আর্জেন্টিনাকে রাশিয়ায় নিয়ে গেলেন মেসি
বিপক্ষে ছিল ইতিহাস। ১৬ বছর ইকুয়েডরের মাঠ থেকে ফেরা হয়নি জয় নিয়ে। বিপক্ষে ছিল ফর্ম, বাছাইপর্বে এই ম্যাচের আগে মাত্র ১৬ গোল করতে পেরেছে আর্জেন্টিনা, পেরুর সঙ্গে নিজেদের মাঠেই পায়নি গোল। সবচেয়ে বড় কথা, বিপক্ষে ছিল আন্দিজসম হয়ে ওঠা চাপ, না জিতলেই বিশ্বকাপে হয়ে থাকতে হতো দর্শক। তবে এসব প্রতিকূলতার উত্তাল নদীতে বৈঠা বাইতে পারতেন শুধু একজন। যখন চাওয়াটা সবচেয়ে বেশি, তখনই নিজের টুপি থেকে বের করে আনলেন সবচেয়ে বড় জাদু। বাছাইপর্বে নিজের ক্যারিয়ারের প্রথম হ্যাটট্রিক করেছেন। তার চেয়েও বড় কথা, ইকুয়েডরকে ৩-১ গোলে হারিয়ে আর্জেন্টিনা পেয়ে গেছে বিশ্বকাপের টিকিট। দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বকাপ প্লে অফের রোমাঞ্চকর শেষ দিনে আর্জেন্টিনার সঙ্গী হয়েছে কলম্বিয়া, উরুগুয়েও। ব্রাজিল নিশ্চিত করে রেখেছিল আগেই, আর পেরু খেলছে প্লে অফ। আর কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়ন চিলি রাশিয়া বিশ্বকাপে থাকছে দর্শক হয়েই।
নয় হাজার ফুটেরও বেশি উচ্চতায় কিটোর স্টেডিয়াম। মাঠটা যতটা উচ্চতায়, আর্জেন্টিনার ওপর চাপ ছিল যেন ততটাই বেশি। ম্যাচ শুরু হতে না হতেই কিছু বুঝে ওঠার আগেই পিছিয়ে পড়ল আর্জেন্টিনা। রক্ষণের ভুলের সুযোগ নিয়ে ডিফেন্সে ওয়ান টু খেলে রোমানিও ইবারা যখন জালে জড়িয়ে দেন, ম্যাচের আয়ু তখন মাত্র ৩৯ সেকেন্ড!
সেই ঘোর কাটিয়ে ম্যাচে ফিরতে আর্জেন্টিনার সময় লাগল ১১ মিনিট। আরেকটু নির্দিষ্ট করে বললে, ঘোর কাটালেন মেসি। বাঁ দিকে মেসির কাছ থেকেই বল পেয়েছিলেন ডি মারিয়া, একটু এগিয়েই বলটা বাড়ালেন বক্সে। টেলিপ্যাথিক যোগাযোগেই কি না, মেসি বক্সে ঢুকে সেটি পেয়ে গেলেন ফাঁকায়। গোলরক্ষককে একা পেয়ে সেখান থেকে সুযোগটা কাজে লাগাতে ভুল করলেন না। সঙ্গে সঙ্গে বল জাল থেকে কুড়িয়ে নিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, কাজ অনেক বাকি।
সেই বাকি কাজের পরের অংশটা সারতে সময় লেগেছে মাত্র পাঁচ মিনিট। এবারও ইকুয়েডর রক্ষণের ভুলে বল পেয়ে গিয়েছিলেন বক্সের কিনারায়। বাঁ পায়ের যে গোলার মতো শটে গোল দিয়েছেন, বার্সেলোনায় তা নতুন কিছু নয়। তবে আর্জেন্টিনার হয়ে ওই মুহূর্তে তা খুব খুব করেই দরকার ছিল।
তবে ইকুয়েডর দুই গোল খেয়ে যেন আরও বেশি আগ্রসী হয়ে ওঠে। এমনিতেই তাদের হারানোর কিছু ছিল না, বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়েছিল আগেই। গতি আর ক্ষিপ্রতায় জেরবার করে তুলতে থাকে আর্জেন্টিনার রক্ষণ। তবে ৩৩ মিনিটেই আবার এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। মেসির ডিফেন্স চেরা থ্রু ধরেও কাজে লাগাতে পারেননি ডি মারিয়া, দারুণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে দিয়েছেন ইকুয়েডর গোলরক্ষক।
প্রথমার্ধে অবশ্য ইকুয়েডর আর সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি। এর মধ্যেই একজন বাড়তি স্ট্রাইকার নামায়, দ্বিতীয়ার্ধে খেলতে থাকে আরও তেড়েফুঁড়ে। মেসিসহ আর্জেন্টিনার সবাই নেমে আসে রক্ষণে। মনে হচ্ছিল, গোল শোধ করে দিতে পারে যে কোনো সময়েই। ৬২ মিনিটেই নিজের থলি থেকে সেরা জাদুটা বের করেন মেসি। এবারও হুট করে বল পেয়ে গিয়েছিলেন বক্সের বাইরে। বক্সে যখন ঢুকলেন, ইকুয়েডর ডিফেন্ডার প্রায় তাঁকে টেনে ধরেছেন। ভারসাম্য হারাতে হারাতেই ওই অবস্থায় করলেন দারুণ এক চিপ, বল জড়াল জালে। বাছাইপর্বে নিজের প্রথম হ্যাটট্রিক হলো, দক্ষিণ আমেরিকান বাছাইয়ে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ডটাও সুয়ারেজের সঙ্গে করে নিয়েছেন নিজের।
ইকুয়েডর এরপর চেষ্টা করেও করতে পারেনি খুব বেশি কিছু। বরং শেষ দিকে ইকার্দি সহজ সুযোগ নষ্ট না করলে আরও বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারত আর্জেন্টিনা। ততক্ষণে অবশ্য রাশিয়ার সুবাস পেতে শুরু করেছে আকাশী নীলরা। ম্যাচ শেষ হতেই শুরু হলো উদযাপন, এস্তাদিও অলিম্পিকোতে গার্ড অব অনারও দিলেন সবাই। যেটির মধ্যমণি হয়ে থাকলেন লিওনেল মেসি, আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপের স্বপ্নসারথী।