পুরনো তামিমের ব্যাটেই নতুন ইতিহাস
সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ পাকিস্তান ২৩৯/৭, ৫০ ওভার (সাদ নাসিম ৭৭*, ওয়াহাব রিয়াজ ৫১*; সাকিব ২/৫১); বাংলাদেশ ২৪০/৩, ৩৮.১ ওভার (তামিম ১১৬*, মুশফিক ৬৫)
ফলঃ বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচঃ তামিম ইকবাল (বাংলাদেশ)
সমালোচনার জবাব তিনি আগেও দিয়েছেন মাঠের পারফরম্যান্স দিয়েই। তবে এবারের আয়োজন ছাড়িয়ে গেলো অতীতের সব মাত্রাই। তৃতীয় বাংলাদেশী হিসেবে একদিনের আন্তর্জাতিকে টানা দুই শতক হাঁকিয়ে দারুণভাবেই ফর্মে ফিরে এলেন । আর তাক লাগানো তামিম ইকবালে ভর করেই প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জিতে গেল বাংলাদেশ, এক ম্যাচ হাতে রেখেই। মিরপুরে সিরিজের দ্বিতীয় একদিনের আন্তর্জাতিকটি টাইগাররা জিতে নিল ৭ উইকেটে।
২৪০ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ঝড়ো সূচনাই করেন তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। অবশ্য জুনাইদ খানকে এক ওভারে ৩ চার মেরে সৌম্য (১৭) কট বিহাইন্ড হয়ে ফিরে যাওয়ার পর থিতু হতে ব্যর্থ হন মাহমুদুল্লাহও (১৭)। তবে অপরপ্রান্তে তামিম তান্ডব চলতে থাকে বিরতিহীন। রাহাত আলী, সাঈদ আজমল, ওয়াহাব রিয়াজদের তুলোধুনো করে মাত্র ৩১ বল মোকাবেলায় ১২ চারে তুলে নেন অর্ধশতক।
মাহমুদুল্লাহর পতনের পর তামিম-মুশফিক জুটি নতুন করে দাঁড়াতে খানিকটা সময় নেন। তবে সময়ের ফাঁক গলেই জুটিটা কখন শতক পেরিয়ে গেলো টের পাওয়া গেল না। ব্যক্তিগত ৬৫ রান নিয়ে মুশফিক ফিরে গেলেন জয় থেকে ২২ রান দূরে দাঁড়িয়ে। এর আগেই অবশ্য ১০৮ বল মোকাবেলায় ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ আর টানা দ্বিতীয় ওডিআই শতক তুলে নেন তামিম ইকবাল। সাকিব আল হাসানকে সঙ্গে নিয়ে যখন নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাটা পেরিয়ে গেলেন, বাংলাদেশের হাতে তখনও ১২ ওভার আর ৭টি উইকেট!
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা মন্দ হয় নি পাকিস্তানের। ইনিংসের প্রথম ডেলিভারিতেই মাশরাফির দেয়া ‘নো’ বলের সুবাদে ‘ফ্রি হিট’ পেয়ে চার হাঁকিয়ে সূচনা করেন অধিনায়ক আজহার আলী। ৬ ওভার শেষে বিনা উইকেটে ৩৬ রান পাকিস্তানের জন্য বড় সংগ্রহের ইঙ্গিতই দিচ্ছিল। তবে সেটা খুব বেশীক্ষণ স্থায়ে হয় নি। বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম আঘাতটি হানেন পেসার রুবেল হোসেন। ইনিংসের সপ্তম ওভারে ব্যক্তিগত প্রথম স্পেলের প্রথম বলেই আউটসাইড অফ ডেলিভারিতে সরফরাজকে স্লিপে দাঁড়ানো সৌম্যর তালুবন্দী করেন। পরের ওভারেই দুর্দান্ত এক ঘূর্ণি বলে হাফিজকে শুন্য রানে ফেরান আরাফাত সানি। পরপর দু’ উইকেট হারিয়ে সাবধানী ব্যাটিংয়ে বিপর্যয় কাটানোর চেষ্টা করেন আজহার-হারিস সোহেল জুটি। কিন্তু সেটাও বেশী সময় স্থায়ী হল না। এবার আক্রমণে সাকিব আল হাসান। আউটসাইড অফ ডেলিভারিটি আজহারের (৩৬) ব্যাটের কানা ছুঁয়ে মুশফিকের বিশ্বস্ত হাতে গ্লাভসবন্দী হয়। প্রথম দু’ উইকেটের পুনরাবৃত্তি করেই যেন পরের ওভারে শুন্য রানে বোল্ড হয়ে ফেরেন ফাওয়াদ আলম। এ যাত্রায় ঘাতকের নাম নাসির হোসেন।
চার ওভার বাদে মোহাম্মদ রিজওয়ানকে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেন সাকিব আল হাসান। ৭৭ রানে ৫ উইকেট খুইয়ে তখন সম্মানজনক পুঁজির জন্য লড়ছে পাকিস্তান। ৭৭ রানের অনেকটাই অপ্রত্যাশিত এক জুটিতে দলকে সেটার ভিত্তি গড়ে দিলেন হারিস সোহেল ও সাদ নাসিম। ব্যক্তিগত দেড়শতম একদিনের আন্তর্জাতিকের একমাত্র শিকার হিসেবে হারিসকে (৪৪) ফেরান মাশরাফি বিন মর্তুজা। দলীয় ১৫৪ রানে হারিসের পতনের পর আরও একটি অনবদ্য জুটি গড়ে তোলেন সাদ ও ওয়াহাব রিয়াজ। ৭ম উইকেটে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে এ জুটির সংগ্রহ ৬৬ বল থেকে ৮৫ রান। যার সুবাদে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে পাকিস্তানের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৬ উইকেটে ২৩৯ রান। ব্যক্তিগত দ্বিতীয় ওডিআই থেকে প্রথম অর্ধশতক তুলে সাদ অপরাজিত থাকেন ৭৭ রানে। সঙ্গী ওয়াহাব রিয়াজও তুলে নেন ব্যক্তিগত দ্বিতীয় অর্ধশতক (৫১)।