্যবধানের হারে যেন ব্যর্থতার ষোলকলা পুর্ণ হয়েছে আর্সেনালের। পুরো ম্যাচে লিভারপুলের দাপটের কাছে পাত্তাই পায়নি আর্সেন ওয়েঙ্গারের দল। হারের ব্যবধানটা হতে পারত আরও বড়।
আর্সেনালের দৈন্যদশার জন্য দায়টা আর্সেন ওয়েঙ্গারের কাঁধেই বর্তায়। লিভারপুলের গতিশীল ফুটবলের কাছে হার মানাতে দোষের কিছু নেই। কিন্তু হারের ধরনটাই বেশি পোড়াচ্ছে আর্সেনাল সমর্থকদের। অ্যানফিল্ডে গানারদের নামার কথা ছিল যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে। অথচ ৯০ মিনিটে একটি শট অন টার্গেটও নিতে পারেনি আর্সেনালের কেউ!
আর্সেন ওয়েঙ্গারের কৌশলগত ভুলটা আরও বেশি চোখের লাগার মতো। হাই প্রেসিং গেম খেলা একটি দলের বিপক্ষে কোলাসিনাচকে সাইড বেঞ্চেই বসিয়ে রাখলেন তিনি! তিন গোলে পিছিয়ে পড়ে তুলে নিলেন দলের সেরা খেলোয়াড় অ্যালেক্সিস সানচেজকেও!
মাঝমাঠে আর্সেনালের সমস্যার কথাটা জানাই ছিল। কিন্তু কাল দেখা মিলল একাধিক রক্ষ্ণাত্মক ভুলেরও। আর এর সুযোগটাই পুরোপুরি কাজে লাগিয়েছে লিভারপুল।
এমন হারের পর দলবদলের বাজারে শেষ পর্যন্ত সানচেজ, মুস্তাফিরা আর্সেন ওয়েঙ্গারের দলে থাকবেন কি না তা নিয়েও জেগেছে সন্দেহ। সবমিলিয়ে আর্সেনালের অবস্থাটা হতাশাজনকই।
আসেনসিওকে বসিয়ে রাখবেন কীভাবে জিদান?
গতকাল ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে আসেনসিওই হারের হাত থেকে বাঁচিয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদকে। মৌসুমের শুরুটা স্বপ্নের মতোই হয়েছে ২১ বছর বয়সী তরুণের। যেন নতুন এক মিশনেই নেমেছেন তিনি। আত্মবিশ্বাসও তুঙ্গে। এমন সময় তাকে কীভাবে বেঞ্চে বসিয়ে রাখবেন রিয়াল কোচ? বিশেষ করে রোনালদো নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ফেরত আসলে মধুর সমস্যায়ই পড়তে হবে জিদানকে। সেক্ষেত্রে প্রথম একাদশে জায়গা হারাতে পারেন গ্যারেথ বেল। ওয়েলশম্যানের সাম্প্রতিক ফর্মও তেমনটাই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
সিটি-বোর্নমাউথের ম্যাচ ঘিরে বহু প্রশ্ন!
ম্যাচের পর বোর্নমাউথ গোলরক্ষক আসমির বেগোভিচ বলেছিলেন, ‘রেফারির সিদ্ধান্তগুলো বড় দলের পক্ষেই যায় সবসময়ই’। বসনিয়ানের হতাশাটা সহজেই বোধগম্য। ৯৭ মিনিটে গোল হজম করতে চান কোন গোলরক্ষক? তাও আবার এর দুই মিনিট আগে ইনজুরি টাইমেও শেষ হয়ে গিয়েছিল!
