২৭ বছর পর বিশ্বকাপে মিশর
নির্ধারিত সময়ের খেলা শেষ। অতিরিক্ত সময়েও ৪ মিনিট পেরিয়ে গেছে। আলেকজান্দ্রিয়া স্টেডিয়ামের হাজারো দর্শক অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে 'কিছু একটা’ ঘটার জন্য। সৃষ্টিকর্তা শেষ পর্যন্ত তাদের প্রার্থনা শুনলেন, ঠিক অন্তিম মুহূর্তে পেনাল্টি পেল মিশর, সমর্থকদের গর্জনে তখন অন্য কিছু শোনা ভার। মোহামেদ সালাহ যখন পেনাল্টি নেওয়ার জন্য প্রস্তুত হলেন, থেমে গেলো গর্জন, ‘দম বন্ধ’ করে সবার দৃষ্টি তখন তার দিকেই। কঙ্গো কিপারকে বোকা বানিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় পেনাল্টি নিলেন, বল জালে জড়ানোর সাথে সাথে উল্লাসে ফেটে পড়ল পুরো স্টেডিয়াম। সালাহর জোড়া গোলেই কঙ্গোকে ২-১ গোলে হারিয়ে ২৭ বছর পর আবারো বিশ্বকাপের টিকেট পেলো মিশর।
গত শনিবার উগান্ডা ও ঘানা ড্র করায় এই ম্যাচে জয় পেলেই নিশ্চিত হতো বিশ্বকাপে খেলা। ঘরের মাঠে শুরু থেকেই গোলের জন্য মরিয়া ছিল মিশর। প্রথমার্ধে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগও এসেছে বেশ কয়েবার। কিন্তু ফরোয়ার্ডদের ভুলের কারণে গোল পাওয়া হয়নি হেক্টর কুপারের দলের।
দ্বিতীয়ার্ধের ৬০ মিনিটের মাথায় মিশরিয়ানদের আনন্দে ভাসান সালাহ। মোহামেদ এল নেনির পাসে বল জালে জড়ালে বিশ্বকাপের স্বপ্নটা উজ্জ্বল হতে থাকে। এগিয়ে যাওয়ার পর শুধু শেষ বাঁশির অপেক্ষা। সময়টা যেন কিছুতেই কাটছিল না মিশর ভক্তদের। ম্যাচের তখন মাত্র ২ মিনিট বাকি, নেচে গেয়ে অনেকেই উদযাপন শুরুও করে দিয়েছেন। তখনই আর্নল্ড বউকা মউতুয়ের গোলে সমতা আনে কঙ্গো, স্টেডিয়ামে তখন পিন পতন নিরবতা।
Impossible not to get chills listening to the commentary of Mohamed Salah's game-winning penalty that sent Egypt to the 2018 World Cup. pic.twitter.com/YFquwbgCpB
— Adam Serrano (@LAGalaxyInsider) October 8, 2017
ম্যাচের ভাগ্যে তখন ড্রই লেখা আছে মনে হচ্ছিল। অতিরিক্ত সময়ের শেষ মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করে সব শঙ্কা দূর করেন সেই সালাহ। গোলের পর আবেগ আপ্লুত হয়ে এই লিভারপুল ফরোয়ার্ড লুটিয়ে পড়েন সেজদায়। তার পাশে থাকা সংবাদকর্মীরাও করেছেন একই কাজ। নাইজেরিয়ার পর দ্বিতীয় আফ্রিকান দল হিসাবে বিশ্বকাপে উঠলো তারা।
১৯৯০ সালে শেষবার বিশ্বকাপে খেলেছিল মিশর। এরপর চারবার আফ্রিকান নেশনস কাপ জিতলেও যাওয়া হয়নি বিশ্বকাপে। ২০০৯ সালে প্লে-অফে আলজেরিয়ার কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল। মিশরের বিশ্বকাপে পৌঁছানোর ঘটনায় আগামী বছর একটি রেকর্ডের হাতছানিও আছে দলের গোলকিপার এল হাদারির সামনে। বিশ্বকাপে মাঠে নামলেই হয়ে যাবেন সবচেয়ে বেশি বয়সে বিশ্বকাপ খেলা ফুটবলার। ২০১৪ সালে বিশ্বকাপ খেলা ৪৩ বছর বয়সে কলম্বিয়ান গোলকিপার ফার্দ মন্ড্রাগনই এখন পর্যন্ত এই রেকর্ডের অধিকারী। আগামী বছর হাদারির বয়স হবে ৪৫ বছর।
ইউরোপের বাছাইপর্বে আগেই বিশ্বকাপ নিশ্চিত করে ফেলা ইংল্যান্ড ১-০ গোলে জয় পেয়েছে লিথুয়ানিয়ার বিপক্ষে। আজারবাইজানকে ৫-১ গোলে হারিয়েছে জার্মানি। মন্টেনিগ্রোকে ৫-১ গোলে হারিয়ে ২০০৬ সালের পর আবারো বিশ্বকাপে পৌঁছে গেছে পোল্যান্ড। রোমানিয়ার সাথে ১-১ গোলে ড্র করে প্লে-অফ নিশ্চিত করেছে ডেনমার্ক। স্কটল্যান্ডের সাথে শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে ২-২ এ ড্র করায় বিশ্বকাপের স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে স্লোভেনিয়ার। তাদের ড্রয়ের কারণে নিজেদের ম্যাচে নরওয়ের কাছে ১-০ গোলে হেরেও প্লে-অফ খেলবে নর্দান আয়ারল্যান্ড।