গার্দিওলাকে জেতালেন ডি ব্রুইন
স্ট্যামফোর্ড ব্রিজের খেলাটা ছিল ডাগআউটেরও। আন্তোনিও কন্তে তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতেই ছিলেন। ঠান্ডা জেঁকে বসা লন্ডনের সন্ধ্যায় পেপ গার্দিওলা ছিলেন সে তুলনায় খানিকটা শান্তই। মাঠের খেলায় তার দলই এগিয়ে, তবুও কপালে চিন্তার বলিরেখা স্পষ্ট। অনেক অপেক্ষার পর অবশেষে ৬৭ মিনিটে গার্দিওলার মলিন সেই মুখে হাসি ফোটালেন কেভিন ডি ব্রুইন। অন্য পাশে কন্তে তখন স্তব্ধ। সেখান থেকে আর ফিরে আসা হয়নি চেলসির। সাবেক চেলসির খেলোয়াড় ডি ব্রুইনই আলাদা করে দিয়েছেন দুই দলকে। আর চেলসিকে ১-০ গোলে হারিয়ে প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষেই থেকে গেল ম্যানচেস্টার সিটি।
এই মৌসুমে গোল পেতে খুব বেশি কষ্ট করতে হয়নি ম্যান সিটিকে। চেলসির বিপক্ষে এক গোলের জয়টা তবুও আলাদা। স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে তাদেরকে হারাতে সম্ভবত এখন পর্যন্ত নিজেদের সেরা খেলাটাই খেলেছে সিটিজেনরা। আর তাতে চেলসি একদমই বাধ সাধতে পারেনি। নীরব দর্শক হয়ে থেকেছে দল, ডাগ আউটে কন্তে খুঁজেছেন অজানা প্রশ্নের উত্তর। আসলে গার্দিওলার কৌশলের কাছেই হেরে গিয়েছে চেলসি।
ঘরের মাঠে শুরু থেকেই চাপে ছিল চেলসি। দুর্ঘটনায় আহত সার্জিও আগুয়েরো দলে না থাকলেও সিটির আক্রমণ সামলাতেই ব্যস্ত থাকতে হয়েছে কন্তের দলকে। ৪-৩-৩ ফর্মেশনে নামা গার্দিওলার দল, কিছুক্ষণ পরই কৌশল বদলে ৩-৩-১-৩ এ খেলা শুরু করে। তাতে কাজটা আরও কঠিন হয়ে যায় চেলসির জন্য। মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রণ প্রায় পুরোটা সময়ই ছিল অ্যাওয়ে দলের কাছেই। সিটিজেনদের হাই প্রেসিংয়ে হতবুদ্ধি হয়ে নিজের ভুলে প্রায় গোল খেতে বসেছিলেন থিবো কোর্তোয়া। তবে নিজেই বাঁচিয়েছেন দলকে। পরে প্রথমার্ধের শেষদিকে আরেকবার ফার্নান্দিনহোর হেড ঠেকিয়ে দিয়ে ম্যাচ গোলশূন্য রাখেন চেলসি গোলরক্ষক। রাহিম স্টার্লিং, ডেভিড সিলভারা সুযোগ কাজে লাগাতে না পারায় প্রথমার্ধে দুই তৃতীয়াংশ বলের দখল নিয়েও গোলশূন্য থেকেই বিরতিতে যায় সিটি।
প্রথমার্ধে অবশ্য চেলসির জন্য আরও বড় দুঃসংবাদ হয়ে আসে আলভারো মোরাতার ইঞ্জুরি। হ্যামস্ট্রিংয়ে টান পড়ায় ৩৫ মিনিটে মাঠ ছাড়তে হয় চেলসির সর্বোচ্চ গোলদাতাকে। তার জায়গায় মাঠে নামেন উইলিয়ান। ৭৩ মিনিটে এক গোলে পিছিয়ে থেকে মিচি বাতসুয়াই নামার আগ পর্যন্ত স্ট্রাইকার ছাড়াই খেলেছে চেলসি।
বিরতির পরও খেলা চলে একইভাবে। গোল করার সুযোগ আসছিল সিটির কাছেই। সেখান থেকে রক্ষণ সামলে আর আক্রমণে তেমন সুযোগ তৈরি করতে পারছিলেন না হ্যাজার্ড, ফ্যাব্রিগাসরা। দ্বিতীয়ার্ধে প্রথম সুযোগটা আসে সিলভার কাছে। কিন্তু ডিবক্সের ভেতর ফাঁকায় বল পেয়েও তার ডান পায়ের দুর্বল শট বাধা পায় চেলসির রক্ষণে।
এরপর অবশ্য খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি সিটিকে। ৬৭ মিনিটে গ্যাব্রিয়েল হেসুসের সাথে ওয়ান টু খেলে ডিবক্সের ঠিক বাইরে থেকে দূরপাল্লার শটে জালে বল জড়ান ডি ব্রুইন। এরপর পুরো দলের উদযাপনই বলে দিচ্ছিল ডি ব্রুইনের গোলের মাহাত্ম্য। ডিবক্সের বাইরে থেকে গোল করাই যেন অভ্যাস বানিয়ে ফেলেছেন এই বেলজিয়ান। গার্দিওলার অধীনে মিডফিল্ডারে পরিণত হওয়া ডি ব্রুইন তার শেষ ১১ গোলের ৯ টিই করেছেন বক্সের বাইরে থেকে।
এক গোলে পিছিয়ে থেকে পেদ্রো রদ্রিগেজ আর বাতসুয়াইকে নামিয়ে ম্যাচ বাঁচানোর চেষ্টা করেন কন্তে। কিন্তু তাদের কেউই সুবিধা করতে পারেননি। উলটো শেষদিকে গোল করে আরও বড় ব্যবধানের জয় নিয়েই ফিরতে পারত ম্যান সিটি। কিন্তু হেসুসের শট গোলরক্ষককে বোকা বানালেও ফিরে আসে আন্টোনিও রুডিগারের গায়ে লেগে।
পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থাকতে সিটির প্রয়োজন ছিল জয়। নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড আজ ৪ গোল দিলেও তাই সমান পয়েন্ট নিয়েও শীর্ষেই আছে ম্যান সিটি। আর চারে থাকা চেলসি এখন পর্যন্ত ঘরের মাঠে ৪ ম্যাচের দুটিতেই হেরে বসল। অথচ গতবার পুরো মৌসুম জুড়েও স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে কন্তের দল হেরেছিল সমান সংখ্যক ম্যাচ।