স্টার্লিংয়ের গোলের বিল্ডআপ যে ফ্রি কিকের সূত্র ধরে সেটা নিয়েও আপত্তি আছে বেগোভিচের। এছাড়াও অনেকগুলো সিদ্ধান্ত বিপক্ষে যাওয়ায় রিভিউয়ের আবেদন তুলেছেন তিনি। সিরি আতে ভিডিও রেফারির সংযোজন হলেও এখনও প্রিমিয়ার লিগে ব্রাত্যই রয়ে গেছে ফিফার নতুন এই আইন।
ওই ম্যাচে রেফারির আরও বেশ কিছু সিদ্ধান্তই নিয়ে বিতর্ক আছে। মাইক ডিন মোট হলুদ কার্ড দেখিয়েছেন ১০ টি। সমর্থকদের সাথে গোল উদযাপন করায় পরে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয়েছে স্টার্লিংকে। গোলের পর সমর্থকদের দিকে ছুটে গিয়ে তাদের সাথে উদযাপনটা প্রিমিয়ার লিগের নিয়ম অনুযায়ীই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু এই ঘটনার পর অ্যালান শিয়ারার প্রশ্ন তুলেছেন অন্যভাবে। স্টার্লিংয়ের সাথে সিটির আরও প্রায় ৮/৯ জন খেলোয়াড় যোগ দিয়েছিলেন সেই উদযাপনে। শিয়ারের প্রশ্ন, বাকিদের কেন কার্ড দেখান হবে না?
স্টার্লিংয়ের ওই উদযাপন নিয়ে জল গড়িয়েছে বহুদূর। সিটি সমর্থকরা মাঠের ভেতরে প্রবেশ করায় নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকা এক কর্মী অভিযোগ করেছেন আগুয়েরোর বিরুদ্ধে। আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার নাকি গায়ে হাত তুলেছেন তার উপর! কিন্তু পরে রিপ্লেতে দেখা গেল, সমর্থককে বাঁচাতে গিয়েছিলেন আগুয়েরো। ওই নিরাপত্তা কর্মীই উল্টো ধাক্কা মেরেছেন সিটি স্ট্রাইকারকে! এই নিয়ে পুলিশি প্রশ্নেরও জবাব দিতে হয়েছে আগুয়েরোকে!
ঠিক পথেই এগুচ্ছেন মরিনহো...
প্রিমিয়ার লিগের প্রথম ৬ ম্যাচ কাগজে কলমে সহজ ফিক্সারই ছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। লিগে শক্তিশালী শুরুর জন্য এই ছয় ম্যাচ থেকে ইউনাইটেডের পূর্ন পয়েন্ট তুলে নেয়াটাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলেই ভাবা হচ্ছে।
সেই পরীক্ষার মাঝপথে এসে হোসে মরিনহোকে সফলই বলতে হবে। টানা তিন জয়ে প্রিমিয়ার লিগের শুরুটা দারুন করেছে ইউনাইটেড। লেস্টার সিটির বিপক্ষেও আক্রমণ, মাঝমাঠ, রক্ষণ- তিন বিভাগেই নজর কেড়েছে মরিনহোর দল। আন্তর্জাতিক বিরতির পরও এই ফর্ম ধরে রাখতে পারলে ভালো কিছুই অপেক্ষা করছে রেড ডেভিল সমর্থকদের জন্য।
এবার হ্যাটট্রিক করে দলকে জেতালেন দিবালা
জেনোয়ার বিপক্ষে দুই গোলে পিছিয়ে পড়েছিল জুভেন্টাস। আগের ম্যাচে দিবালা করেছিলেন দুই গোল। এবার হ্যাটট্রিক করে জেতালেন নিজের দলকে। সিরি আর দুই ম্যাচেই দিবালার গোল হয়ে গেল ৫টি। আগেরবার পুরো মৌসুমে করেছিলেন ১১ গোল!
আরেক ম্যাচে লুসিয়ানো স্পেলেত্তির রোমায় ফিরেছিলেন ইন্টারের ম্যানেজার হয়ে। রোম থেকে সাবেক ক্লাবের বিপক্ষে জিতেও এসেছেন তিনি। ইন্টারের জয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকাটা অধিনায়ক মারুও ইকার্দির। আগের ম্যাচের মতো এবারও করেছেন দুই গোল। জুভেন্টাস আর ইন্টারের দুই ফরোয়ার্ড এবার ইতালি থেকে আর্জেন্টিনা পাড়ি জমাচ্ছেন, উরুগুয়ের বিপক্ষে ম্যাচের আগে। বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ক্লাবের ফর্মটাও কি সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছেন ইউরোপ থেকে?