কিক অফের আগেঃ আর্জেন্টিনাকে তীরে ভেড়াতে পারবেন মেসি?
খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে তাঁরা। পা হড়কালেই বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাবে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। পর্বতসমান চাপ মাথায় নিয়েই আগামীকাল ইকুয়েডরের মাঠে খেলতে নামবে লিওনেল মেসির দল। গত কয়েক ম্যাচে দলকে জয় এনে দিতে পারেননি, পাননি সতীর্থদের সাহায্যও। পেরুর বিপক্ষে শেষ বাঁশি বাজার পর মলিন মুখেই মাঠ ছাড়তে হয়েছে মেসিকে। ফুটবল বিশ্বের চোখ তবুও একজনের দিকেই থাকবে। মেসি কি পারবেন আর্জেন্টিনার ডুবন্ত তরীকে পাড়ে ভেড়াতে?
সরাসরি বিশ্বকাপে যেতে হলে জয়ের বিকল্প নেই। ড্র করলে প্লে-অফে খেলার জন্য মিলতে হবে অনেক সমীকরণ। ইকুয়েডরের বিপক্ষে ইতিহাস কিংবা সাম্প্রতিক ফর্ম, কোনোটাই নেই আর্জেন্টিনার পক্ষে। কিটোর মাঠে ২০০১ সালের পর থেকে জয়ের মুখ দেখেনি তাঁরা। এই মাঠে শেষ তিন বাছাইপর্বের ম্যাচে দুটিতেই হেরেছে আর্জেন্টিনা, আরেকটি ম্যাচ হয়েছে ড্র। শেষবার ২০১৫ সালের অক্টোবরে বাছাইপর্বের ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল। সেবার ঘরের মাঠে ইকুয়েডরের কাছে ২-০ হেরেছিল মেসিরা। ইকুয়েডরের বিপক্ষে সব টুর্নামেন্টও খুব একটা সুবিধা করতে পারছে না আর্জেন্টিনা। শেষ ১০ ম্যাচের তিনটিতে জিতেছে দুই দল, ড্র হয়েছে চারটি ম্যাচ।
আর্জেন্টিনার দুশ্চিন্তার আরেকটি কারণ হচ্ছে ইকুয়েডরের অলিম্পিকো স্টেডিয়ামের ভৌগলিক অবস্থান। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২৭৮২ মিটার উঁচু জায়গায় খেলাটা যে একেবারেই সহজ হবে না সেটা আর্জেন্টাইনরা খুব ভালোমতোই জানেন। ২০১০ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের সময় বলিভিয়ায় সেই ৬-১ গোলের পরাজয়ের স্মৃতিটাও হয়ত মাথায় ঘুরপাক খেতে পারে। কয়েকদিন আগেই বলিভিয়ার মাঠে খেলতে গিয়ে কৃত্রিম অক্সিজেন নিতে হয়েছিল নেইমারদের।
মেসি, আগুয়েরো, পাওলো দিবালা, ডি মারিয়াদের নিয়ে গড়া আক্রমণভাগ এবারের বাছাইপর্বে একরকম ‘ফ্লপ’ বলা যায়। ১৭ ম্যাচে আর্জেন্টিনা প্রতিপক্ষের জালে বল জড়িয়েছে মাত্র ১৬ বার! শেষ তিন ম্যাচই হয়েছে ড্র, আর্জেন্টিনা গোল করতে পেরেছে মাত্র একটিতে, সেটাও আবার আত্মঘাতী। প্রতি ম্যাচেই সহজ সুযোগ হাতছাড়া করে শুধু হতাশাই বাড়িয়েছেন ফরোয়ার্ডরা। ভাগ্যটাও সহায় হয়নি, গোলপোস্টে লেগে মিস হয়েছে কয়েকটি নিশ্চিত গোল।
এতশত দুশ্চিন্তার মাঝেও ‘আশার আলো’ খুঁজছেন কোচ হোর্হে সাম্পাওলি। দলকে নিজেদের আত্মবিশ্বাস ধরে রাখার পরামর্শ দিলেন সাম্পাওলি, “এটা সত্যি যে পরিস্থিতি একটু অস্বস্তিকর। তবে নিজেদের ভাগ্য এখনো আমাদের হাতেই আছে। আমার বিশ্বাস দল শেষ ম্যাচ জিতেই বিশ্বকাপে যাবে। সবাইকে নিজেদের ওপর ভরসা রাখতে হবে। এটা খুব বেশি জরুরি। দলের সবাই কিছুটা রেগে আছে। কিন্তু তাঁরা জানে ইকুয়েডরের সাথে জয় সবকিছুই আগের মতো করে দিতে পারে। এই একটা ব্যাপারে বিশ্বাস করেই এগিয়ে যেতে হবে।”
১৯৬২ বিশ্বকাপে রানার্সআপ হয়েও ১৯৬৬ বিশ্বকাপে খেলতে পারেনি তখনকার চেকোস্লোভাকিয়া। ইকুয়েডরের বিপক্ষে পা হড়কালে দ্বিতীয় দল হিসেবে আগের বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট হয়েও পরের বিশ্বকাপে থাকবে না আর্জেন্টিনা। সেরকম কিছু যদি হয়, তাহলে মেসিকে ছাড়াই রাশিয়াতে আয়োজিত হবে ফুটবলের সবচেয়ে বড় আসর।
ক্লাব ফুটবলে বহুবার বার্সার ‘ত্রাতা’ হয়ে আবির্ভূত হয়েছেন। মেসি কি পারবেন কাল জ্বলে উঠতে? ‘জাদুকরী’ কিছু করে আর্জেন্টিনাকে নিয়ে যেতে পারবেন বিশ্বকাপে? নাকি পরাজয় বরণ করে নিয়ে মেসির সাথে হৃদয় ভাঙবে কোটি আর্জেন্টিনা ভক্তের? উত্তর পেতে অপেক্ষা করতে হবে আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা।